You dont have javascript enabled! Please enable it!

কুতুবদী যুদ্ধ (মনোহরদী, নরসিংদী)

কুতুবদী যুদ্ধ (মনোহরদী, নরসিংদী) সংঘটিত হয় ২২শে সেপ্টেম্বর। এদিন সকাল ১০টার দিকে পাকসেনারা মনোহরদী ক্যাম্প থেকে বের হয়ে ডিসি রাস্তা দিয়ে কুতুবদী গ্রাম অতিক্রম করে হেতেমদী গ্রামের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে (বর্তমান ব্রিকফিল্ড) এসে ব্রিজের দক্ষিণ পাশ জুড়ে অবস্থান নেয়। অপরদিকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারাও কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বাঘবের, মাছিমপুর ও চন্দনপুর গ্রামের মধ্যভাগ ও মাধুপুর কাচারি জুড়ে বিস্তীর্ণ সমরাঙ্গণ তৈরি করে অবস্থান গ্রহণ করেন। বেলা ১১টার দিকে পাকবাহিনী যুদ্ধের সূচনা করে। শুরু হয় প্রচণ্ড সম্মুখ যুদ্ধ। এ-যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর মেশিন গান, এসএলআর/এলএমজি, রাইফেল এবং পাকবাহিনীর চাইনিজ রাইফেলের গুলির আওয়াজে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। প্রায় আধঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর মুক্তিযোদ্ধারা গোলাগুলি বন্ধ করে কিছুটা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেছে মনে করে পাকবাহিনী গোলাগুলি বন্ধ করে মনোহরদী ফেরার পথে দুভাগে বিভক্ত হয়ে এক গ্রুপ বাঘবের গ্রামের শাহজাহান মুন্সীর বাড়ির পাশ দিয়ে চলে আসার সময় জনৈক এক ব্যক্তির স্ত্রী এবং অন্য দুজন যুবতীকে ধরে নিতে উদ্যত হলে গ্রামের লোকজন চিৎকার শুরু করে। কাছাকাছি স্থানে অবস্থানরত কুমিল্লার নিজাম উদ্দিন, হাফিজপুরের ডা. আ. হাই এবং পোড়াদিয়ার ফজলুল হকের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা পুনরায় পাকবাহিনীকে আক্রমণ করলে পাকসেনারা মহিলাদের ছেড়ে দিয়ে দ্রুত মনোহরদীর ক্যাম্পে ফিরে যায়। অপরদিকে জেলা বোর্ডের রাস্তা দিয়ে চলমান অপর গ্রুপটি চালাকচর থেকে আগত মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ পর্যায়ের যুদ্ধে পাকসেনাদের উভয় গ্রুপের অনেকেই আহত হয়। অপরদিকে পাকসেনাদের গুলিতে জমিতে কর্মরত অবস্থায় কুতুবদী গ্রামের চুমু মিস্ত্রীর পুত্র সুরুজ আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় এবং তার ভ্রাতা প্রতিবন্ধী আ. আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়। কয়েকটি গবাদি পশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা পড়ে। পাকবাহিনী তিনদিক থেকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে বিপর্যন্ত অবস্থায় মনোহরদী ক্যাম্পে ফিরে যায়।
২৩শে সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে পাকবাহিনী পুনরায় শক্তি বৃদ্ধি করে তাদের অধিনায়ক মেজর জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন পাকসেনা আগের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে হেতেমদী, কুতুবদী ও বাঘবের গ্রাম ঘেরাও করে। আগের দিনের যুদ্ধের পর ভয়ে গ্রামগুলোতে কোনো লোকজন ছিল না। আশে-পাশে কোথাও মুক্তিযোদ্ধারাও ছিলেন না। কোনো লোক খুঁজে না পাওয়ায় পাকসেনাদের একটি গ্রুপ জনশূন্য বাঘবের গ্রামে প্রবেশ করে হাজী আ. মজিদ ও মজব আলীর বাড়িঘর ও খড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগ করে ও লুটতরাজ চালায় এবং অপর গ্রুপ হেতেমদী গ্রামের মিয়া চাঁন ভেন্ডার, লেহাজ উদ্দিন, ডেঙ্গু প্রধান, আ. ছোবহান, আলাউদ্দিন ও সফর চাঁনের বাড়িসহ অনেক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। তৃতীয় গ্রুপ কুতুবদী গ্রামের কেরামত আলী মাস্টার, হাকিম উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, বাতেন ডাক্তার, মোহাম্মদ আলী, ফোরকান, রমিজ উদ্দিন, ছালাম এবং আ. আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। কুতুবদীর যুদ্ধে কেউ হাতহত না হলেও কয়েকটি গ্রামের ব্যাপক ক্ষতি হয়। [এম আর মাহবুব]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!