You dont have javascript enabled! Please enable it!

কালিয়াকৈর বাজার আক্রমণ (কালিয়াকৈর, গাজীপুর)

কালিয়াকৈর বাজার আক্রমণ (কালিয়াকৈর, গাজীপুর) পরিচালিত হয় ১১ই ডিসেম্বর। এতে বাজারের পাকসেনারা পালিয়ে যায় এবং মুক্তিযোদ্ধারা বাজার থেকে ২৬ জন রাজাকারসহ শান্তি কমিটি-র কুখ্যাত ৪ জন সদস্যকে আটক করেন। পরবর্তীতে তাদের গণআদালতে বিচার করে কিছু রাজাকারের কান কাটা হয় ও শান্তি কমিটির সদস্য (আবু হোসেন সরকার, সিদ্দিক চেয়ারম্যান, তাজুদ্দিন মাস্টার)-সহ কিছু রাজাকারকে হত্যা করা হয় এবং কালিয়াকৈর বাজার শত্রুমুক্ত হয়।
৬ই ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবার পর বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের অবস্থানের ওপর মিত্রবাহিনীর বিমান আক্রমণ জোরদার হয়। বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের সংবাদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও আকাশবাণী থেকে প্রচারিত হচ্ছিল। ইতোমধ্যে কালিয়াকৈর বাজারের আশেপাশে নদীতে ও বিলে মিত্রবাহিনীর বিমান থেকে কয়েক দফা বোমা বর্ষণ করা হয়। কালিয়াকৈরের অদূরে পিরোজালী নামক স্থানে পাকিস্তানি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করা হয় এবং তার পাইলট জনসাধারণের হাতে বন্দি হয়। ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখ বিকেল ৪টায় আফসার উদ্দীন তাঁর বাহিনীর ১৫৭ জন সদস্য নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এ রাতেই তারা কালিয়াকৈর বাজার শত্রুমুক্ত করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা নদীর উত্তর পাশে চাপাইর এবং কিছু মুক্তিযোদ্ধা খালের পূর্বপাশে সৈয়দপুর-জানেরচালায় অবস্থান নিয়ে রাজাকার- পাকসেনাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করবেন এবং কমান্ডারের সবুজ সংকেত পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে তাঁরা আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। সন্ধ্যার কিছু পর মুক্তিযোদ্ধারা গোলাবারুদ ও অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূর্বনির্ধারিত স্থানগুলোতে অবস্থান নেন। এলাকার বাড়িঘর থেকে লোকদের সরে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়। রাত ১০ টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা কালিয়াকৈর বাজারে হানাদারদের বাংকার লক্ষ করে আক্রমণ শুরু করেন। ভোর ৪টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে ব্যাপক গোলাগুলি চলে। এরপর হানাদার বাহিনীর পক্ষ থেকে আর কোনো গুলির শব্দ শুনতে না পাওয়ায় এবং হানাদারদের সার্চলাইট দেখতে না পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা খালের নিকট এগিয়ে আসেন। খাল পার হয়ে ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা কালিয়াকৈর বাজারে প্রবেশ করে দেখেন পাকসেনারা বাজার থেকে পালিয়ে গেছে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিতে থাকেন এবং রাইফেল দিয়ে আকাশে ফাঁকা গুলি করতে থাকেন। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধারা বাজারে প্রবেশ করে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। তাঁরা বাজার থেকে ২৬ জন রাজাকারসহ শান্তি কমিটির কুখ্যাত ৪ জন সদস্যকে আটক করেন। পরবর্তীতে তাদের গণআদালতে বিচার করে কিছু রাজাকারের কান কাটা হয় ও শান্তি কমিটির সদস্য (আবু হোসেন সরকার, সিদ্দিক চেয়ারম্যান, তাজুদ্দিন মাস্টার)-সহ কিছু রাজাকারকে হত্যা করা হয় এবং কালিয়াকৈর বাজার শত্রুমুক্ত হয়। [মো. মোয়াজ্জেম হোসেন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!