You dont have javascript enabled! Please enable it!

কালুপুর যুদ্ধ (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

কালুপুর যুদ্ধ (গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় দুবার ১০ই আগস্ট এবং ২৪শে নভেম্বর। প্রথমবারের ১০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। কিন্তু রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় এবং শত্রুবাহিনীর প্রচণ্ড চাপে মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয়বারের যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং তারা পিছু হটে। অপরপক্ষে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার কালুপুরে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিকবার যুদ্ধ হয়। সেসব যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের অনেকে হতাহত হয় এবং তাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। কালুপুর যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী বিজয়ী হয়। তবে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
২রা আগস্ট ভোলাহাট উপজেলার মুশরিভূজা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল কাশিয়াবাড়ি-দুর্গাপুর ওয়াপদা ক্যানেলে অস্থায়ী ডিফেন্স স্থাপন করে। এখান থেকে মুক্তিবাহিনী কালুপুর পর্যন্ত টহল দিতে পারত। ৫ই আগস্ট তাঁরা কালুপুর ঠাকুরের আমবাগানে অস্থায়ী ডিফেন্স স্থাপন করেন। ৯ই আগস্ট রাতে পাকবাহিনী স্পিডবোটে রাজাকার আলবদর সহ এ এলাকায় আসে। মুক্তিবাহিনী দ্রুততার সঙ্গে অবস্থান গ্রহণ করে। এখানে তখন কমান্ডার ইপিআর সুবেদার গফুর মণ্ডলের নেতৃত্বে ৭১ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
১০ই আগস্ট ভোর ৪টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার ওপেন করলে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। এ-যুদ্ধে ১০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। কিন্তু রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় এবং শত্রুবাহিনীর প্রচণ্ড চাপে মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। আর্টিলারির আবদুল মান্নান দুই ইঞ্চি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ
করতে-করতে সহযোদ্ধাদের পিছু হটার সুযোগ করে দেন। এ-যুদ্ধে সুবেদার কুতুব উদ্দিন (মুজাহিদ বাহিনীর ক্যাপ্টেন), ইপিআর সুবেদার কফিল উদ্দিন (জেসিও), ইপিআর সুবেদার মীর মোকাদ্দেশ, আনসার এডভোকেট গোলাম মোস্তফা, আনসার পিপি সৈয়দ আব্দুর রাজ্জাক রাজা প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২২শে আগস্ট ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বোয়ালিয়া স্কুল ক্যাম্পে অপারেশন শেষে কালুপুরে অবস্থান নেন। তাঁরা কালুপুরের আমবাগানে পৌঁছানোর ৩০ মিনিটের মধ্যে হানাদার বাহিনী বোম্বিং করতে-করতে কালুপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। সকাল ৮টা পর্যন্ত গুলি বিনিময়ের পর পাকবাহিনী পিছু হটে বোয়ালিয়ায় ফিরে যায়। এখানে মুক্তিবাহিনীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ-যুদ্ধে দলদলী কোম্পানি কমান্ডার লে. রফিকুল ইসলাম, ট্রপস কমান্ডার ইপিআর হাবিলদার গিয়াস উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম, আনসার পিসি সৈয়দ আব্দুর রাজ্জাক ও জয়নাল আবেদীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বেগুনবাড়ির ইসমাইল হোসেন, আবুল হোসেন, উজাল উদ্দিন, সন্তোষপুরের আশরাফুল হক খালেক, মারফত আলী, সাজ্জাদ আলী, একরামুল হক, মোকবুল হোসেন, আলিনগরের লাল মোহাম্মদ (লালু), বাহার আলী, আকালু, আক্তারুল ইসলাম মন্টু, শিশাটোলার ইসরাইল কমান্ডার প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা এ- যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন।
২৪শে নভেম্বর কালুপুরে আরেক দফা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে সংঘটিত এ-যুদ্ধে ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, লে. বজলুর রশিদ ও লে. কাইউম অংশগ্রহণ করেন। ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর ৬ জন সহযোদ্ধা নিয়ে কাশিয়াবাড়ি থেকে কালুপুর ঠাকুরের আমবাগানে রেকি করতে যান। আমবাগানে পৌঁছানো মাত্র শত্রুবাহিনীর গুলিতে রেকি দলের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান শহীদ হন। পেছনে থাকা মুক্তিযোদ্ধা দল দ্রুত ঠাকুরের আমবাগানে পৌঁছে শত্রুদের বিরুদ্ধে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাকবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ৮ ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা মোখলেসুর রহমান মুকুল মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে মেহেদীপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু ঘটে। এ-যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রচুর ক্ষতি হয় এবং তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে এখানে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। [মাযহারুল ইসলাম তরু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!