বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের আলোকচিত্রগ্রাহক ও চিত্রসাংবাদিক কিশোর পারেখ
কিশোর পারেখ(১৯৩০-১৯৮২) ভারতের আলোকচিত্রগ্রাহক ও চিত্রসাংবাদিক। তিনি ১৯৩০ সালে গুজরাটের ভাবনগর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর ফটোগ্রাফি বিষয়ে অধ্যয়ন করার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ১৯৬১ সালে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনে ফটোগ্রাফি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ভারতে প্রত্যাবর্তন করে তিনি দি হিন্দুস্তান টাইমস্ পত্রিকার প্রধান আলোকচিত্রগ্রাহক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ভারত- চীন যুদ্ধ (১৯৬২), ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৬৫), তাসখন্দ চুক্তি (১৯৬৬), বিহার দুর্ভিক্ষ (১৯৬৬-৬৭) ইত্যাদি ঐতিহাসিক ঘটনার অসংখ্য দুর্লভ ছবি তোলেন। তাসখন্দ চুক্তির কিছু দুর্লভ ছবি তোলার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে সোভিয়েত ল্যান্ড পত্রিকা কর্তৃক স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। অতঃপর চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে তিনি ১৯৬৭ সালে হংকংয়ে গমন এবং এশিয়া ম্যাগাজিন পত্রিকায় যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি প্যাসিফিক ম্যাগাজিন লি.-এ চিত্রসম্পাদক হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে কিশোর পারেখ শরণার্থী শিবির-এর অসংখ্য মর্মস্পর্শী আলোকচিত্র ধারণ করেন। তাঁর এই আলোকচিত্রগুলো বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয় এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রাখে। তিনি মিত্রবাহিনীর সঙ্গে থেকে ঢাকা অভিযানের চিত্র ধারণ করেন। তাঁর ক্যামেরায় তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার বিভিন্ন দৃশ্য, রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের লাশের করুণ চিত্রসহ মোট ৬৭টি ছবি তোলেন। স্বাধীনতার পরপর তাঁর আলোকচিত্র নিয়ে প্রকাশিত Bangladesh : A Brutal Birth গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধের এক অসাধারণ দলিল হিসেবে বিবেচ্য। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১লা অক্টোবর ২০১৩ কিশোর পারেখ-কে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। [কাজী সাজ্জাদ আলী জহির]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড