You dont have javascript enabled! Please enable it!

কুড়িগ্রাম জেলখানা বধ্যভূমি (কুড়িগ্রাম সদর)

কুড়িগ্রাম জেলখানা বধ্যভূমি (কুড়িগ্রাম সদর) কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় অবস্থিত। এখানে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়।
তিস্তা ব্রিজে বাঙালিদের প্রবল প্রতিরোধের কারণে পাকবাহিনী ৭ই এপ্রিল পর্যন্ত কুড়িগ্রাম শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। তারা তিস্তা ব্রিজ অতিক্রমের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কৌশল বদল করে ভিন্ন পথে হারাগাছ-খুনিয়াগাছ এলাকা দিয়ে কুড়িগ্রামে প্রবেশ করে। ৭ই এপ্রিল কুড়িগ্রাম শহরে অনুপ্রবেশ করে তারা জেলখানার সিপাহিদের সার্কিট হাউজের পেছনের সিএন্ডবি রেস্ট হাউজে ধরে নিয়ে আসে এবং পাশের সড়কে তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এদিন পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন জেল ইনচার্জ হেদায়েতুল্লাহ, সিপাহি জহির উদ্দিন, সিপাহি লাল মোহাম্মদ, সিপাহি আনসার আলী, সিপাহি সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। সিপাহি আব্দুল জলিল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। জেলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আনসার কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশে এস এম হারুন-অর-রশীল লাল, মতিউল ইসলাম চৌধুরী, আজহারুল ইসলাম রাজা, রজব আলী, ওমর ফারুক প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা জেলাখানার জমাদারকে আটক করে নাগদহ বিলে নিয়ে হত্যা করেন। পাকবাহিনী ঐদিন যেমন গণহত্যা করেছিল, তেমনি রেললাইনের আশপাশের সকল ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। অপারেশন শেষে পাকসেনারা রংপুরের দিকে ফিরে গেলে সন্ধ্যায় বেসরকারি হাইকমান্ডের সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ, তার পুত্র ছাত্র ইউনিয়ন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম হারুন-অর-রশীদ লাল, মতিউল ইসলাম চৌধুরী (নয়া) লাশগুলো বহন করে জেলখানায় নিয়ে আসেন। আজহারুল ইসলাম রাজা ঐসব লাশের জানাযা পড়ান। মৃতদেহগুলো তারা কুড়িগ্রাম জেলাখানার বহির্বাউন্ডারির মধ্যে পূর্বদিকের ফাঁকা জমিতে কবর দেন এবং জেল ইনচার্জ হেদায়েতুল্লাহকে তাঁর বাসভবনের নিকটস্থ ব্যাপারী পাড়ায় সমাহিত করা হয়। পাকিস্তান বাহিনী কুড়িগ্রামে স্থায়ীভাবে অবস্থান নিলে জেলাখানা কার্যত তাদের কসাইখানায় পরিণত হয়। এখানে যেমন সাধারণ মানুষের গরু-ছাগল নিয়ে এসে তারা মজুদ করত, তেমনি অনেক বাঙালিকে আটক করে নির্যাতনের পর হত্যা শেষে জেলখানা ও জেলখানার উত্তর দিকের সরকারি ফাঁকা জমিতে মাটিচাপা দিত বা ফেলে রাখত। নিহত অনেক পাকিস্তানির লাশও এখানে চাপা দেয়া হয়। নিকটস্থ সিএন্ডবি রেস্ট হাউজের মাঠে সেনা অফিসারদের সামনে জনৈক নিয়ামত কসাই বহু বাঙালিকে জবাই করে হত্যার পর মৃতদেহগুলো জেলখানার উন্মুক্ত জায়গায় ফেলে দিত। এখানেই নীলফামারীর কৃতী সন্তান মুক্তিযোদ্ধা ডোমাস চন্দ্রের লাশ পচে-গলে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এখানে মোগলবাসার মালভাঙার কেতকির পাড়ের আব্দুল করিমের লাশও পড়েছিল। সে-সময় কুকুর- শৃগালের সঙ্গে শতশত শকুন দলে-দলে গলিত লাশ খেতে আসত কুড়িগ্রাম জেলখানার মাঠে। এভাবেই কুড়িগ্রাম জেলখানার পূর্ব ও উত্তরদিকের ফাঁকা জায়গা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তীতে উত্তরদিকের সরকারি ফাঁকা জায়গাটিকে বধ্যভূমি ধরে সেখানকার গণকবর বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা এবং এর পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। [এস এম আব্রাহাম লিংকন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!