কৈখালী যুদ্ধ (শ্যামনগর, সাতক্ষীরা)
কৈখালী যুদ্ধ (শ্যামনগর, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ২২শে নভেম্বর। সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে সংঘটিত এ-যুদ্ধে ভারতীয় বিএসএফ মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে এবং যৌথবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে পাকবাহিনী পালিয়ে যায়। ৯নং সেক্টরের অধীন কৈখালীর বিওপিতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। ক্যাম্পটি কালিন্দী নদীর পূর্বপারে অবস্থিত। নদীর অপর পারে ভারতীয় সীমান্ত। নদীর বাঁকে অবস্থিত বলে এ স্থানটি স্থানীয়দের কাছে ‘কৈখালীর হুলো’ (হুল বা বাঁক-এ অবস্থিত বলে) নামে পরিচিত। ইতঃপূর্বে পাকবাহিনী গানবোটে করে এসে বেশ কয়েকবার মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণ করে। তবে সেগুলো ছিল বিক্ষিপ্ত ঘটনা।
২১শে নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন যে, পাকবাহিনী গানবোট নিয়ে আক্রমণ করতে আসছে। তখন এ ক্যাম্পে ছিল ভারতের বিহারস্থ চাকুলিয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি চৌকস দল। পাকবাহিনীর আগমনের খবর পাওয়ার পর লেফটেন্যান্ট সেলিমের নির্দেশে কমান্ডার এস এম মিজানুর রহমান দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে কালিন্দীর ওপারে ভারতীয় বিওপিতে যান এবং এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিএসএফ তাঁদের সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দেন।
যথাসময়ে পাকবাহিনীর গানবোট কৈখালী এলাকায় প্রবেশ করামাত্রই মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের পতাকা নাড়িয়ে বিএসএফ-কে সংকেত দিয়ে গানবোটে তীব্র আক্রমণ চালায়। ভারতীয় বিএসএফ-ও এতে যোগ দেয়। অনেকক্ষণ উভয় পক্ষে যুদ্ধ হয়। অবশেষে যৌথবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে না পেরে পাকসেনারা পালিয়ে যায়, আর কখনো এদেেিক আসেনি। এ-যুদ্ধে কমান্ডার মিজানুর রহমান, আমজাদ হোসেন ও আতিয়ার রহমান ঢালী আহত হন। আতিয়ার রহমানের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের বারাকপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। [মিজানুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড