কালুরঘাট রেলসেতু বধ্যভূমি (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম)
কালুরঘাট রেলসেতু বধ্যভূমি (বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম) চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীতে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে বহু সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়।
কালুরঘাট রেলসেতু চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনসাধারণের যাতায়াতের মূল পথ। এ সেতু রেলপথ এবং সড়ক পথ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনসাধারণ জীবন-জীবিকার জন্য এ সেতুর ওপর দিয়ে রেলপথ ও সড়কপথে যাতায়াত করত। কারণ নদীপথের ঘাটগুলো তেমন নিরাপদ ছিল না। এ রেলসেতু দোহাজারী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ সেতু দিয়ে রেল চলাচল করত। সেতুর ওপর রাজাকার ও আলবদর বাহিনী নিয়মিত এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা মাঝে-মধ্যে পাহারা দিত। প্রায় প্রতিদিন তারা দোহাজারী থেকে আসা রেলের বগিগুলো থেকে সাধারণ লোকদের নামিয়ে আনত। রাজাকাররা হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকদের পেলে মৃত্যুর খাতায় নাম লিখত। এরপর তারা ভাটিয়ারিতে তাদের উলঙ্গ করে ধর্ম নির্ণয় করে তালিকা করত। এই সেতুতে পাহারারত রাজাকারদের মূল কাজ ছিল হিন্দু এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনকারীদের বেছে-বেছে নিধন করা। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এভাবে রাজাকাররা কালুরঘাটে নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে। তারা লোকজনের কোমড়ে দড়ি বেঁধে সেতুর নীচে কর্ণফুলী নদীর পানির কাছে নিয়ে যেত। এরপর প্রথমে তাদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে আহত করে আনন্দ উল্লাস করত এবং পরে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর মানুষগুলোর কারো মাথায় গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিত আবার কারো বুকে গুলি করত। এভাবে তারা সাধারণ জনগণকে হত্যা করত। মুক্তিযুদ্ধের সময় কর্ণফুলী নদীর পানি শহীদদের রক্তের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। [উদয়ন নাগ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড