You dont have javascript enabled! Please enable it!

কৃষ্ণপুর-ধনঞ্জয় গণহত্যা (কুমিল্লা আদর্শ সদর)

কৃষ্ণপুর-ধনঞ্জয় গণহত্যা (কুমিল্লা আদর্শ সদর) ১১ই সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় শতাধিক মানুষ শহীদ হন।
১০ই সেপ্টেম্বর কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন কৃষ্ণপুর ও ধনঞ্জয় গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দিনব্যাপী যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে পাকিস্তানি বাহিনী পরদিন পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো আক্রমণ করে। ১১ই সেপ্টেম্বর আমড়াতলি ইউনিয়নের সর্বত্র প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। গুলির শব্দে এলাকাবাসীর অনেকে কৃষ্ণপুর-ধনঞ্জয়-শিবের বাজার হয়ে পার্শ্ববর্তী বড়জ্বালা সীমান্ত হয়ে ভারতে চলে যায়। মাঝিগাছা গ্রামের নারী-পুরুষও এ পথে ভারতে চলে যাচ্ছিল। এছাড়া শতশত লোক জীবন বাঁচাতে এলাপাতাড়ি দৌড়াচ্ছিল। একদল লোক খন্দকার বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাড়ির উঠানে জড়ো হয়। এ-সময় খন্দকার সামছুল হুদা তাদের দক্ষিণ ভিটার একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন। পাকিস্তানি বাহিনী প্রথমে তাঁকে এবং পরে আশ্রয়গ্রহণকারী লোকজনকে গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু ছিল। তাদের মধ্যে নোয়াখালী অঞ্চলের বেশ কয়েকজন ক্ষেতমজুর ছিল। এ বাড়িতে ২০ জনের অধিক মানুষ গণহত্যার শিকার হন। এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধনঞ্জয় গ্রামের খন্দকার বাড়ি ঘিরে ফেলে। তারা খন্দকার বাড়িতে ৮ জন মানুষকে হত্যা করে। মনতাজ আলী নামে একজন কাঠের আলমারিতে ঢুকে পড়লে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে আলমারির ভেতরেই তিনি শহীদ হন। হানাদারদের ব্রাশফায়ারে শহীদ একজন মহিলার স্তনে মুখ দেয়া অবস্থায় এক শিশু পড়ে থাকে। সেও গুলিতে শহীদ হয়। এরপর বাড়ির বিভিন্ন স্থানে আরো ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। পরদিন নিকটবর্তী মধ্যম মাঝিগাছা ও ইটাল্লার ৬ জন নিরপরাধ গ্রামবাসীকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী।
এদিন পাকিস্তানি হানাদাররা গ্রামের ১৪-১৫টি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। গণহত্যার খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ১৫- ১৬ জন এবং খন্দকার বাড়ির ডা. আবদুল খালেকসহ ৬-৭ জন সন্ধ্যায় খন্দকার বাড়িতে আসেন। তাঁরা বাড়ির সামনে একটি গর্তের এক পাশে পুরুষদের, আরেক পাশে নারী ও শিশুদের কবর দেন।
কৃষ্ণপুর-ধনঞ্জয় গণহত্যায় শতাধিক মানুষ শহীদ হন। তাদের মধ্যে ৩৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন— শরাফত আলী ও তার মেয়ে হাফেজা খাতুন, হামিদন বিবি, খন্দকার শামসুল হুদা, কেরামত আলী, আবুল হাসেম, চক্কু মিয়া, মোহাম্মদ আলী, আব্দুল লতিফ, সহিদন বিবি, জামাল মিঞা, বকুল আক্তার, শিল্পী আক্তার, তাহের মিঞা, হাফেজা খাতুন, সৈয়দ আলী, আবদুর রাজ্জাক, করচন বিবি, রাবেয়া খাতুন, কাদের মিয়া, মুকশু মিয়া, ফজল মিঞা, সমশের আলী, হাজেরা বেগম, ছোবহান মিয়া, আবদুল হামিদ, মঞ্জুর আলী, সালেহা খাতুন, জসিমউদ্দিন, সাজেদা খাতুন, জোহরা খাতুন, রহিম আলী ও মো. সেলিম। শহীদদের স্মরণে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে। [শফিউদ্দিন তালুকদার ও মামুন সিদ্দিকী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!