You dont have javascript enabled! Please enable it!

কালীগঞ্জ গণহত্যা (জলঢাকা, নীলফামারী)

কালীগঞ্জ গণহত্যা (জলঢাকা, নীলফামারী) সংঘটিত হয় ২৭শে এপ্রিল। এতে ভারতগামী হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩ শতাধিক মানুষ শহীদ হন। এ হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করে পাকবাহিনীর দোসর নীলফামারী সদরের আবদুল্লাহ রাজাকার, এডভোকেট আব্দুল লতিফ ও মাহতাব চেয়ারম্যান।
জলঢাকা উপজেলা ১২টি ইউনিয়ন এবং ৬৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে বালাগ্রাম ইউনিয়নের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলামান। তবে এ ইউনিয়নের পশ্চিম বালাগ্রাম, চাওড়াবাড়ী ও সালোগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করত। তিনশত হিন্দু পরিবারের প্রায় ৩০০০ জনের বাস ছিল এ তিনটি গ্রামে। এখানকার হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোকজন রাজাকার ও আলবদরদের হাতে নির্যাতিত হয়।
বালাগ্রাম ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জীবন রক্ষার্থে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক ২৭শে এপ্রিল তারা পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার ও নির্যাতনের ভয়ে পরিবার-পরিজনসহ জলঢাকা-চিলাহাটির পথে ভারতে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন অশ্বিনী কুমার অধিকারী, শিবেন্দ্রনাথ অধিকারী, গুরুদাস, বেলা, ধরণী প্রমুখ। জলঢাকা উপজেলা শহর থেকে ১২ কিমি উত্তরে কালীগঞ্জ অবস্থিত। ভারতে যাওয়ার পথে কালীগঞ্জ ব্রিজের নিকট পাকসেনাদের একটি দল (তারা এ-সময় জিপে করে ডোমার থেকে জলঢাকার দিকে যাচ্ছিল) শরণার্থীদের পথরোধ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দ্রুত পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের ঘেরাও করে। এ-সময় কিছু সংখ্যক শরণার্থী পালাতে সক্ষম হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা অন্যদের প্রথমে তিন ভাগে বিভক্ত করে। প্রথম ভাগে নারী ও শিশু, দ্বিতীয় ভাগে বয়স্ক ও পুরুষ এবং তৃতীয়টিতে তরুণদের রাখা হয়। পাকসেনারা তরুণদের দলটিকে রাস্তার উত্তর পাশে এনে গর্তের পাশে দাঁড় করে মেশিনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। এরপর রাস্তার দক্ষিণ পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খালে বয়স্ক ও পুরুষদের গুলি করে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ কেউ-কেউ সেদিন দৌড়ে পালিয়ে বেঁচেছিল। নারী ও শিশুরা এ-সময় আর্তচিৎকার করতে থাকে। পাকসেনারা রাইফেল দিয়ে তাদের আঘাত করতে থাকে এবং শিশুদের গুলি করে হত্যা করে। নারীদের হাত-পা বেঁধে জিপে তুলে নিয়ে যায়। তাদের অধিকাংশেরই পরবর্তীকালে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, তাদের সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয় এবং যুদ্ধের নয় মাস তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। তাদের অনেককেই গুলি করে হত্যা করা হয়।
জলঢাকা থানার ওসি ও স্থানীয় জামায়াত নেতা মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর নির্দেশে গণহত্যায় শহীদদের মৃতদেহ খালের উভয় পাশে মাটিচাপা দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর স্থানটি ভরাট করে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। [নাহিদা আলম লুবনা]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!