You dont have javascript enabled! Please enable it!

কুচিয়ামোড়া মোড় গণহত্যা (পাবনা সদর)

কুচিয়ামোড়া মোড় গণহত্যা (পাবনা সদর) সংঘটিত হয় ৩ দফায়— ১৩ই এপ্রিল, জুলাই মাসে ও ১৪ই অক্টোবর। নিরীহ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ গণহত্যায় ৩ গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষ শহীদ হন। একই স্থানে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাও হানাদারদের নিমর্ম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
পাবনা দখলের মাত্র দুদিনের মাথায় অর্থাৎ ১৩ই এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী গ্রাম পর্যায়ে সর্বপ্রথম আতাইকুলা ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া, শাখারীপাড়া ও সারদিয়া গ্রামে গণহত্যা চালায়। হানাদার বাহিনী মূলত থানা আওয়ামী লীগ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কালাচাঁদ চক্রবর্তী (কালা ঠাকুর) ও তাঁর ছেলে আতাইকুলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ-এর সভাপতি চন্দন কুমার চক্রবর্তী ওরফে চন্দন ঠাকুর (বর্তমানে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি)-কে ধরার উদ্দেশ্যে কুচিয়ামোড়া গ্রামে হানা দেয়। কিন্তু তাদের না পেয়ে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালায়। পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসররা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ গ্রামগুলোতে তাণ্ডবলীলা চালায়। এদিন তিন গ্রামের অধিকাংশ লোককে কুচিয়ামোড়া মোড়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ফলে, এ হত্যাকাণ্ড কুচিয়ামোড়া মোড় গণহত্যা নামে পরিচিত। কুচিয়ামোড়া গ্রামটি হিন্দুপ্রধান হওয়ায় তাদের মন্দির, বিগ্রহসহ বহু বাড়িঘর হানাদাররা জ্বালিয়ে দেয়। পাবনা জেলার মধ্যে গ্রাম পর্যায়ে সর্ববৃহৎ শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ বিগ্রহ মন্দির তারা আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। পাকিস্তানি হানাদারদের এ গণহত্যায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারান। শহীদদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন— শাখারীপাড়ার স্বপন কুমার সাহা চৌধুরী (পিতা সুধীর কুমার সাহা চৌধুরী), গোপাল কুমার সাহা চৌধুরী (পিতা সুধীর কুমার চৌধুরী), দ্বিজেন্দ্র নাথ সাহা (পিতা দীগেন চন্দ্র সাহা), অলোক কুমার সাহা চৌধুরী (পিতা শ্যামাপদ সাহা চৌধুরী), কালিপদ বাগচি (পিতা অযোদ্ধা বাগচি), কুচিয়ামোড়ার মনি গোপাল সাহা (পিতা সতীশ চন্দ্ৰ সাহা), ফনী গোপাল সাহা (পিতা সতীশ চন্দ্র সাহা), সুষেণ কুমার সাহা (পিতা মনমোহন সাহা), রবীন্দ্রনাথ রায় (পিতা বীজেন্দ্রনাথ রায়), হরেন্দ্রনাথ সাহা (শালগাড়িয়া) ও মাখন লাল পাল (পিতা অভয় চরণ পাল, সারদিয়া)।
পরবর্তী সময়ে পাকসেনা ও রাজাকাররা কুচিয়ামোড়া মোড়ে আরো ২ বার গণহত্যা চালায়। জুলাই মাসে মিলিশিয়া বাহিনী এ গ্রামে ঢুকে পরেশ চন্দ্র সাহার স্ত্রীসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা করে। ১৪ই অক্টোবর পাবনা সদরের ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা নন্দনপুর গ্রামে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে ধরা পড়েন। ঐ ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তারা রাজাকারদের হাতে তুলে দেয়। রাজাকার-রা তাদের শাখারীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমানে সুধীর কুমার স্কুল এন্ড কলেজ)-এ এনে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে অর্ধমৃত অবস্থায় কুচিয়ামোড়া মোড়ে এনে গুলি করে হত্যা করে। এ ৩ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হলেন- মান্নান (সদরের মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলামের ভাই), মতি (জেলা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বকুলের মামা) এবং পল্টু। তাঁদের স্মরণে কুচিয়ামোড়া মোড়ে ‘যাঁদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা’ লেখাসহ ২০১৪ সালে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। [ছবেদ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!