কালীগঞ্জ শ্যাওলাপট্টি যুদ্ধ (কালকিনি, মাদারীপুর)
কালীগঞ্জ শ্যাওলাপট্টি যুদ্ধ (কালকিনি, মাদারীপুর) সংঘটিত হয় ২৭শে নভেম্বর। এতে কোনো পক্ষেই তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ঘটনার দিন সকালবেলা কালকিনি থানা থেকে ভুরঘাটা যাওয়ার পথে রাজদী ব্রিজের কাছে কালকিনি থানা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রহমানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি বেলুচ মিলিশিয়া ও স্থানীয় রাজাকারদের ওপর গেরিলা হামলা করেন। আক্রান্ত রাজাকারদের মধ্যে মাদারীপুর শান্তি কমিটি-র জাহাঙ্গীর উকিলও ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে কালকিনি থানার ওসি গুরুতর আহত হয়। আরো কয়েকজন রাজাকার – ও মিলিশিয়া আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের এ অভিযান সম্পূর্ণ সফল না হলেও দিনের আলোতে থানার এতটা কাছে এসে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা হামলা করায় পাকসেনা ও রাজাকারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিজেদের ভেঙ্গে পড়া মনোবল ফিরিয়ে আনতে হানাদার পাকিস্তানি সেনা ও আলবদর-রা যৌথভাবে এদিন বিকেলে কালীগঞ্জ শ্যাওলাপট্টিতে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমণ করে।
সকালে রাজদী ব্রিজ যুদ্ধের পর দুপুর ১২টার দিকে রণক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা কালীগঞ্জ শ্যাওলাপট্টিতে ক্ষীরোদপ্রসাদ গাঙ্গুলীর বাড়ির ক্যাম্পে ফিরে আসেন। কিন্তু রাজদী ব্রিজ যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে আলবদর বাহিনী ও পাকসেনাদের এ আক্রমণ এবং হানাদার সেনাদের সংখ্যাধিক্য ও অত্যাধুনিক অস্ত্রের মুখে অনেকটা অপ্রস্তুত ও ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে চলার কৌশল গ্রহণ করেন। শত্রুবাহিনী প্রায় প্রতিরোধহীনভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প দখল করে নেয়। মাদারীপুর মহকুমার মুজাহিদ বাহিনীর কমান্ডার কালীগঞ্জের মুজিবর সরদারের নেতৃত্বে পাকসেনারা কুলপদ্দী হয়ে হেঁটে এবং নদীপথে দুদিক থেকে কালীগঞ্জের দিকে এগিয়ে যায়। তারা সারা পথে জ্বালাও-পোড়াও করতে-করতে অগ্রসর হয়। ক্যাম্পের প্রধান বাবুর্চি মোসলেম খানের ছোড়া উপর্যপুরি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজে শত্রুবাহিনীর অগ্রগমন কিছুটা মন্থর হলে মুক্তিযোদ্ধারা রামনগর ঝিলের দিকে সরে যেতে সক্ষম হন। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড