মুক্তিযুদ্ধে কালুখালি উপজেলা (রাজবাড়ী)
কালুখালি উপজেলা (রাজবাড়ী) ২০০৬ সালে পাংশা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন (রতনদিয়া, বোয়ালিয়া, কালিকাপুর, মৃগী, সাওরাইল, মাঝবাড়ি ও মদাপুর) নিয়ে গঠিত হয়। রাজবাড়ী জেলা শহরের পশ্চিমে এর অবস্থান। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান-এর সময় এখানে প্রচণ্ড রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মোসলেম উদ্দিন মৃধা বিপুল ভোটে এমপিএ নির্বাচিত হন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ষড়যন্ত্র শুরু করে। এতে সারাদেশের মানুষের মতো কালুখালির জনগণও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসনের যাঁতাকল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের মার্চের শুরু থেকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সহ- সভাপতি ফজলুল হক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার দত্ত (দীপু দত্ত), ছাত্রনেতা মকসেদ আলী প্রমুখের নেতৃত্বে তারা সংগঠিত হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে উপজেলার সর্বত্র শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। তাঁর সাতই মার্চের ভাষণ এর পর ছাত্রসমাজ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে চারদিক মুখরিত করে তোলে। সর্বত্র ধ্বনিত হয় “বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগান৷
পঁচিশে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট শুরু হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা ২৬শে মার্চ সকালে কালুখালির রেলওয়ে জংশন স্টেশনে পৌছায়। পরদিন ২৭শে মার্চ বিকেলে রতনদিয়া রজনীকান্ত হাইস্কুল মাঠে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মহরা। রতনদিয়ার সাবেক আনসার কমান্ডার শামছুল আলম ওরফে প্যাংকা ভাই ও চাঁদপুরের সাবেক আনসার কর্মকর্তা আফান (চাচা)-এর নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল এখানে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শুরু করে। মাঝবাড়ির আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন (খামারবাড়ি, পরবর্তীকালে মাঝবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান), ফরিদ আহমেদ (পরবর্তীকালে পাংশা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী জজ কোর্টের পিপি), ছাত্রলীগ নেতা ফকির লোকমান হোসেন (মোহনপুর, মাঝবাড়ি ইউনিয়ন), শওকত ভাই, গঙ্গানন্দপুরের জীবন কুমার দত্ত, দীপু দত্ত, শান্ত দা, রূপসার মকসেদ আলী মাস্টার, রতনদিয়ার ফজলু প্রমুখ নেতা এলাকার ছাত্র-যুবকদের নিয়ে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। আনসার কমান্ডার বকু চৌধুরী রাজবাড়ী থেকে ৬টি রাইফেল এনে প্রশিক্ষণে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ করে দেন। কালুখালি উপজেলার দক্ষিণে চন্দনা অববাহিকায় ও চিত্রাখালের পাড়ে মৃগী হাইস্কুল মাঠেও সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রাক্তন সৈনিক ও পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় মৃগী ইউনিয়ন এবং আশপাশ এলাকার শতাধিক ছাত্র-যুবক এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। উপজেলার প্রতিটি গ্রাম ও পাড়া- মহল্লায়ও শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। আব্দুর রব, দিয়ানত আলী, আব্দুল আজিজ জোয়ার্দার, ইসমাইল ভেন্ডার, আব্দুল খালেক এবং প্রাক্তন সৈনিক তোফাজ্জল হোসেন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
কালুখালি উপজেলায় শামছুল আলম ওরফে প্যাংকা ভাই, আফান (চাচা), ফরিদ আহমেদ, ফকির লোকমান হোসেন, শওকত ভাই, জীবন কুমার দত্ত, দীপু দত্ত, শান্ত দা, মকসেদ আলী মাস্টার, ফজলুর রহমান প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। বিএলএফ-এর থানা কমান্ডার ছিলেন বিমল প্রামাণিক ও আব্দুর রব।
কালুখালি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্থানীয় চারটি বিশেষ বাহিনী ছিল। সেগুলো হলো- রব বাহিনী, হোসেন বাহিনী, নুরুন্নবী বাহিনী এবং বিমল বাহিনী। রব বাহিনীর প্রধান আব্দুর রব ছিলেন ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র। তিনি ভারত থেকে উচ্চ সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে বিএলএফ-এর কমান্ডার হিসেবে ১৫ই আগস্টের পর দেশে আসেন। এরপর তিনি শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালিয়ে একের পর এক এলাকা শত্রুমুক্ত করেন। হোসেন বাহিনীর প্রধান আবু হোসেন সরদার ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে প্রথমে রব বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন। পরে তিনি আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি শক্তিশালী গেরিলা বাহিনী গঠন করে বিভিন্ন অপারেশন পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালিত অপারেশনগুলোর মধ্যে কালিকাপুর রেলব্রিজ অপারেশন রতনদিয়া হাইস্কুলের পাশে অবাঙালি রাজাকারের বাড়ি অপারেশন ও কালুখালি রেলস্টেশন অপারেশন উল্লেখযোগ্য। নুরুন্নবী বাহিনীর প্রধান আনসার কমান্ডার এস এম নুরুন্নবী রাজবাড়ী আনসার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণরত ১৪৪ জন আনসার সদস্যকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেন। এ বাহিনী ৩০শে মার্চ কুষ্টিয়া শহর হানাদারমুক্ত করা এবং গোয়ালন্দ ঘাট প্রতিরোধে অংশ নেয়। পরে হোসেন বাহিনীর সঙ্গে যৌথ ও পৃথকভাবে অনেক সফল অপারেশন পরিচালনা করে। বিমল বাহিনীর প্রধান বিমল প্রামাণিক (গঙ্গানাথপুর) ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বিএলএফ কমান্ডার।
রাজবাড়ী উপজেলায় পাকবাহিনীর প্রবেশ ঠেকাতে গোয়ালন্দ ঘাট, কামারখালি ঘাট ও রেলপথে চড়াইকোলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। এতে কালুখালির যোদ্ধারাও যোগ দেন। তার আগে ২৫শে মার্চ রাতে যশোর সেনানিবাস থেকে একদল পাকিস্তানি সৈন্য গিয়ে কুষ্টিয়া শহর দখল করে।
তাদের হাত থেকে কুষ্টিয়া শহরকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ২৯ ও ৩০শে মার্চ কুষ্টিয়া শহরে যে যুদ্ধ হয়, তাতে কালুখালি উপজেলার কৃতী সন্তান কালিকাপুরের আনসার কমান্ডার নুরুন্নবী ও মহেন্দ্রপুরের বকু চৌধুরীর নেতৃত্বে এক বিরাট বাহিনী যোগ দেয়। এ-যুদ্ধে কালুখালি উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস শহীদ হন।
এদিকে ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টায় পাকবাহিনীর একটি গ্রুপ গোয়ালন্দের ওপারে আরিচাঘাটে ৬ই এপ্রিল থেকে অবস্থান নেয়। তাই পদ্মানদীর অপর পারে গোয়ালন্দ ঘাটে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এখানে কমান্ডার নুরুন্নবীর নেতৃত্বে একদল আনসার সদস্য এবং কালুখালি স্কুলমাঠ ক্যাম্প থেকে ছাত্র-যুবকরা দলে-দলে যোগ দেয়। এছাড়া পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য রেলস্টেশন, চন্দনা নদীর খেয়াঘাট, রেলওয়ে ব্রিজসহ গুরত্বপূর্ণ স্থানে সতর্ক প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়।
২১শে এপ্রিল পাকবাহিনী গোয়ালন্দ ঘাটের প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেঙ্গে রাজবাড়ীতে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা ক্যাপ্টেন ইকবালের নেতৃত্বে কালুখালিতে প্রবেশ করে এবং রেলওয়ে স্টেশনে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। এছাড়া তারা স্টেশনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে দুটি করে চারটি এবং প্লাটফর্মের ওপর দুটি মোট ছয়টি বাংকার তৈরি করে। বাংকারের চারিপাশে বালির বস্তা দিয়ে প্রতিরক্ষা দুর্গ গড়ে তোলা হয়।
হানাদার বাহিনী এখান থেকে পার্শ্ববর্তী কাটাবাড়িয়া, নওপাড়া ও রামদিয়াসহ আশপাশের এলাকায় ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে শতাধিক নিরীহ লোককে হত্যা করে এবং অনেক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। এরপর তারা স্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠন করে। এদের সহায়তায় তারা কালুখালি স্টেশনের উত্তরদিকে ভাঙ্গা বটগাছের তলায় এলাকার বহু মানুষকে ধরে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করে ভয়াবহ ত্রাসের সৃষ্টি করে। কালুখালিতে প্রধানত মুসলিম লীগ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা খানবাহাদুর ইউসুফ হোসেন চৌধুরীর পরিবারের লোকজন তাদের অনুসারীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনী গড়ে তোলে। তাদের একজন ছিল ইউসুফ হোসেন চৌধুরীর ভাগ্নে রতনদিয়া ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লাল মিয়া। সে থানা এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বে ছিল। পাকিস্তান সরকারের পক্ষে সে লোক সংগ্রহ করত এবং তাদের পরিচয়পত্র বিতরণ করত।
কালুখালি উপজেলায় স্বাধীনতাবিরোধীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়রা হলো- এ বি এম নুরুল ইসলাম এমএনএ (মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে স্বপক্ষ ত্যাগ করে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীনতাবিরোধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়), খানবাহাদুর ইউসুফ হোসেন চৌধুরী (ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত বাংলায় ভারতীয় পার্লামেন্টের সদস্য, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার, ১৯৬৫ সালের বিডি নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা), আফজাল হোসেন (পিতা রহিম মিয়া, বোয়ালিয়া; জামায়াতে ইসলামীর নেতা এবং আলবদর বাহিনীর মহকুমা প্রধান; যুদ্ধের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে আত্মগোপন করে কাঠের কারখানায় কাজ শুরু করে, পরে পার্বত্য জঙ্গলে কাঠের কারবার করে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়), দলু চৌধুরী (পিতা খানবাহাদুর ইউসুফ হোসেন চৌধুরী; স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে খানগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও নকশালপন্থী রাজনীতিতে যুক্ত) এবং নাজির হোসেন চৌধুরী ওরফে নীলু চৌধুরী (পিতা খানবাহাদুর ইউসুফ হোসেন চৌধুরী; রাজাকার বাহিনীর মহকুমা কমান্ডার, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে রতনদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে ১৯৮৮ সালে পাংশা-বালিয়াকান্দি আসনে নির্বাচিত এমপি)। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য এ বি এম নুরুল ইসলাম এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে স্বাধীনতার পক্ষ ত্যাগ করে। এর ফলে তখন থেকেই কালুখালিতে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক-দালাল রাজাকারদের তৎপরতা শুরু হয়। মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা খানবাহাদুর ইউসুফ হোসেন চৌধুরীর বাড়িও কালুখালিতে (রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে)। এদের সহায়তায় রেলস্টেশন ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে পাকবাহিনী কুখ্যাত রাজাকার ও মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে। তারা কালুখালি থেকে ভাটিয়াপাড়া লাইনের রামদিয়া, বহরপুর, জামালপুর, মধুখালি এবং পাংশা-মাছপাড়া রেলস্টেশনের স্থানীয় শান্তি কমিটি ও রাজাকার সদস্যদের মধ্যে এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
কালুখালি উপজেলা সদর এলাকার রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিল তোফাজ্জেল হোসেন (পিতা তালেব, তফাদিয়া)। এ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আবুল পাটোয়ারী (রতনদিয়া), করিম দেওয়ান (তফাদিয়া), লাল জোয়ার্দার (বল্লভপুর), রহিম (বহর কালুখালি), জলিল (তফাদিয়া), তাহের মণ্ডল (বহর কালুখালি), মজিদ খাঁ (বসন্তপুর), তালেব জোয়াদ্দার (রতনদিয়া), ইসলাম পালোয়ান (চাঁদপুর রতনদিয়া), মোছলেম শেখ (রুপসা), জয়নাল (রুপসা), আদুলে (রুপসা), ভাদুরি মণ্ডল (রুপসা), আলমগীর খা (গঙ্গানন্দপুর), ইউসুফ মেকার (মালিয়াট), আ. কাদের বিশ্বাস (কাঁটাবাড়ীয়া), আ. করিম মণ্ডল (দুর্গাপুর), আব্দুল জব্বার (গড়িয়ানা), আ. রশিদ মোল্লা (শ্রীরামপুর), আ. রাজ্জাক মোল্লা (বাতকুড়ি), মতিয়ার রহমান খাঁ (গোয়ালপাড়া), সৈয়দ আলী মীর (সংগ্রামপুর), আ. ছাত্তার মণ্ডল (বিলমানুষমারি), নাদের মেম্বার (রতনদিয়া), জলিল (তফাদিয়া) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
মদাপুর ইউনিয়নের খানগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মুনাক্কা মিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলে গোপালবাড়ির (গোয়ালপাড়া) সৈয়দ আব্দুর রশীদ মেম্বারকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে তাকে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়, আর সেক্রেটারি করা হয় দুর্গাপুরের নওশের মণ্ডলকে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে মদাপুর ইউনিয়ন কাউন্সিলের আদায়কারী বিলমানুষমারির আব্দুল গফুর মণ্ডল, সৈয়দ আলী মীর রাজাকার, শ্রীরামপুরের মেম্বার কাসেম মোল্লা এবং আ. জলিল মণ্ডল (সংগ্রামপুর) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। মদাপুরের রাজাকার কাসেম মোল্লার ছেলে আব্দুর রশীদ মোল্লা, রাউকুড়ির আব্দুল মজিদ মোল্লার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, মতিয়ার রহমান খাঁ প্রমুখ রাজাকার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ছিল। এসব রাজাকার বন্দুক নিয়ে মদাপুরের নওপাড়া গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ব্রিজ পাহারা দিত। তারা দুর্গাপুর ও বাওইখোলা গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। বিহারি-রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এরা এলাকায় বহু খুন-রাহাজানি করে।
মৃগী ইউনিয়নে রাজাকার কমান্ডার ছিল মো. আবু খাঁ (পিতা আজাহার খাঁ, খরখড়িয়া)। এ বাহিনীর সদস্য ছিল ছামাদ শেখ (পবন পাঁচবাড়ীয়া), আবুল হায়াত (আখরজানি), জোনাব আলী খান (বথুমদিয়া বস্তিপুর), লাল চাঁদ মণ্ডল (বড় কলকলিয়া), তাছের শেখ (পবন পাঁচবাড়িয়া), বছির আলী মিয়া (মাজবাড়ি), আ. কাদের বিশ্বাস (কাঁটাবাড়ীয়া), আ. করিম মণ্ডল (দুর্গাপুর), আব্দুল জব্বার (গড়িয়ানা), আ. রাজ্জাক মোল্লা (বাতকুড়ি), আ. ছাত্তার মণ্ডল (বিলমানুষমারি) প্রমুখ।
মাঝবাড়ি ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল খন্দকার গাওছল আজম (পিতা খন্দকার আমীর উদ্দিন) এবং সেক্রেটারি ছিল খলিলুর রহমান মোল্লা (পিতা ছবেদ আলী মোল্লা, হাড়িভাঙ্গা)। রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আনছার উদ্দিন মৃধা বাবলু, দবির উদ্দিন মিস্ত্রি (হাড়িভাঙ্গা), খন্দকার মহসিন, নরু শেখ (মোহনপুর) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে যেসব রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে, তাদের মধ্যে আব্দুল গফুর মোল্লা (হেমায়েতখালী), মো. আ. মাজেদ (খরখরিয়া), আমিন খাঁ (খরখরিয়া), মো. সোহরাব মণ্ডল (ছোট কলকলিয়া), কফিল মোল্লা (খরখরিয়া) এবং আবু তালেব মণ্ডল (ছোট কলকলিয়া)-এর নাম উল্লেখযোগ্য। আর যারা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রাণ হারায় তাদের মধ্যে জলিল মোল্লা (পিতা কফিল উদ্দিন মোল্লা, আখরজানি; শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান) এবং ওমর আলী খাঁ (পিতা তমির খাঁ, খরখরিয়া; শান্তি কমিটির সভাপতি) এ দুজন ছিল।
রাজাকার, শান্তি কমিটি ও মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় লুটপাট শুরু করলে এলাকার হিন্দু পরিবারগুলো নিরাপত্তার স্বার্থে ভারতে চলে যেতে থাকে। আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের পরিবারগুলোও তাদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে চলে যায়। চন্দনা নদীর তীরবর্তী হিরু মোল্লার ছেলে ক্যাটারে মোল্লা হারোয়া গ্রামের হিন্দুদের বাড়িঘর লুট করে।
ঢাকায় পাকবাহিনীর আক্রমণের কয়েকদিন পর বিহারি ও রাজাকাররা সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে কালুখালি রেল স্টেশনের পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর গ্রামে একদিনে ৫ জনকে হত্যা করে। হানাদার বাহিনী বোয়ালিয়া ইউনিয়নের সলু পাল (পিতা জিতেন পাল), হিরা লাল দত্ত (পিতা নগেন দত্ত), শরৎ কুমার দাস (পিতা শচীন্দ্র দাস), প্রমুখকে হত্যা করে। তাদের হাতে বোয়ালিয়ার সুবোধ চন্দ্র দাস (পিতা হেমেন্দ্ৰ দাস, ভবানীপুর) আহত হন। একই গ্রামের মকছেদ মাতবর রাজবাড়ী থেকে জলিল বিহারির নেতৃত্বে আসা ১০-১২ জনের একটি দল নিয়ে দিনের বেলায় বন্দুক, ছোড়া, রামদা ইত্যাদি ধারালো অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রামের হিন্দুপাড়ায় আক্রমণ করে। তারা গ্রামের মাতবর ও পানচাষী বুদ্ধিশ্বর দাস, তার ভাই সুবোধ দাস, কার্তিক দত্ত, জুলো পাল ও সন্তোষ দত্তকে চন্দনা নদীর পাড়ে ভবানীপুর শ্মশানে নিয়ে হত্যা করে। ইয়াছিন বিহারির নেতৃত্বে একদল রাজাকার চৌবাড়িয়া গ্রামের সরোজিত বোসের (স্বাধীনতার পর মৌরাটের চেয়ারম্যান) বাড়িতে আক্রমণ চালায় এবং সর্বস্ব লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। মৌরাট ইউনিয়নের রুপিয়াট গ্রামের কুখ্যাত কাসেম রাজাকার, দলিল উদ্দিন মণ্ডল প্রমুখ পাকবাহিনীর সহায়তায় এলাকায় বহু লুটপাট, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটায়। পরবর্তীতে কাসেম রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়।
রতনদিয়া গ্রামের গনিরুদ্দিন শেখের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন রাজাকার ১লা এপ্রিল সন্ধ্যায় গঙ্গানন্দপুর গ্রামের হিন্দুপাড়া লুট করে। এদিন বাঙালি রাজাকারদের মধ্যে রতনদিয়ার নাদের মেম্বার এবং বোয়ালিয়ার তোমছেল ছিল। হানাদার বাহিনী প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রতনদিয়ার মালিয়াট গ্রামে হামলা চালায়। তারা মুদি দোকানী অতুল সাহা ও তার ভাই প্রতুল সাহা এবং একই গ্রামের ব্যবসায়ী নিমাই সাহাকে ধরে চোখ-মুখ বেঁধে মালিয়াট খালপাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে নাদের রাজাকার অতুল সাহাকে এবং তোমছেল রাজাকার প্রতুল সাহাকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করে পরে তাদের লাশ খণ্ডখণ্ড করে নদীতে ফেলে দেয়। এই লোমহর্ষক ঘটনার পর ঐ এলাকার হিন্দুরা সবাই ভারতে চলে যায়। এদিন হানাদার বাহিনীর হাতে ঐ গ্রামে আরো কয়েকজন শহীদ হয়। এ ঘটনা মালিয়াট গণহত্যা নামে পরিচিত পাকবাহিনী ১৫ই এপ্রিল পাংশা স্টেশন থেকে মৃগী ইউনিয়নের মেড়রা গ্রামের দাসপাড়ায় গিয়ে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে এবং মহিলাদের ওপর নির্যাতন চালায়। প্রায় তিনশ পাকিস্তানি সৈন্য এদিন মৃগী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আক্রমণ করে ট্রেনিং সরঞ্জাম ও কমান্ডার আব্দুর রবের বাড়ি লুট করে। তারা বানজানা গ্রামের উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, মৃগী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্রনাথ বাবুর নব্বই বছরের বৃদ্ধপিতা, উপেন্দ্রনাথ ওরফে উপেন ডাক্তার (বানজানা) ও মাওলানা মজিবর রহমান (বানজানা)-কে হত্যা করে। পাকবাহিনী মাজবাড়ি ইউনিয়নের চণ্ডীপুর ও হেলঞ্চা গ্রামে আক্রমণ করে ডা. শৈলেন্দ্রনাথ (মাজবাড়ি), মকবুল হোসেন (পিতা বিষু মন্ডল, রায়পুর), মো. হাকে মণ্ডল (পিতা আজিজ মন্ডল), জুলো পাল (পিতা জগদীশ পাল), নাদের হোসেন (পিতা এনাতুল্লাহ সেখ) এবং বৃন্দা মাঝি (সোনাপুর, মাজবাড়ি)-কে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্থানীয় রাজাকাররা ঐ এলাকা থেকে অনেক গরু-ছাগল ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নেয়।
কালুখালি রেলওয়ে স্টেশন ক্যাম্প ছিল পাকবাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির। বিভিন্ন স্থান থেকে নিরীহ লোকদের এখানে ধরে এনে হাত-পা বেঁধে ও গাছে ঝুলিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। হানাদার বাহিনী বহু নারীকে এখানে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে।
পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা কালুখালি রেল স্টেশনের পাশে ভাঙ্গা বটগাছের তলায় এবং স্টেশনের পূর্বদিকের রেলব্রিজ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকের খালের মধ্যে বহু মানুষকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়। রেলব্রিজের স্থানটি ‘তারা ব্রিজ গণকবর’ হিসেবে পরিচিত। এছাড়া উপজেলার আরো কয়েকটি স্থানে গণকবর ও বধ্যভূমি ছিল।
কালুখালির মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকায় ফিরে এসে বিভিন্ন স্থানে অপারেশন শুরু করেন। তাঁরা ব্রিজ ধ্বংস, রেল লাইন উপড়ে ফেলা, থানা আক্রমণ করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নেয়া, রাজাকারদের নিকট থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়া, পাকসেনাদের অবস্থানে আক্রমণ ইত্যাদির মাধ্যমে পাংশার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা এবং বালিয়াকান্দির অধিকাংশ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আগস্ট মাসের প্রথমদিকে হোসেন বাহিনী কালিকাপুর রেলব্রিজ রাজাকার ক্যাম্পে অপারেশন চালিয়ে বিনা রক্তপাতে রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করায় এবং ১৭টি রাইফেল হস্তগত করে। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা রতনদিয়া হাইস্কুলের পাশে এক অবাঙালি রাজাকারের বাড়িতে অপারেশন চালিয়ে দুটি রাইফেল উদ্ধার করেন। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে হোসেন কমান্ডার বারমল্লিকা ক্যাম্প থেকে মাত্র তিনজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বেলগাছির হড়াই ব্রিজে এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন। এ-সময় তিনি বেশ কয়েকজন রাজাকারকে হত্যা এবং অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেন। পাংশার সাচ্চু কমান্ডারের সঙ্গে মিলে তিনি কালুখালির রূপসা এবং আড়পাড়ার মধ্যবর্তী রেললাইন কেটে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে পাকবাহিনীর রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে পাকবাহিনী এখানে রাজাকার বাহিনীকে পাহারায় বসায়।
অক্টোবরের শেষদিকে কমান্ডার আব্দুর রবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কালুখালি ও রামদিয়া রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী পাকবাহিনীর শেল্টার হিসেবে পরিচিত কাঁটাবাড়িয়া রেলব্রিজ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেন। এখানে আত্মসমর্পণকারী রাজাকারদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। ডিনামাইট ব্লাস্ট করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দিয়ানত আলী এবং আজাহার মাস্টারের জীবন প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়ে। পরে পাকবাহিনী ঐ ব্রিজটি মেরামত করে নাজির হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল এক রাজাকার বাহিনীকে পাহারায় বসায়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পাকবাহিনী রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রেল লাইনের উভয় পার্শ্বে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা রেলের ব্রিজগুলো ভেঙ্গে তাদের দমন করেন।
৪ঠা ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী কালুখালির তফাদিয়া গ্রামে ট্রেনে আক্রমণ চালিয়ে মিলিশিয়া বাহিনীকে ঘায়েল করে। ৮ই ডিসেম্বর কালুখালি রেল স্টেশনে রাজাকারদের ওপর আক্রমণ করা হয়। ৯ই ডিসেম্বর সকালে নাজির হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে ৫৩টি রাইফেলসহ রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে। ১০ই ডিসেম্বর কমান্ডার রবের নেতৃত্বে তাঁর বাহিনী মহকুমা শহর রাজবাড়ী দখলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
কালুখালি উপজেলা হানাদারমুক্ত করার লক্ষ্যে হোসেন বাহিনী ১১ই ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকবাহিনীর ক্যাম্পের অদূরে চন্দনা নদীর দিকে অবস্থান নেয়। উত্তরের উলবাড়িয়ার দিকে অবস্থান নেয় মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক প্রধান বিমল প্রামাণিকের গ্রুপ। মাঝরাতে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে মুক্তিযোদ্ধারা এদিন পিছু হটেন। এর দুদিন পর ১৩ই ডিসেম্বর রাতে পাকবাহিনী রাজবাড়ী পালিয়ে যায়। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে থানা ঘিরে ফেলেন এবং এক পর্যায়ে রাজাকার ও মিলিশিয়ারা আত্মসমর্পণ করে। এভাবে ১৩ই ডিসেম্বর কালুখালি উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়।
১৪ই ডিসেম্বর রাজবাড়ী শহরে পাকহবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ত্রিমুখী আক্রমণ চালান। এতে রব বাহিনীর যোদ্ধারাসহ কালুখালির অনেক মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা এদিন হানাদারদের ১৩টি রাইফেল হস্তগত করেন। যুদ্ধে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। রব বাহিনীর দিয়ানত আলী ও ইলিয়াছ আলী গুলিবিদ্ধ হন। দিয়ানত আলী রাজবাড়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২শে ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
কালুখালি উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আব্দুল কুদ্দুস (পিতা ইয়াকুব আলী, কোমরপুর, বোয়ালিয়া; আনসার সদস্য, পাকবাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ কুষ্টিয়া শহর মুক্ত করতে গিয়ে ৩০শে মার্চ শহীদ), দিয়ানত আলী (পিতা আব্দুস সামাদ জোয়ার্দার, চন্দনমৃগী; ১৪ই ডিসেম্বর রাজবাড়ী থানা দখলের যুদ্ধে আহত হয়ে রাজবাড়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২শে ডিসেম্বর মৃত্যু), মকবুল হোসেন (রাইপুর; কালুখালি বিজয়ের মাত্র কয়েকদিন আগে রেলওয়ে স্টেশনে চূড়ান্ত আক্রমণের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ) এবং হাফিজ আলী (কুশোরডাঙ্গি; ঐ)।
কালুখালি উপজেলার মৃগী গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা দিয়ানতকে মৃগী মসজিদের সামনে কবরস্থ করা হয়। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য শহীদ দিয়ানত স্মৃতি সংসদ, শহীদ দিয়ানত স্মৃতি সংঘ ও মৃগী শহীদ দিয়ানত কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং শহীদ দিয়ানত স্মৃতি মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। [আবু রেজা আশরাফুল মাসুদ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড