You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.20 | কুচনিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় গণহত্যা (সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) - সংগ্রামের নোটবুক

কুচনিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় গণহত্যা (সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)

কুচনিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় গণহত্যা (সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংঘটিত হয় ২০শে এপ্রিল। এতে ৯ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের অন্তর্গত কুচনিপাড়া বা কুচনি একটি গ্রাম। সরাইল উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন সদর। এর উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত কুচনিপাড়া গ্রাম। এখনো এ গ্রামটি উপজেলা সদর থেকে অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ১৯৭১ সনে গ্রামটি ছিল নিতান্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং হিন্দু অধ্যুষিত। নিম্নবিত্তের চাষী এবং মৎস্যজীবী দাস সম্প্রদায়ের হিন্দুরা এ গ্রামে বাস করত।
কুচনিপাড়া গ্রামটি যে হিন্দু অধ্যুষিত তা স্থানীয় -রাজাকার-রা আগেই পাকবাহিনীকে জানিয়ে দিয়েছিল। তাই নোয়াগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন শাহবাজপুরের রাজাকার বাচ্চু ও সাবুর সহযোগিতায় ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল কালীকচ্ছ ঘাঁটিবাড়ি ক্যাম্প থেকে কুচনিপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে। পাকসেনারা গ্রামে প্রবেশ করেই এলোপাতাড়ি হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। গ্রামের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি ছিল শন- বাঁশ এবং টিন-কাঠের। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই সারা কুচনিপাড়ায় আগুন লেগে ৫০টি বাড়ির শতাধিক ঘর পুড়ে যায়। পাকিস্তানি সেনাদের এবং আগুনের লেলিহান শিখা দেখে গ্রামের নারী-পুরুষ-শিশু প্রায় সকলেই দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। তারা নিঃসম্বল অবস্থায় প্রাণ নিয়ে অন্য গ্রামে পালিয়ে যায়। গ্রামের মধ্যে বৃদ্ধ, অসুস্থ এবং প্রায় চলচ্ছক্তিহীন যারা, তারা পালাতে পারেনি কিংবা তারা ভাবতে পারেনি যে, এই বৃদ্ধ বয়সে তারা হত্যার শিকার হবে। শেষ পর্যন্ত যারা গ্রামে থেকে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৪ জন মহিলাসহ ৯ জনকে আটক করে পাকসেনারা কুচনি ফুটবল খেলার মাঠে নিয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে কুচনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। সেখানে পাকসেনারা ৯ জন নারী-পুরুষকে গুলি করে এবং কাউকে-কাউকে বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে হত্যা করে। উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতার পর পাকহানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার অপরাধে রাজাকার বাচ্চু ও সাবুর সাজা হয় এবং তারা আড়াই বছর জেল খাটে।
কুচনিপাড়া গণহত্যায় শহীদরা হলেন— জগৎ মোহন দাস (পিতা বাদলী দাস), কৌশল্যা রানী দাস (স্বামী জগৎ মোহন দাস), শচীন্দ্র দাস (পিতা গগন দাস), প্রহ্লাদ দাস (পিতা ফিরান দাস), তারিণী দাস (পিতা কমল দাস), বৈকুণ্ঠ দাস (পিতা বৃন্দাবন দাস), মহেশ্বরী দাস (স্বামী নদীয়া চান দাস), বিধু রানী দাস (স্বামী ব্রজবাসী দাস) এবং মুক্তলতা দাস (স্বামী গোবিন্দ দাস)। [মানবৰ্দ্ধন পাল]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড