কুরুলিয়া খালপাড় গণহত্যা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর)
কুরুলিয়া খালপাড় গণহত্যা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর) সংঘটিত হয় ৬ই ডিসেম্বর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে চলে যাবার পূর্বদিন রাতে এ গণহত্যা ঘটায়। এখানে বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪০ জনকে হত্যা করা হয়। তাদের সকলেই ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে বন্দি। ৬ই ডিসেম্বর রাতে তাদের কারাগার থেকে বের করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ পাশে কুরুলিয়া খালপাড়ে হাতবাঁধা অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এলাকাটি তখন ছিল নির্জন ও খেলার মাঠI বর্তমানে যেখানে জেলা কালেক্টরেট অফিস, জেলা জজ আদালত, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), জেলা নির্বাচন অফিস প্রভৃতি স্থাপনা গড়ে উঠেছে, তার পশ্চিম পাশেই খালপাড়ে গণহত্যাটি সংঘটিত হয়। এখানে শহীদদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন- অধ্যাপক এ কে লুৎফর রহমান (পিতা কাজী আবু জামাল মোক্তার, কাউতলী নিয়াজপার্ক; ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক), এডভোকেট সৈয়দ আকবর হোসেন ওরফে বকুল মিয়া ও তাঁর সহোদর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আফজাল হোসেন (পিতা সৈয়দ সুবেদ আলী, আলীনগর, সরাইল)। বাকি ৩৭ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি, কারণ তারা ছিলেন দেশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, ২৭শে নভেম্বর পাকিস্তানি সেনারা অধ্যাপক লুৎফর রহমানকে তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে বন্দি করে রাখে। ৬ই ডিসেম্বর রাতে তাঁকেসহ ৪১ জন বন্দিকে গাড়িতে তুলে শহরের দক্ষিণ পাশে কুরুলিয়া খালপাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে কিছুটা উচ্চবাচ্য করলে এক পাকিস্তানি সেনা রাইফেল দিয়ে তাঁকে আঘাত করে। এরপর তাঁকে যখন গাড়ি থেকে নামানো হয়, তখন তাঁর হাতের বাঁধন খুলে গিয়েছিল। তাঁর সঙ্গী সরাইলের ডাক্তার হারুন ইসলাম রাতের অন্ধকারে দৌড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু তিনি পালানোর চেষ্টা করেননি।
বন্দিদের যখন কারাগার থেকে বের করে গাড়িতে তুলে হত্যার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন এডভোকেট সৈয়দ আকবর হোসেনের ছোটভাই সৈয়দ আফজাল হোসেন জল্লাদদের কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় করেছিল বড় ভাইকে হত্যা না করার জন্য। কিন্তু তার সে আকুল আবেদন ব্যর্থ হয়। গর্জে ওঠে জল্লাদ বাহিনীর অস্ত্র। এক সঙ্গে লুটিয়ে পড়ে দুই সহোদরসহ ৪০ জন দেশপ্রেমিক বাঙালির দেহ।
৬ই ডিসেম্বর এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে হানাদাররা ৭ই ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে চলে যায়। ৮ই ডিসেম্বর সকালে যৌথবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর দখল করে নেয়। ঐ সময় শহীদ সৈয়দ আকবর হোসেন ও তার ভাই সৈয়দ আফজাল হোসেনের লাশ তাদের আত্মীয়-স্বজনরা নিয়ে পারিবারিক কবর স্থানে দফন করেন। অধ্যাপক লুৎফর রহমানের লাশ দাফন করা হয় কাউতলী কবরস্থানে। [জয়দুল হোসেন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড