মামলার পূর্বাপর
২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের ২৮ মে পর্যন্ত জাহিদ হােসেন খােকনের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করে প্রসিকিউশনের তদন্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন রায়। এরপর ২৯ মে তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ১৮ জুলাই অভিযােগ আমলে নিয়ে বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরােয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হলে আদালতের নির্দেশে খােকনকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে দুপি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপরও সে হাজির না হওয়ায় তার অনুপস্থিতিতেই আদালত মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলে। পলাতক খােকনের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আব্দুস শুকুর খানকে আইনজীবী নিয়ােগ দেন বিচারক। ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর অভিযােগ গঠনের মধ্য দিয়ে খােকন রাজাকারের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সত্যরঞ্জন দাসসহ ২৪ জন সাক্ষ্য দেন। আসামি পলাতক থাকায় তার পক্ষে কোনাে সাফাই সাক্ষ্যের সুযােগ ছিল না। ২০১৩ বছরের ২১ নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা। সত্যরঞ্জন দাশসহ খােকন রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৪ জন সাক্ষী।
অন্য সাক্ষীরা হচ্ছেন আবুল কাসেম, কানাই লাল মণ্ডল, ইকরাম মােল্লা, মুক্তিযােদ্ধা মাে, আব্দুল হাই মােল্লা, মাে. ইউনুস মােল্লা, মাে. ইদ্রিস সরদার, আব্দুল আজিজ মাতুব্বর, মাে, হাফিজুর রহমান চানু, আলাউদ্দিন শেখ, রবীন্দ্রনাথ দত্ত, জগন্নাথ দত্ত, হান্নান মুন্সি, রমেশ চন্দ্র রায়, মাে. আবুল কাসেম মাতুব্বর, মাে. আব্দুস সালাম মাতুব্বর, কলম শেখ, মাে. ইয়াকুব আলী, মাে. চুন্ন শেখ, ভূক্তভােগী একজন নারী সাক্ষী (ক্যামেরা ট্রায়াল), আব্দুল গফুর মােল্লা, মঞ্জুয়ারা বেগম, মাে. বতু মিয়া এবং জীবন কৃষ্ণ দাশ। ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর মানবতাবিরােধী অপরাধে খােকন রাজাকারের বিরুদ্ধে। অভিযােগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এতে থােকন রাজাকারের বিরুদ্ধে ১৬ জন নারী ও শিশুসহ ৫০ জনকে হত্যা, তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ, ৯ জনকে ধর্মান্তরিত করা, ২টি মন্দিরসহ ১০টি গ্রামের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযােগ, সাতজন গ্রামবাসীকে সপরিবারে দেশান্তরে বাধ্য করা ও ২৫ জনকে নির্যাতনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযােগ আনা হয়েছে। ৫ ও ১৭ সেপ্টেম্বর অভিযােগ গঠনের পক্ষে শুনানি রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকউটর মােখলেছুর রহমান বাদল। অন্যদিকে ১৭ সেপ্টেম্বর অভিযােগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন খােকন রাজাকারের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান। ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই থােকন রাজাকারকে হাজির হতে দু’টি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক খােকনের বিরুদ্ধে। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ ও ডেইলি স্টারে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
কিন্তু সে হাজির না হওয়ায় ১৪ আগস্ট খােকন রাজাকারের অনুপস্থিতিতেই তার বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে খােকন রাজাকারের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী হিসেবে নিয়ােগ পান আব্দুস শুকুর খান। ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই প্রসিকউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযােগ আমলে নিয়ে বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরােয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৩ জুন প্রসিকউটর মােখলেসুর রহমান বাদল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর এ আনুষ্ঠানিক অভিযােগ দাখিল করে খােকন রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরােয়ানা জারির আবেদন করেছিলাে। ২৯ মে খােকন রাজাকারের বিরুদ্ধে ১৩টি অপরাধে জড়িত থাকার অভিযােগে তদন্ত শেষ করে তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকউটর বরাবর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত কর্মকর্তা সত্য রঞ্জন রায় এ মামলার তদন্ত করেন। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ২৮ মে শেষ হয় তদন্ত। তদন্তকালে এ মামলায় ৭৮ জনের বেশি লােকের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।