You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.01 | কালিয়ান গণহত্যা (সখিপুর, টাঙ্গাইল) - সংগ্রামের নোটবুক

কালিয়ান গণহত্যা (সখিপুর, টাঙ্গাইল)

কালিয়ান গণহত্যা (সখিপুর, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ১লা জুলাই। এতে ১৮ জন নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
সখিপুর থানা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে ও কালিহাতী থানা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে কালিয়ান গ্রামের অবস্থান। কালিয়ান থেকে ৪ কিলোমিটার প্রশস্ত বিল পাড়ি দিলেই বহেড়াতৈল। বহেড়াতৈলেই <আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করার শপথ নিয়েছিলেন এবং বহেড়াতৈলেই কাদেরিরা বাহিনীর প্রথম হেডকোয়ার্টার্স স্থাপিত হয়। অবস্থানগত কারণে পাকবাহিনীর পক্ষে সখিপুর আক্রমণ করা ছিল অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। গাছপালা, টিলায় ঘেরা, বিল-হাওড় অধ্যুষিত সখিপুর ছিল দুর্গম এলাকা। প্রতিমুহূর্তেই হানাদারদের পথ হারানোর আশংকা ছিল। এ কারণে সখিপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সদর দপ্তর স্থাপন ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। কাদেরিয়া বাহিনীকে দমন করার জন্য পাকহানাদাররা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
৩০শে জুন সন্ধ্যায় পাকবাহিনীর একটি গ্রুপ বহেড়াতৈল আক্রমণ করার জন্য কালিয়ান গ্রামের পার্শ্ববর্তী বংশাই নদীর পশ্চিম পাড়ে কাউলজানী নওশেরীয়া হাইস্কুলে অবস্থান নেয়। ১লা জুলাই সকাল সাতটার দিকে কাউলজানী থেকে ৭টি নৌকা নিয়ে হানাদাররা কালিয়ানের দিকে এগুতে থাকে। উদ্দেশ্য বহেড়াতৈল অপারেশন। পূর্ব থেকেই বহেড়াতৈলের নিরাপত্তার জন্য কালিয়ান গ্রামের টিলার ওপর মুক্তিযোদ্ধারা ২০-২৫টি বাংকারে অবস্থান করছিলেন। কাউলজানীতে হানাদারদের অবস্থানের সংবাদ শুনে কালিয়ানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা আরো সতর্ক অবস্থান নেন।
হানাদারভর্তি নৌকাগুলো কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে এগুতে থাকলে কালিয়ানের টিলায় অবস্থানরত কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার খন্দকার মুসার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ার গর্জে ওঠে। কিছু সময় গুলি বিনিময়ের পর হানাদারদের আক্রমণের তীব্রতায় মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে বাংকার ছেড়ে পিছু হটেন। অতঃপর পাকসেনারা কালিয়ান গ্রামে প্রবেশ করে গণহত্যা চালিয়ে ১৮ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। পুরো গ্রামটিতে অগ্নিসংযোগ করে বহেড়াতৈলের দিকে আর অগ্রসর না হয়ে চলে যায়। কালিয়ান গণহত্যায় শহীদরা হলেন- জাবেদ আলী শিকদার (পিতা তোয়াজ শিকদার), দুলাল মিঞা (পিতা কাজী শরীফ হোসেন), ছন্টু মিঞা (পিতা ছফর উদ্দিন), আব্দুল হাই (পিতা আফাজ উদ্দিন), লাল মামুদ (পিতা কাজিম উদ্দিন), আব্দুল জলিল (পিতা মাধু শিকদার), ছানোয়ার হোসেন (পিতা তোমেজ উদ্দিন), বাচ্চু মিঞা (পিতা আছান উল্যাহ), ইয়াছিন আলী (পিতা আছান উল্যাহ), বেলায়েত হোসেন (পিতা কোরবান আলী), আব্দুল খালেক (পিতা কেরু মিঞা), মুন্সী রমেজ উদ্দিন (পিতা মকরম আলী), জোনাব আলী সরকার (পিতা তরিপ সরকার), হাবিবুর রহমান (পিতা রহিজ উদ্দিন), আরজু মিঞা (পিতা মোহর আলী), ইসমাইল হোসেন (পিতা আব্দুল আজিজ), হৃদয় চন্দ্র সরকার (পিতা মানিক চন্দ্ৰ সরকার) ও আব্দুছ ছালাম (পিতা সাহেব আলী)। সেদিন পাক হানাদারদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু অবস্থায় এখনো বেঁচে আছেন কালিয়ান গ্রামের হারু মিয়া, লেবু মিয়া, নয়া মিয়া ও ইঞ্জিরন বিবি। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড