You dont have javascript enabled! Please enable it!

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ স্বাধীনতা সৌধ (কুমিল্লা আদর্শ সদর)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ স্বাধীনতা সৌধ (কুমিল্লা আদর্শ সদর) কুমিল্লা জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখা শহরের রাণীর দিঘি পাড়ে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধে এ কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাঁদের স্মরণে কলেজের সামনে স্থাপিত হয়েছে “স্বাধীনতা সৌধ’।
৭১টি বর্গাকার স্লাবের সমন্বয়ে পুরো স্মৃতিসৌধটি নির্মিত সৌধের উত্তরমুখী সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলেই বাঁ হাতে পড়বে কৌণিকভাবে স্থাপিত বর্গাকারে একটি স্লাব। এটি বৈশাখের প্রতীক। এর পেছনে রয়েছে বর্গাকারে যৌথ দুটি গর্তের আদলে স্লাব। এর অর্থ ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনের পর্ব। এর পেছনে রয়েছে ৭টি বর্গাকার স্মাব। এর অর্থ ৭ই মার্চ। এর পেছনে রয়েছে ২১টি বর্গাকার স্মাব। এর অর্থ ২১শে ফেব্রুয়ারি। এর পেছনে ২৬টি বর্গাকার স্লাব। এর অর্থ একাত্তরের ২৬শে মার্চ। এর পেছনে ১৬টি বর্গাকার স্লাব। এর অর্থ ১৬ই ডিসেম্বর। সব স্লাবের যোগফল ৭১, অর্থাৎ ১৯৭১। এভাবে বাঙালির পুরো আন্দোলন-সংগ্রামকে ধারণ করেছে স্বাধীনতা সৌধ। শ্বেতশুভ্র পাথরে শহীদদের নামাঙ্কিত বেদিটি এমনভাবে তৈরি যে, সে কোনো পরাভব মানে না। বেদির রঙ কালোর কাছাকাছি। এর মানে শহীদদের রক্ত বাংলার সিক্ত মৃত্তিকায় মিশে এ রঙ ধারণ করেছে। এ বিশাল বেদির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতশুভ্র মার্বেল দিয়ে মোড়ানো ৭১টি বর্গাকার স্লাব। এটি শুভ্র ও পবিত্রতার প্রতীক।
স্বাধীনতা সৌধ ২৮ জন শহীদের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে, যাঁরা ছিলেন এ কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র। তাঁরা হলেন- এডভোকেট যতীন্দ্র কুমার ভদ্র, এডভোকেট প্রসন্ন কুমার ভৌমিক, লে. কর্নেল মোস্তাক আহমদ, দিলীপ দত্ত, প্রাণগোপাল ভট্টাচার্য, শিশির চন্দ্র দাস রানা, অসীম শান্তি রায়, অশোক কুমার গুহ বেনু, নীহার রঞ্জন সরকার, প্রিয়লাল ঘোষ, কাজল কুমার ভদ্র, এ কে এম শাহনেওয়াজ সরদার, হুমায়ুন কবীর, আবদুল মান্নান, কাজী আবদুল মালেক, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, মো. শামসুল হক, এ কে এম মোজাম্মেল হক, মো. খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া, মো. সাইফুল ইসলাম, খন্দকার আবু তাহের আবু, জয়নাল আবেদিন, মো. সেলিম মিঞা, মো. সোলায়মান মিঞা, মো. মোস্তফা কামাল, পরিমল চন্দ্র দত্ত, ভুলু পাল ও সৈয়দ সফিকুর রহমান।
১৯৯৪ সালের ৮ই জুলাই স্মৃতিসৌধটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্সের সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন সচিব এ এইচ মোফাজ্জল করিম। ১৯৯৫ সালের ২৬শে মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শহীদ জননী যতীন্দ্র ভদ্রের মা। স্বাধীনতা সৌধের স্থাপত্য নকশা তৈরি করেন বুয়েট স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক নিজামউদ্দিন আহমদ, প্রকৌশলী শেখ আবুল হোসেন, প্রকৌশলী গোলাম মহিউদ্দিন প্রমুখ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রাক্তন বিদ্যার্থীর সংগঠন ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্স-এর নিজস্ব তহবিল ছাড়াও এটি নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা করেন ওল্ড ভিক্টোরিয়ান ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এবং ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। [মামুন সিদ্দিকী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!