কাশিপুর গণহত্যা (রাণীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও)
কাশিপুর গণহত্যা (রাণীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও) সংঘটিত হয় ১৭ই মে। এখানে পাকবাহিনী ও রাজাকার-রা ৯ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।
রানীশংকৈলের উত্তর-দক্ষিণ সীমান্তে নাগর নদের পাড়ে কাশিপুর গ্রামে এ গণহত্যা সংঘটিত হয়। গণহত্যার স্থানটি চৌরাস্তা বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এখনও দৃশ্যমান। গণহত্যায় পাকবাহিনী, রাজাকার ও উর্দুভাষী বিহারিরা জড়িত ছিল। অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার মেজর সিদ্দিকুর রহমান, প্রাক্তন সুবেদার আব্দুর রহমান, কাবুলি, তার দুই ছেলে ইমাম ও জাহিম হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে।
২৫শে মার্চ ঢাকায় সংঘটিত গণহত্যার প্রতিবাদে কাশিপুর ইউনিয়নের কাদিহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও গ্রামের স্বাধীনতাকামী যুবকরা মিছিল করে। এ মিছিল থেকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান উচ্চারিত হয়। ছাত্র-জনতার মিছিল জগদল বিওপি ক্যাম্প পর্যন্ত যায়। এলাকায় পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর তারা স্বাধীনতার চেতনা নস্যাৎ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন-গুম-হত্যা শুরু করে। বিশেষত গাজীগড় ও মুজাহিদবাদ কলোনিতে বিহারিরা নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালাতে থাকে। এছাড়া জগদল, পাটাগড়া, কাশিপুর, কাদিহাট, চিকনমাটি, মহারাজা, চিকনি, ভরনিয়া প্রভৃতি গ্রামেও নিরীহ মানুষদের হত্যা করতে থাকে। ১৭ই মে তারা কাশিপুরে ৯ জন মানুষকে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন— জমিরউদ্দিন (কাদিহাট, বুগধিরপাড়), দিলু মোহাম্মদ (কাদিহাট, বুগধিরপাড়), আলিমউদ্দিন (কাদিহাট, বুগধিরপাড়), নৈমুদ্দিন মণ্ডল (ভরনিয়া, আনসার ডাঙ্গী), তোফাজ্জল (চিকনি), বাবুল (ভরনিয়া, বড়িপাড়া), নাইমুল (পিতা ফেলরি মোহাম্মদ, ভরনিয়া, সালফার্ম), ইমোন ও তাঁর বৃদ্ধ শ্বশুর (আলসিয়া, রাণীশংকৈল)। হত্যার আগে পাকবাহিনী তাদের দিয়ে গর্ত খোঁড়ায় এবং সেই গর্তে মৃতদেহগুলো ফেলে দেয়। [ওসমান গনি]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড