কুমিল্লা এয়ারপোর্ট প্রতিরোধযুদ্ধ (কুমিল্লা সদর)
কুমিল্লা এয়ারপোর্ট প্রতিরোধযুদ্ধ (কুমিল্লা সদর) সংঘটিত হয় ২রা এপ্রিল। এদিন কুমিল্লা জাঙ্গালিয়া বিমানবন্দর (বর্তমান ইপিজেড) এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তা কুমিল্লা এয়ারপোর্ট প্রতিরোধযুদ্ধ নামে পরিচিত। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
২৫শে মার্চ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলা ও হত্যাযজ্ঞের পর কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে বাঙালি বেসামরিক সরবরাহকারীরা মাছ, মাংস ও সবজি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকা থেকে কৌটাজাত খাদ্যদ্রব্য বিমানযোগে কুমিল্লায় আনতে বাধ্য হয়। বিমানবন্দরে তারা কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীর সদস্য এবং ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধার একটি দল সুবেদার আবদুল জলিল লাল মিয়ার নেতৃত্বে বিমানবন্দরে পাকিস্তানি সৈন্যদের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। উদ্দেশ্য ছিল বিমানযোগে পাকসেনাদের সরবরাহ প্রতিরোধ এবং বিমানবন্দর ধ্বংস করা। এক্ষেত্রে তাঁদের উদ্বুদ্ধ করেন বাগমারা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আলী আক্কাস, শিকারপুরের। তাজুল ইসলাম ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আবুল কালাম মজুমদার। ২রা এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে ২০ সদস্যের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল এয়ারপোর্টের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত দিশাবন্দ গ্রামে অবস্থান নিয়ে পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। কিন্তু পাকসেনাদের অত্যাধুনিক ও ভারী অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে পিছু হটে লালমাই-বাগমারা থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে আলীশ্বর এলাকায় অবস্থান নেন। আধঘণ্টার মতো স্থায়ী এ- যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিল (আনসার সদস্য, রামপুর, কোতয়ালী) শহীদ হন। তাঁকে বাগমারা হাইস্কুল সংলগ্ন স্থানে কবরস্থ করা হয় (বর্তমানে এখানে বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে)। এ-যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিভিন্ন এলাকার ইপিআর, সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীর সদস্য ছাড়াও লাকসাম-বাগমারা অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা এ প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- দীন মোহাম্মদ (আলীশ্বর), আবু তাহের মজুমদার (আশকামতা, বাগমারা), মোহাম্মদ আলী (মনোহরপুর, বাগমারা) ও সিরাজুল ইসলাম (উত্তর দৌলতপুর)। [ইমন সালাউদ্দিন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড