You dont have javascript enabled! Please enable it!

কুকিছড়া যুদ্ধ (মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি)

কুকিছড়া যুদ্ধ (মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি) সংঘটিত হয় ১৩ই ডিসেম্বর। মুক্তিযোদ্ধারা এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর মিজোদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে ১০-১২ জন মিজো সদস্য নিহত হয়। অপরদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে শত্রুবাহিনী পিছু হটে এবং জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মিজোবাহিনী পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার কুকিছড়ায় ছিল মিজোদের সবচেয়ে বড় ক্যাম্প। তবে ক্যাম্পে পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকাররাও ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বেই পাকিস্তান সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ভারতের মিজোরামের বিদ্রোহী গ্রুপ মিজোবাহিনী পাবর্ত্য জেলায় আশ্রয় নেয়। পাকিস্তান সরকার তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বৈরী সম্পর্ক সেই শুরু থেকেই। মিজোরা লালডেঙ্গার নেতৃত্বে তাদের বিপ্লবী সরকার গঠন করেছিল। তারা বেশির ভাগ সাজেক ভ্যালি এবং মারিশ্যা অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিল। সাজেক ও মারিশ্যা থেকে তারা লংগদু, দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্ব থেকেই তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তান সরকারের নির্দেশ ছিল তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার। পাকিস্তান সরকার তাদের প্রশিক্ষণ দিত এবং অস্ত্র সরবরাহ করত।
ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনী- তবলছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাঁরা তাইন্দং থেকে শুরু করে পানছড়ি, ভাইবোনছড়া, কুকিছড়া (গাছবান) ও খাগড়াছড়ি এলাকায় অপারেশন করেন। ১৩ই ডিসেম্বর কুকিছড়া ক্যাম্প আক্রমণ করা হয়।
তাইন্দং থেকে সারারাত পাহাড়ি পথ দিয়ে হেঁটে মুক্তিযোদ্ধারা কুকিছড়ায় পৌঁছান। ভোরে তাঁরা উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে ঘিরে ফেলেন কুকিছড়া ক্যাম্পটি। এ ক্যাম্পে মিজো, পাকিস্তানি ও রাজাকারসহ পাঁচ শতাধিক শত্রুসৈন্যর অবস্থান ছিল। কুকিছড়া রাস্তার ওপরে একটি ব্রিজ ছিল। ব্রিজের পূর্ব পাশে পাহাড়ের সঙ্গে মিজোদের ক্যাম্পটি ছিল। কমান্ডার কাবিল মিয়ার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পশ্চিম দিক দিক থেকে, ইপিআর নায়েক সুবেদার খায়রুজ্জামানের নেতৃত্বে আরেকটি গ্রুপ উত্তর দিক থেকে, আর শার্লি কোম্পানির কমান্ডার আলী আশরাফের নেতৃত্বে অপর একটি গ্রুপ দক্ষিণ দিক থেকে এসে ক্যাম্পটি ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় প্রায় দেড়শতাধিক ছিলেন। তিন দিক থেকে তাঁরা কাছাকাছি আসার পর একযোগে আক্রমণ শুরু করেন। এ আক্রমণের জন্য শত্রুবাহিনী সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিল। তারা প্রথমে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর ১০-১২ জন সদস্য নিহত হয়। মান্নান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা অহত হন। এছাড়া আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হননি। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে শত্রুবাহিনী পিছু হটে এবং জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পটি নিজেদের দখলে নেন। [ইয়াছিন রানা সোহেল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!