You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুক্তিযুদ্ধে কুমারখালী উপজেলা (কুষ্টিয়া)

কুমারখালী উপজেলা (কুষ্টিয়া) কুষ্টিয়া জেলার মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুষ্টিয়া ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা। কুষ্টিয়া জেলার মুজিবনগরে সরকার গঠিত এবং সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার কারণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ জেলাকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা ছিল মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবময় অঞ্চল। ৭০-এর নির্বাচনে কুমারখালী থেকে আওয়ামী লীগ- মনোনীত ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এমএনএ এবং মো. গোলাম কিবরিয়া এমপিএ নির্বাচিত হন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানি সামরিক সরকার আওয়ামী লীগের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো কুমারখালীর মানুষজনও ক্ষুব্ধ হয়। তারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে যুদ্ধের যে প্রস্তুতি শুরু হয়, কুষ্টিয়া জেলা ও কুমারখালী উপজেলা তার ব্যতিক্রম ছিল না। এখানকার সাধারণ মানুষ হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে। কুমারখালী থানা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. গোলাম কিবরিয়া এমপিএ, সাধারণ সম্পাদক আ. আজিজ খান, এডভোকেট এম এ বারী, আবদুল মজিদ, ন্যাপ নেতা বারিক জোয়ার্দার প্রমুখের নেতৃত্বে আপামর জনসাধারণ সংগঠিত হতে থাকে। এ-সময় আ স ম ওয়াহেদ পান্নাকে সমন্বয়কারী, রেজাউল করিম হান্নানকে আহ্বায়ক এবং আবদুল গণিকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে কুমারখালীতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এ পরিষদের সদস্য ছিলেন ছাত্রনেতা আবদুস সাত্তার মঞ্জু, পরিমল কুমার বিশ্বাস, নন্দগোপাল বিশ্বাস, রুহুল আজম, শামসুল আলম পিন্টু, আলম, টুনু, রফিক প্রমুখ। কুমারখালী থানার বিভিন্ন ছাত্র, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এ-সময় উজ্জীবিত হয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
২৩শে মার্চ কুষ্টিয়া সদরের ইউনাইটেড হাইস্কুল মাঠে জয় বাংলা প্যারেড আয়োজন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এখান থেকে কুমারখালীসহ সমগ্র কুষ্টিয়া জেলার ছাত্র-যুবকদের আসন্ন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হয়। একই দিন কুমারখালীর পান্টি হাইস্কুল মাঠে ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়৷
কুমারখালী রক্ষার জন্য ৮নং সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নির্দেশে কুমারখালীর ২০ জন ছাত্র- জনতাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষণ প্রদান করেন কুমারখালী থানার ওসি সাইদুর রহমান। প্রশিক্ষণের জন্য থানার রাইফেলগুলো যুবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আহসানুল হক পান্না, নন্দগোপাল বিশ্বাস, বজলুল করিম টগর, ফজলুল করিম পান্নু, মোফাজ্জেল, টুলু, গণি, মঞ্জু সাত্তার, মসলেম দর্জি প্রমুখ। এছাড়া কুষ্টিয়া সদরের বংশীতলা, গোস্বামী দুর্গাপুর গ্রামের আড়পাড়া কুঠিবাড়ি (বিশ্বনাথ গোস্বামীর বাড়ি) এবং বামনগ্রাম ঠাকুরবাড়ির (নিতাই চক্রবর্তীর বাড়ি) প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কুমারখালীর অনেক ছাত্র-যুকব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে এখানকার অনেকে মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ভারতে যান।
কুমারখালী উপজেলায় এফএফ-এর ১১টি কমান্ডে যুদ্ধে পরিচালিত হয়। এখানে ১১ জন গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন। তাঁরা হলেন- আ. রাজ্জাক, বদর উদ্দিন, মোনায়েম উদ্দিন, মীর শহিদুল হক আন্টু, আব্দুল মাসুদ মিয়া ফুল, কামাল উদ্দিন, খুশি, মোকাদ্দেস হোসেন, লুৎফর রহমান, খন্দকার শামসুজোহা ও খলিলুর রহমান। উপজেলায় বিএলএফ কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন এন এম আবু হাসান বরুণ মাস্টার, জাহিদ হোসেন জাফর, আমিরুল ইসলাম প্রমুখ। মো. গোলাম কিবরিয়া এমপিএ, আ. আজিজ খান, এডভোকেট এম এ বারী, আবদুল মজিদ, বারিক জোয়ার্দার, আ. ওয়াহেদ পান্না, রেজাউল করিম হান্নান, পরিমল কুমার বিশ্বাস, নন্দগোপাল বিশ্বাস প্রমুখ কুমারখালীর মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ বড়-বড় শহরে গণহত্যা শুরুর পর কুষ্টিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ঝিনাইদহ অতিক্রম করে কুষ্টিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীরা স্টেডিয়ামের সামনে গাছপালা কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড দেন। তারা ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মজমপুর গেট, থানা মোড়, কেয়া সিনেমা (বর্তমান পরিমল টাওয়ার) হলের সামনে, আমলাপাড়া মোড় ও বড় বাজার রেলগেটে বড়-বড় গাছের গুঁড়ি ও ইট দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেন। ২৭ বালুচ রেজিমেন্টর ডেল্টা কোম্পানি কমান্ডার মেজর শোয়েবের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য সব ব্যারিকেড সরিয়ে কুষ্টিয়ায় অনুপ্রবেশ করে। তারা জেলা স্কুল, পুলিশ লাইন্স, সদর থানা এবং ওয়ারলেস অফিসে ক্যাম্প স্থাপন করে। কুমারখালী থেকে গোলাম কিবরিয়া এমপিএ, রেজাউল করিম হান্নান ও আনসার কমান্ডার ছমিরউদ্দীনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দলসহ বিভিন্ন উপজেলার হাজারো ছাত্র-জনতা বাঁশের লাঠি হাতে কুষ্টিয়াকে শত্রুমুক্ত করতে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২৫শে মার্চ রাতেই কুমারখালীতে প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হয়। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ১লা এপ্রিল সকাল ১১টার মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা হানাদারমুক্ত হয়। এ-সময় গোলাম কিবরিয়া এমপিএ-র নির্দেশে কুমারখালীতে হানাদার বাহিনীর অনুপ্রবেশ রোধে গড়াই নদীর পাশে ছাত্র-জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
কুষ্টিয়া থেকে ২৭শে মার্চ হানাদার বাহিনী কুমারখালীতে প্রবেশ করে। প্রবেশকালে কুমারখালীর ছাত্র-জনতা গোলাম কিবরিয়ার এমপিএ-র নেতৃত্বে গড়াই ব্রিজের নিকট তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু পাকবাহিনীর অস্ত্রের মুখে তারা টিকতে ব্যর্থ হয়। হানাদাররা কুমারখালী থানা কাউন্সিল (বর্তমান উপজেলা পরিষদ)-এ তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে তারা কয়া রেল ব্রিজের দুপাশে ক্যাম্প স্থাপন করে।
পাকিস্তানি বাহিনী কুষ্টিয়া দখলের পর কুষ্টিয়া সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তি কমিটি – ও -রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। তারা হানাদার বাহিনীর হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করে।
আজিজুল হক (শেরকান্দি)-কে সভাপতি এবং গোলাম মহম্মদ (তেবাড়িয়া)-কে সেক্রেটারি করে কুমারখালী উপজেলা শান্তি কমিটি গঠিত হয়। শান্তি কমিটিতে সদস্য হিসেবে মনতাজ আলী প্রামাণিক (শেরকান্দি), লুৎফর বিশ্বাস (কোষাধ্যক্ষ, শরকান্দি), আব্দুল ওয়াহেদ বিশ্বাস (দারোগা) (দপ্তর সম্পাদক, শেরকান্দি), হাবিবুর রহমান হবি (খানসামা বাড়ি, এলাঙ্গীপাড়া), মন্টু (খানসামা বাড়ি, এলাঙ্গীপাড়া), ডা. মনছুর আলী (কুণ্ডুপাড়া), কাজী শামসুল হক ওরফে কমলা কাজী (কাজীপাড়া, দুর্গাপুর), সোনা জোয়াদ্দার (দুর্গাপুর), সৈয়দ আহম্মেদ জামাল (কুণ্ডুপাড়া) প্রমুখ ছিল উল্লেখযোগ্য।
শান্তি কমিটির সেক্রেটারি গোলাম মহম্মাদের নেতৃত্বে উপজেলায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে তোসাদ্দেক হোসেন ননী মিয়া, শামসুজ্জোহা স্বপন ও ওমর আলী ছিল দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। উপজেলার অন্যান্য রাজাকাররা হলো- পৌরসভা এলাকার নূরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিক (মেয়র, শেরকান্দি), কুণ্ডুপাড়ার শাখাওয়াত হোসেন মিন্টু, ফিরোজ, জমির খান, জাফর, খুরশিদ, শেরকান্দির ছাত্তার, গালিব সিদ্দিকি, ছাকিব সিদ্দিকি, নাকিব সিদ্দিকি, কামাল আহম্মেদ, ইউনুস আলী, মসলেম উদ্দিন, খোকন (সাংবাদিক, কুষ্টিয়া), মুনির উদ্দিন (বাধপাড়া, শেরকান্দি), কে এম শফিকুল আলম (বাধপাড়া, শেরকান্দি), ঝাউতলা তেবাড়িয়ার আয়ুব আলী (অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত), মো. লুৎফর, আব্দুল গণি, আব্দুল লতিফ, মো. আলাউদ্দিন, আফিল উদ্দিন আফে (রেলগেট তেবাড়িয়া), আবু মুসা (তেবাড়িয়া), এলাঙ্গীপাড়ার আজিজুর রহমান সাবু (খানসামা বাড়ি), আছার আলী, শামসুল ইসলাম, দুর্গাপুর কাজীপাড়ার মতিয়ার রহমান পটু, আব্দুল জলিল, নজরুল ইসলাম ওরফে নজু কাজী, মো. তোফাজ্জল (খুলুপাড়া, দুর্গাপুর); নন্দলালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুরের মহাশেন আলী (মুনা মেম্বর), শামসুদ্দিন আহম্মেদ মাস্টার, সনে, আব্দুল জলিল (জলিল প্রেসিডেন্ট), গোলা মহাম্মাদ (ঘড়ি), মনজু, উশি, এনি, সদরপুরের এদুন আলি, ইদের আলী, ছামেল বিশ্বাস, আলী আকবর, মো. শুকুর জোয়াদ্দার, ইদ্রিস মুন্সি, মো. ওমর আলী, মো. ইসমাইল, আলম শেখ, হিরণ শেখ, আব্দুল জলিল, মো. আসরাফ, মো. ইয়াকুব আলী, ডনপু, কফি, নায়েব আলী, মো. ইশরাম আলী, মো. নজরুল ইসলাম, মো. সিরাজ, কারী সুলতান আহম্মেদ, রফিক, রইচ, মো. আকমল হোসেন, চড়াইকোলের তুরাব আলী, মিজানুর রহমান মজনু, এবাদত আলী, মহেন্দ্রপুরের মুন্সী মজিবর রহমান, আব্দুল জব্বার মিস্ত্রী, আব্দুল কাদের ওরফে হিরোইন কাদের, রহমান সরদার, মো. সিরাজুল ইসলাম (বিশু মাস্টার), আসাদুর রহমান, দয়ারামপুরের নুরুল হক গন্ধ, আকবর সরদার, যদু মোল্লা, সৈয়দ আলী সরদার, আব্দুল ছাত্তার খাঁ, আব্দুস ছাত্তার মোল্লা, আব্দুল আজিজ, সহিদুল খন্দকার, কামরুজ্জামান বাবু (হোগলা), মোজাম কারিকর (ঘাসিমপুর), মো. আকাই কানা (ইদ্রাকপুর), মো. কুদ্দুস মোল্লা (বেতবাড়ীয়া), খোরশেদ মুন্সী (সাতবাড়ীয়া), চাপাইগাছির কুরণ প্রামাণিক, বিলাত হোসেন, কুবাত; সদকী ইউনিয়নের আগ্রাকুণ্ডার সরাপ আলী, মধু শেখ, আবু হানিফ, আব্দুল মান্নান, আব্দুল মজিদ, সামসুদ্দিন প্রামাণিক, সিরাজুল ইসলাম দলু, রেজোয়ান আলী খান, আব্দুল হাকিম (শেরকান্দি), মনছের আলী প্রামাণিক, আলতাফ হোসেন (শেরকান্দি), আব্দুস ছাত্তার (কুণ্ডুপাড়া), পাথরবাড়ীয়ার জিন্না প্রামাণিক, বুড়ো জোয়াদ্দার, শহীদ, আব্দুল গফুর, উত্তর মূলগ্রামের আলতাফ, আব্দুর রহমান (পাগল), মইজদ্দিন, আবুল কাশেম (দারোগা), আব্দুল মান্নান, ফয়েজদ্দিন, হিজলাকরের আবুল কাশেম খাঁ (সাবেক মেম্বার), আব্দুল মান্নান, শহীদ, আলতাফ, সামসুদ্দিন, সদকীর মহম্মাদ আলী, সেকেন আলী, গোলাম ছরোয়ার, আব্দুর রাজ্জাক (বাটিকামাড়া), আব্দুল আজিজ (গোপালপুর), দরবেশপুরের আকামদ্দিন মালিথা, ইয়ার আলী, রুস্তম (খয়ের চারা); যদুবয়রা ইউনিয়নের শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস ওরফে বাম বিশ্বাস, আক্কেল আলী, আবুল হোসেন, আলতাফ হোসেন, ছাতিয়ান কুদ্দুস খন্দকার, খন্দকার আব্দুস ছামাদ, বড়ইচারার কেরামত বিশ্বাস, কাশেম আলী বিশ্বাস, বিলকাটিয়ার আব্দুল গফুর প্রামাণিক, আব্দুল রহমান, গোবিন্দপুরের শাহাদত আলী মণ্ডল, আলি সরদার, খুদাবক্স সরদার, মহম্মদ (ভবানীপুর), বিলায়েত আলী শেখ ফনে (এনায়েতপুর); চাঁদপুর ইউনিয়নের চাঁদপুরের বড় মুনি, আব্দুল করিম, আবুল কাশেম বিশ্বাস, আহম্মদ মোল্লা, আহম্মদ আলী, খালেক দেওয়ান, মন্টু, গোলাম ছরোয়ার মিয়া (গোবরা), সামছুদ্দিন বিশ্বাস (রামচন্দ্রপুর), ওহমান বিশ্বাস (ধোলনগর), পাঠান খাঁ (মোহননগর), নিয়ামতবাড়ীর হারুন, আব্দুল মাজেদ, মিনাজ উদ্দিন সরদার, রামচন্দ্রপুরের তোফাজ্জেল হোসেন বিশ্বাস, খলিলুর রহমান, আহম্মদ আলী, কুশলীবাসার ফজলুর রহমান, মোফাজ্জেল হোসেন, আমিনুর রশিদ, মকবুল হোসেন; পান্টি ইউনিয়নের পান্টির জোয়াদুর রহিম (শান্তি কমিটি), আতিয়ার রহমান, মোবারক হোসেন, মকগুল মণ্ডল, ফরহাদ হোসেন (জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি), নুরুল ইসলাম, কুতুব উদ্দিন, আব্দুল গনি, আব্দুল আজিজ, ইপিআর সদস্য তোফাজ্জেল হক, নুরুল ঈমান, মো. সামাদ, মো. আব্দুল কুদ্দুস, মো. আবুল কাশেম, মো. আনছার আলী, মো. মজনু মাস্টার, মনোয়ার হোসেন, মো. গোলাম সরোয়ার মুন্সী, দেলবর হোসেন, আব্দুল মজিদ, মো. আকবর হোসেন, মো. নূরুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান, মো. আব্দুল করিম, মো. আবুল কাশেম (বিরিকয়া), মো. আফিল উদ্দিন (বিরিকয়া), ওয়াশীর ডা. শফিউদ্দিন কবিরাজ, মো. ওসমান হোসেন, মো. মকবুল হোসেন, মো. সাজ্জাত হোসেন, মো. সারাফত হোসেন কবিরাজ, মো. খলিল উদ্দিন, পিতম্বর বাশির খেলাফত হোসেন, মাহাতাব আলী, আক্কাস আলী, রজব আলী, নায়েব আলী, মো. বদর উদ্দিন, মো. আব্দুল হাকিম, মো. আব্দুল বারি, মো. আব্দুর রশিদ, মো. জন্টু, মো. আবদুল হোসেন, মো. মকবুল হোসেন, খাছতন মোল্লা, কাশেম মেম্বর, রাজাপুরের শমসের আলী মেম্বর, নওয়াব আলী, বাগবাড়িয়ার মো. আব্দুল জলিল, মো. আছান আলী, মূলগ্রামের ছলিম উদ্দিন, ডালিম, জনাব আলী, নগর কয়ার মো. মোস্তফা, আব্দুস সাত্তার, কৃষ্ণপুরের মো. জালাল খাঁ, মো. মকবুল খাঁ, মো. রোজদার শেখ, ভালুকার ইসা হক, মো. ইব্রাহিম, মো. আদালত, মো. আনছার, মো. আব্দুল ওয়াহেদ, হোসেন শেখ, মো. জায়েদ শেখ (জনবশি); বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রামের জয়নাল আবেদিন, মো. নাজিমুদ্দিন, আব্দুল করিম, আব্দুল মালেক, বদর উদ্দিন, মো. হারু বিশ্বাস, মো. ইব্রাহিম, ইসমাইল বিশ্বাস, আব্দুল মজিল, ভড়ুয়াপাড়ার তিজারত আলী তেজেন, মো. হোসেন আলী, মো. রুস্তম আলী, আফজাল শেখ, মো. লিয়াকত আলী মদা, দুধকুমড়ার শামছুল শেখ, আব্দুল মজিদ, মো. শেরমত আলী, ফটিক বিশ্বাস, বান্দা বিশ্বাস, আমদ আলী, নাতুড়িয়ার আব্দুল বারী খাঁ, মো. কিতাব উদ্দিন মণ্ডল, মো. আজব আলী, মো. মনব্বর আলী, মো. মকবুল হোসেন, মিছমাল শেখ, মো. আব্দুল খালেক (দক্ষিণ মোনহরপুর), আজাহার আলী (শান্তি কমিটি) (দক্ষিণ মোনহরপুর), ইউসুফ আলী বিশ্বাস (শালঘর মধুয়া), ইয়াছিন আলী (শান্তি কমিটি) (শেখপাড়া), আমিনুল হক (মধুপুর), মুক্তার মোল্লা (দমদমা), লুৎফর মোল্লা (নোয়াপাড়া); কয়া ইউনিয়নের রমজান আলী (চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটি, কয়া), মো. ওহিরউদ্দিন (মালিথা), মোস্তফা (উত্তর কয়া), গোট্রিয়ার কেরামত আলী, আব্দুল মান্নান গোদাই, মোজাম, মো. আকমল হোসেন (বের কালুয়া), মো. আকালে (বের কালুয়া), মো. মিজানুর রহমান মুছা (উনিয়াপাড়া), আব্দুল ছামাদ রুস্তম (কালুয়া); চাপড়া ইউনিয়নের কাঞ্চানপুরের মো. বারি মহোরী, মো. মনজিল, মো. ইছা (পুলিশ সদস্য), মো. শামছুদ্দিন শেখ, মো. আব্দুল কাদের, মো. বদর উদ্দিন বিশ্বাস, মো. ইসমাইল হোসেন, মো. আজিজ মোল্লা, মো. আজমল হোসেন, মো. ইসমাইল ইসলাম, মো. ইউনুস আলী, মো. সোলেমান মাস্টার, শাওতারের মো. আব্দুল জলিল, মো. আব্দুল জালাল, মিনাজ উদ্দিন, মো. মোসলেম মাস্টার, মো. নিজাম কারিকর, সিংদাহরের মো. হামিদ দফাদার, মো. আফজাল হোসেন (চেয়ারম্যান, শান্তি কমিটি), মো. উজ্জল আলী; শিলাইদাহ ইউনিয়নের খোরশেদপুরের মো. সাদেক আলী, সদর উদ্দিন মৌলবি, নুর মহম্মদ, রশ মিয়া, মো. আব্দুল বারিক, মো. দয়াল শেখ (কল্যাণপুর), মো. লোকমান শেখ (মাঝগ্রাম), মো. সোবাহান আলী (আরপাড়া), মো. আব্দুল জব্বার (জাহেদপুর), মো. রবিউল শেখ (বেলগাছি), রবিউল শেখ (দারিগ্রাম), মির্জাপুরের মমতাজ শেখ, ময়েন উদ্দিন, মো. মহিউদ্দিন, মো. আব্দুল জলিল, মো. কিতাব প্রামাণিক; চরসাধিপুর ইউনিয়নের মো. জাহাঙ্গীর আলম বয়েন (চেয়ারম্যান), আব্দুস সোবাহান প্রমুখ।
২৭শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমারখালী উপজেলায় প্রবেশ করে কয়েকটি স্থানে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। তাদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হন শেরকান্দির তোসাদ্দেক হোসেন (পিতা সিরাজ মিয়া), হিরণ কুমার দত্ত (পিতা হরি নারায়ণ দত্ত), রাজ বিহারী দাস, কৃষ্ণা দাস (পিতা ডা. নিরঞ্জন দাস), আব্দুল আজিজ মোল্লা, কুণ্ডুপাড়ার ওমর আলী, কাঞ্চন কুমার কুণ্ডু, আবু বকর সিদ্দিকসহ অনেকে। হানাদাররা ৯ই সেপ্টেম্বর এডভোকেট এম এ বারীর বাঁশগ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া তারা কুণ্ডুপাড়ার ডা. নীহার রঞ্জন কুণ্ডুর বাড়ি এবং পান্টি বাজার লুণ্ঠন এবং আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
২৭শে মার্চ থেকে ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমারখালী উপজেলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে আরো যারা শহীদ হন, তারা হলেন- পৌরসভা এলাকার শেরকান্দির ননী মিয়া, সামসুজ্জোহা স্বপন (পিতা আব্দুল গফুর), সালমা খাতুন, খন্দকার আবুল খায়ের মন্টু (পিতা খোন্দকার গোলাম ইদ্রিস), আলতাফ হোসেন মানিক (পিতা আবুল হোসেন মিয়া), কাঙ্গালী চরণ দাস (পিতা সুরেন্দ্র নাথ), বিমল কুমার দাস, সরস্বতী রাণী দাস (পিতা কাঙ্গালী চরণ দাস), গীতা রাণী দাস, তেবাড়িয়ার সাইফুদ্দিন বিশ্বাস সন্তোষ, আব্দুল আজিজ মোল্লা (পিতা হাজী আ. রহমান মোল্লা), কাঞ্চন কুমার কুণ্ডু (পিতা মনমোহন কুণ্ডু), আলী হোসেন, শাহাদৎ আলী, সাদেক আলী মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম (পিতা সাইফুদ্দিন বিশ্বাস সন্তোষ), আনছার আলী (এলাঙ্গী); জগন্নাথপুর ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের আবদুল জব্বার মোল্লা (পিতা উফাত আলী মোল্লা), আকবর আলী মোল্লা (পিতা উফাত আলী মোল্লা), সিরাজউদ্দিন মোল্লা (পিতা আব্দুল জব্বার মোল্লা), সামছুদ্দিন মোল্লা (পিতা আব্দুল জব্বার মোল্লা), পূর্ণচন্দ্র ঘোষ (পিতা শশীভূষণ ঘোষ), আ. গফুর (পিতা আজগর আলী সর্দার, হোগলা), আ. আজিজ (পিতা ইজ্জত আলী, চাপাইগাছী), মহেন্দ্রপুর গ্রামের সানু সর্দার (পিতা পবন সর্দার), আ. আজিজ খান (পিতা লবু খান), সুধীর চন্দ্র ঘোষ (পিতা কেদার নাথ ঘোষ), দীপক সর্দার (পিতা চেনী সর্দার), কেরু ঘোষ, জাবেদ শেখ (পিতা যাদু শেখ), আবুল কাশেম (পিতা আলিমউদ্দিন), আ. কাদের (পিতা আলিমদ্দিন), দুর্লভ হালদার, সিদ্ধেশ্বর হালদার, নীলকান্ত হালদার, চরজগন্নাথপুর গ্রামের লিকাই মল্লিক (পিতা জুলমত মল্লিক), আমের আলী মণ্ডল (পিতা ফজল মণ্ডল), ছকি মল্লিক (পিতা চকো মল্লিক), হবি শেখ (পিতা তেছের শেখ), বরুণ হালদার (পিতা জ্যোতিষ চন্দ্র হালদার, হাসিমপুর), চর ভবানীপুর গ্রামের রিকাত আলী মণ্ডল, খবির শেখ; সদকী ইউনিয়নের আকবর আলী (পিতা সৈয়দ আলী, দরবেশপুর), বাটিকামারা গ্রামের আহম্মদ আলী (পিতা চাঁদ ব্যাপারী), গণি শেখ, সামছুদ্দিন খান (পিতা গনি খাঁ), আব্দুল মজিদ (পিতা হারুন বিশ্বাস), আশুতোষ বিশ্বাস মঙ্গল, আকবর আলী (আকু); কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের শরাদ উদ্দিন (পিতা কামসুল আলম), আবু তালেব (পিতা কাজিম উদ্দিন), আব্দুল করিম (পিতা আব্দুল কাদের), আলিমুদ্দিন (পিতা মফেজ মোল্লা), আইয়ুব আলী (পিতা মফেজ মোল্লা), হানিফ মণ্ডল (পিতা আলিমুদ্দিন), ইব্রাহিম (পিতা আলিমুদ্দিন), গট্রিয়া গ্রামের কফিল উদ্দিন (পিতা আফিলউদ্দিন) তাফেল উদ্দিন (পিতা ইমান আলী), গফুর মোল্লা (পিতা মকবুল হোসেন), আজমত আলী (পিতা কিয়ামুদ্দিন, খলিসাদহ), আরব আলী (পিতা দিনাজ আলী, বানিয়াপাড়া), সাদো (পিতা আফছার শেখ), আবুল হোসেন আকু (পিতা জাফর সর্দার, বেরকালোয়া), বানিয়াপাড়া গ্রামের মীর মাসুদ (পিতা মীর ছদ্দিন), আক্কেল মোল্লা (পিতা আজের মোল্লা), আব্দুল জব্বার (পিতা ইনাতুল্লাহ, বারাদী), আক্কাস আলী (পিতা ইছাহক আলী, বারাদী), ফকির সর্দার (পিতা মাজাই সর্দার, শ্রীকোল), জাকের আলী শেখ (পিতা বাহাদুর আলী, পান্টি), আকবর হোসেন (পিতা বিলায়েত হোসেন, বোয়ালিয়া), হাফেজ (পান্টি মসজিদের ইমাম), ইসমাইল শেখ (দক্ষিণ মূলগ্রাম), দেবতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস, মুক্তিযোদ্ধা গোপাল, মিরপুর গ্রামের গহের আলী (পিতা গেদু শেখ), রমজান আলী (পিতা রোজদার আলী), মকছেদ আলী (পিতা আমির উদ্দিন), নিয়ামতবাড়ী গ্রামের অফতাব আলী (পিতা জোনাব মজুমদার), মকবুল হোসেন (পিতা দিলবার বিশ্বাস), গকুল চন্দ্ৰ মাঝি (পিতা মণ্ডল চন্দ্র মাঝি), মহননগর গ্রামের হোসেন আলী (পিতা রজব মোল্লা), আফতাব উদ্দিন (পিতা নইম উদ্দিন), বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান (পিতা এছেম আলী), মোতাহার খেরো (পিতা মুন্সি আমির আলী), পাঁচু মণ্ডল (পিতা ইয়াজউদ্দিন, মাঝগ্রাম), কিতাই শেখ (পিতা ছোয়েদ আলী, জোয়ারপুর), হুজুর আলী (পিতা সুরত আলী, লালাদারিক), আদালত আলী (খোদ্দ বনগ্রাম), আব্দুল মজিদ বিশ্বাস (পিতা কওছের আলী বিশ্বাস, আড়পাড়া), দারিকগ্রামের মঙ্গলচন্দ্র মোদক, খলমা মোদক, ভূলা মোকদ, শ্রীপদ মোদক (পিতা কানাই), বুদে প্রামাণিক (পিতা গোপিনাথ), ইজ্জত আলী শেখ (পিতা ফণি বিশ্বাস, কসবা) শাজাহান আলী (কসবা), গণেশ পাল (পিতা বনমালী, কল্যাণপুর), আব্দুল হামিদ (পিতা ওমেদ আলী সর্দার, দুধকুমরা), বানাত আলী বানু, (দুধকুমরা), সহেজ আলী (পিতা তহরম, বাগুলাট), মনিরদ্দিন শেখ (পিতা মন্দির শেখ, বাগুলাট), কিপাই শেখ (পিতা খেরু শেখ, কালিকাপাড়া), আব্দুল মান্নান (পিতা মোজাহার আলী, ভেরুয়াপাড়া), রাখাল প্রামাণিক (পিতা কেষ্টলাল প্রামাণিক, সোন্দাহ), মনোহরপুর গ্রামের ইয়াজউদ্দিন মোল্লা (পিতা আইজদ্দিন মোল্লা), আমিরুল আব্দুল করিম (পিতা আব্দুল কাদের), আলিমুদ্দিন (পিতা মফেজ মোল্লা), আইয়ুব আলী (পিতা মফেজ মোল্লা), হানিফ মণ্ডল (পিতা আলিমুদ্দিন), ইব্রাহিম (পিতা আলিমুদ্দিন), গট্রিয়া গ্রামের কফিল উদ্দিন (পিতা আফিলউদ্দিন) তাফেল উদ্দিন (পিতা ইমান আলী), গফুর মোল্লা (পিতা মকবুল হোসেন), আজমত আলী (পিতা কিয়ামুদ্দিন, খলিসাদহ), আরব আলী (পিতা দিনাজ আলী, বানিয়াপাড়া), সাদো (পিতা আফছার শেখ), আবুল হোসেন আকু (পিতা জাফর সর্দার, বেরকালোয়া), বানিয়াপাড়া গ্রামের মীর মাসুদ (পিতা মীর ছদ্দিন), আক্কেল মোল্লা (পিতা আজের মোল্লা), আব্দুল জব্বার (পিতা ইনাতুল্লাহ, বারাদী), আক্কাস আলী (পিতা ইছাহক আলী, বারাদী), ফকির সর্দার (পিতা মাজাই সর্দার, শ্রীকোল), জাকের আলী শেখ (পিতা বাহাদুর আলী, পান্টি), আকবর হোসেন (পিতা বিলায়েত হোসেন, বোয়ালিয়া), হাফেজ (পান্টি মসজিদের ইমাম), ইসমাইল শেখ (দক্ষিণ মূলগ্রাম), দেবতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস, মুক্তিযোদ্ধা গোপাল, মিরপুর গ্রামের গহের আলী (পিতা গেদু শেখ), রমজান আলী (পিতা রোজদার আলী), মকছেদ আলী (পিতা আমির উদ্দিন), নিয়ামতবাড়ী গ্রামের অফতাব আলী (পিতা জোনাব মজুমদার), মকবুল হোসেন (পিতা দিলবার বিশ্বাস), গকুল চন্দ্ৰ মাঝি (পিতা মণ্ডল চন্দ্র মাঝি), মহননগর গ্রামের হোসেন আলী (পিতা রজব মোল্লা), আফতাব উদ্দিন (পিতা নইম উদ্দিন), বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান (পিতা এছেম আলী), মোতাহার খেরো (পিতা মুন্সি আমির আলী), পাঁচু মণ্ডল (পিতা ইয়াজউদ্দিন, মাঝগ্রাম), কিতাই শেখ (পিতা ছোয়েদ আলী, জোয়ারপুর), হুজুর আলী (পিতা সুরত আলী, লালাদারিক), আদালত আলী (খোদ্দ বনগ্রাম), আব্দুল মজিদ বিশ্বাস (পিতা কওছের আলী বিশ্বাস, আড়পাড়া), দারিকগ্রামের মঙ্গলচন্দ্র মোদক, খলমা মোদক, ভূলা মোকদ, শ্রীপদ মোদক (পিতা কানাই), বুদে প্রামাণিক (পিতা গোপিনাথ), ইজ্জত আলী শেখ (পিতা ফণি বিশ্বাস, কসবা) শাজাহান আলী (কসবা), গণেশ পাল (পিতা বনমালী, কল্যাণপুর), আব্দুল হামিদ (পিতা ওমেদ আলী সর্দার, দুধকুমরা), বানাত আলী বানু, (দুধকুমরা), সহেজ আলী (পিতা তহরম, বাগুলাট), মনিরদ্দিন শেখ (পিতা মন্দির শেখ, বাগুলাট), কিপাই শেখ (পিতা খেরু শেখ, কালিকাপাড়া), আব্দুল মান্নান (পিতা মোজাহার আলী, ভেরুয়াপাড়া), রাখাল প্রামাণিক (পিতা কেষ্টলাল প্রামাণিক, সোন্দাহ), মনোহরপুর গ্রামের ইয়াজউদ্দিন মোল্লা (পিতা আইজদ্দিন মোল্লা), আমিরুল ইসলাম (পিতা ইয়াজউদ্দিন), আব্দুল মালেক (পিতা লস্কর আলী, পুটিয়া), আজগর সর্দার (পিতা এজো সর্দার, দুর্গাপুর), ধর্মপাড়া গ্রামের পানু পাল (পিতা হরিপদ পাল), কানু পাল (পিতা অজয় পাল), দুলাল হালদার (পিতা নবদ্বীপ হালদার), ভারোরা গ্রামের সুদেব হালদার, উদ্দোব হালদার (পিতা দুল্লোভ হালদার), নেপাল দাস (পিতা নীলকণ্ঠ দাস), ছেঁউড়িয়া মণ্ডলপাড়ার জ্যোতিষ দাস, ছবিন মণ্ডল (পিতা তছির মণ্ডল), আবু বক্কার (পিতা তালেব মণ্ডল), মহররম আলী (পিতা আব্দুল করিম মণ্ডল), হানিফ (পিতা খোরশেদ মণ্ডল), নূর আলী (পিতা তাইজদ্দিন), আব্দুল গণি মণ্ডল (পিতা ইব্রাহিম মণ্ডল), কওছের আলী (পিতা নাছের মণ্ডল), ইনছান আলী (পিতা আব্দুল গণি মণ্ডল), আব্দুল জলিল (পিতা তেছেম মণ্ডল), ওমর বিশ্বাস (পিতা মেছের বিশ্বাস), সুলতান (পিতা ছলিম মণ্ডল), একেন মণ্ডল (পিতা রেকাত মণ্ডল), গিয়াস মণ্ডল (পিতা মুন্সি কামরুজ্জামান), আবুল হোসেন (পিতা মোহম্মদ আলী), গোলাম রসুল ওরফে খোকা বিশ্বাস (পিতা আহেজ বিশ্বাস, নগর সাওতা), ইসহাক আলী (পিতা আশা মল্লিক), সাবান মালিথা (পিতা আলহাজ্ব কিয়ামদ্দিন, মালিথা, ঘোষপুর), ইমাম আলী শেখ (পিতা হারান শেখ, সাদীপুর) প্রমুখ।
কুমারখালী থানা কাউন্সিল ক্যাম্প (বর্তমানে উপজেলা পরিষদ) ছিল হানাদার বাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র এবং বন্দিশিবির। এখানে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণকে ধরে এনে নির্যাতনে পর হত্যা করা হতো।
কুমারখালী উপজেলার পৌর এলাকায় উপজেলা পরিষদের ভেতরে, জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা দারোগার বাগান বাড়িতে ও চাপড়া ইউনিয়নের শ্মশানঘাটে গণকবর রয়েছে। কয়া রেল ব্রিজের দুই পাড়ের ক্যাম্প ছিল হানাদার বাহিনীর বধ্যভূমি ও গণকবর। তাছাড়া কয়া ইউনিয়নের মালিথাপাড়ায় তাদের একটি বধ্যভূমি ছিল।
কুমারখালী উপজেলায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকগুলো যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে ঘাসখাল যুদ্ধ, ডাঁশা চাষী ক্লাব যুদ্ধ, কুশলীবাসা-করিমপুর- ধলনগর-প্রতাপপুর যুদ্ধ, কয়া মালিথাপাড়া যুদ্ধ, বড়ই চারা যুদ্ধ, কুমারখালী থানা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।
১১ই এপ্রিল কুষ্টিয়া শহর এবং কুমারখালী উপজেলার কয়েক জায়গায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জঙ্গি বিমানের সাহায্যে বোমা হামলা চালায়। এতে অনেক বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশে যায়, অনেক ঘরবাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হয় এবং ৫ জন সাধারণ মানুষ ওমর আলী, গুলবাহার টেক্সটাইলের আলী, মন্টুসহ ৩ জন শ্রমিক এবং খেলতে থাকা অবস্থায় এক শিশুর প্রাণহানি ঘটে। সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের কুমারখালীস্থ বাড়ি সংলগ্ন গুলবাহার টেক্সটাইল মিলস্ বিমান হামলায় সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হয়। কুমারখালী গরুর হাটে বোমার আঘাতে বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর আব্দুর রউফ এমপিএ, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এমএনএ, আজিজুর রহমান আককাস এমএনএ, মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, শামসুল আলম দুদু ও আনোয়ার আলী কুমারখালী পরিদর্শনে আসেন।
১৮ই জুলাই হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়া মালিথাপাড়া যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে কয়া গ্রামের আলিমদ্দিন মোল্লা, তার দুই সন্তান হানিফ মোল্লা ও ইব্রাহিম মোল্লা শহীদ হন। হানাদার বাহিনী তাদের বাড়িঘর আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এখানে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। এ-যুদ্ধে স্থানীয় কয়েকজন রাজাকার হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করে। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা রিফাত সরদার, আ. খালেক, আ. মালেক, আনছার মণ্ডল প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
২২শে জুলাই ডাঁশা চাষী ক্লাব যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে একজন রাজাকার নিহত হয়। অপরদিকে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ৪ জন আহত হন।
৯ই নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাসখাল যুদ্ধ হয়। ঘাসখাল যুদ্ধে মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনীর ১২ জন নিহত হয়। অপরদিকে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৪ জন আহত হন। এ-যুদ্ধে জাহিদ হোসেন জাফরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।
৫ই ডিসেম্বর বড়ই চারা যুদ্ধ হয়। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের এ-যুদ্ধে ২ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ২ জন রাজাকার নিহত হয়। এ-যুদ্ধে জাহিদ হোসেন জাফরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা এবং কুমারখালীর কুশলীবাসা, করিমপুর, ধলনগর ও প্রতাপপুর গ্রামে ৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের খণ্ড-খণ্ড যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর, বদরুল ইসলাম বদর, মোকাদ্দেস হোসেন, আব্দুল হামিদ, নূর মহম্মদ জাপান, সামসুজ্জোহা, শহিদুল ইসলাম আন্টু ও আশরাফুল আলম গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্য, মিলিশিয়া ও রাজাকারসহ ১১ জন নিহত হয়। অপরদিকে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম ও মহব্বত হোসেন খেড়ো শহীদ হন। ৮ই ডিসেম্বর কুমারখালী থানায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ১০ জন রাজাকার নিহত হয়। অপরদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ই ডিসেম্বর কুমারখালী কুমারখালী উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
উপজেলার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন— ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন, বীর বিক্রম (পিতা সামছুল আলম, সুলতানপুর, কয়া) এবং ইপিআর সদস্য আবু তালেব শেখ, বীর বিক্রম (পিতা কছিম উদ্দিন, বের
কালোয়া)। কুমারখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- ক্যাপ্টেন শরফুদ্দিন, বীর বিক্রম (বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা, ১৯৭২ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিমান বন্দরে ডেকোডা বিমান দুর্ঘটনায় শহীদ), ইপিআর সদস্য আবু তালেব শেখ, বীর বিক্রম (সাতক্ষীরার শ্যামনগর যুদ্ধে শহীদ), আব্দুল হামিদ (পিতা রজব আলী সওদাগর, বাটিকামারা, সদকী), নুরুল ইসলাম (পিতা তোফাজ্জেল হোসেন, নগর সাওতা, চাপড়া), আব্দুল হামিদ (পিতা তফুর ব্যাপারী, সোন্দাহ, নন্দলালপুর), হাসান আলী মণ্ডল (পিতা বিলাত আলী মণ্ডল, ভালুকা, পানটি), জাহিদ হাসান চৌধুরী (পিতা তবারেক হোসেন, ডাঁশা, পানটি), আবুল মাসুদ ওরফে ফুল মিয়া (পিতা আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, নগরকয়াঁ, পানটি), আব্দুল আজিজ খান (পিতা আনিরুদ্দিন খান, কুণ্ডুপাড়া), এম এ এম রেজাউল হক (পিতা সৈয়দ আবুল ফজল, বাটিকামারা, সদকী), আনসার সদস্য ইদ্রিস আলী (পিতা মো. আব্দুল মান্নাফ, চাঁদপুর), আনসার সদস্য ছবেদ আলী (পিতা মো. আইয়ুব আলী, লাহিনীপাড়া, চাপড়া), আলী হোসেন বিশ্বাস (পিতা মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস, চাঁদপুর), সোহরাব হোসেন (পিতা আবু দাউদ খান, মধুপুর, বাগুলাট), খন্দকার আলাউদ্দিন (পিতা সামসুদ্দিন মৌলভী, কুশলীবাসা, চাঁদপুর), লিয়াকত আলী (পিতা লাখাই শেখ, লাউতি, শিলাইদ), খোন্দকার শামসুজ্জোহা (পিতা খোন্দকার মকসেদ আলী, কুশলীবাসা, চাঁদপুর), কামাল উদ্দিন (পিতা ইসমাইল হোসেন, চশরমুয়া, চড়াইকোল), মেহবুব ইসলাম (পিতা শরিফুল ইসলাম মিয়া, বিরিকয়া, পানটি), আ. জলিল জোয়াদ্দার (পিতা ফয়েজ উদ্দিন জোয়াদ্দার, সদরপুর, নন্দলালপুর), ডা. ইসা (তেজপুর) (পিতা ডা. মহিউদ্দিন, বাটিকামারা, সদকী), আফজাল হোসেন (পিতা হাতেম আলী বিশ্বাস, ধলনগর, বাগুলাট) ও রফিকউদ্দিন আহাম্মেদ (পিতা আব্দুল জলিল মণ্ডল, বাঁশগ্রাম, কুমারখালী)।
কুমারখালী উপজেলার বীরাঙ্গনারা হলেন- এলেজান নেছা (হাশিমপুর, জগন্নাথপুর), একই গ্রামের মাছুদা খাতুন, দুলজান নেছা (দয়ারামপুর, জগন্নাথপুর), মোমেনা খাতুন (মটমানিয়াট, সদকী), রাবেয়া খাতুন (শালঘর মধুয়া, বাগুলাট) ও মজিরন নেছা (নাতুরিয়া, বাগুলাট)। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের উদ্যোগে ঢাকায় গণআদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে সেখানে কুমারখালী উপজেলার ৪ জন বীরাঙ্গনা স্বাক্ষ্য প্রদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের ঘাসখালে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে, যা ঘাসখাল যুদ্ধের ট্রাজেডিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ডাঁশা চাষী ক্লাব চত্বরে ‘রক্ত ঋণ’ নামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। কুমারখালী পৌরসভায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়ার স্মরণে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। কয়া গ্রামের মালিথাপাড়ার আলিম উদ্দিন মোল্লা ও তার দুই পুত্র হানিফ ও ইব্রাহিমকে ১৮ই জুলাই হানাদার বাহিনী হত্যা করে। তাদের স্মরণে কয়া গ্রামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। কয়া ঘোরাঘাট থেকে সুলতানপুর পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয়েছে বীর উত্তম ক্যাপ্টেন শরফুউদ্দিনের নামানুসারে। বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টরের প্রবেশমুখের প্রধান সড়কের নামকরণ করা হয়েছে বীর উত্তম শহীদ আবু তালেবের নামানুসারে। [মো. আব্দুল জব্বার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!