কাশিমপুর গণহত্যা (হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর)
কাশিমপুর গণহত্যা (হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর) সংঘটিত হয় ৪ঠা মে। এতে ২৩ জন নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশু প্রাণ হারায়। চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলাস্থ হাজীগঞ্জ বাজারের পূর্ব পাশে টোরাগড় গ্রামের হামিদিয়া জুট মিলে পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্প থেকে তারা বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন চালিয়ে হত্যা, নির্যাতন ও লুটপাট করত। হাজীগঞ্জ বাজার থেকে প্রায় ৪ মাইল দক্ষিণে প্রত্যন্ত একটি গ্রাম কাশিমপুর। ৪ঠা মে সকাল ১০টায় পাকহানাদার বাহিনী এ গ্রামের কানু মাস্টারের বাড়ি, বৈষ্ণব বাড়ি, রায় বাড়ি, যুগী বাড়ি (বড়বাড়ি), সূত্রধর বাড়ি, নবচন্দ্রের বাড়ি, পণ্ডিত বাড়ি, ছালাল বাড়ি ও সরকার বাড়িতে হানা দিয়ে গণহত্যা চালায়। এ গণহত্যায় পাকবাহিনীর সহযোগী ছিল টোরাগড়ের কুখ্যাত বাচ্চু রাজাকার। সে পাকবাহিনীকে পথ দেখিয়ে কাশিমপুরে নিয়ে যায়।
পাকবাহিনী প্রথমে কানু মাস্টারের বাড়ি আক্রমণ করে কানুমোহন দেবনাথকে গুলি করে হত্যা করে। তারপর বৈষ্ণব বাড়ির অনিল ও তার বৃদ্ধ মাকে হত্যা করে এবং আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। রায় বাড়ির বৃদ্ধা সুন্দর বালাকে হত্যা করে এবং বসত ভিটা আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করে। যুগী বাড়ির নকুল, তার বড় ভাই ললিত মোহন, তাদের বৃদ্ধ মা সুখদা দেবী ও তার নাতনি ১৪ বছরের পারুল, ললিত মোহনের স্ত্রী চারুবালা ও তার ১০বছরের শিশু বিজয় এবং ললিত মোহনের বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইন্দু রানী, বাড়ির এক বধূ শ্রীমতী দেবী, তার বড় ছেলে সুবাস দেবনাথ এবং একমাস বয়সের শিশুপুত্র জয়দেবকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আহত আবস্থায় বেঁচে যান যুগী বাড়ির রেনুমালা ও শ্যামলী। ২০০৮ সালে মারা যান রেনুমালা। আজো সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন শ্যামলী। এরপর পাকহানাদাররা সূত্রধর বাড়ির বিমলা ও তার শিশু সন্তান, নব চন্দ্রের বাড়ির লক্ষ্মীবালা, চন্দনা দেবী, মনোরঞ্জন ও তার শিশুকন্যা নিয়তি, সরকার বাড়ির অমিয়বালা, পণ্ডিতবাড়ির বিদ্যা দেবী ও ছালাল বাড়ির বিপীন দেবনাথকে হত্যা করে। শহীদদের গণসমাধিস্থলে নামসহ একটি ফলক স্থাপিত হয়েছে। [জহিরুল ইসলাম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড