You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.09 | কালিয়ানী যুদ্ধ (ফরিদপুর, পাবনা) - সংগ্রামের নোটবুক

কালিয়ানী যুদ্ধ (ফরিদপুর, পাবনা)

কালিয়ানী যুদ্ধ (ফরিদপুর, পাবনা) সংঘটিত হয় ৯ই নভেম্বর। এ-যুদ্ধে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। পক্ষান্তরে বেশ কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয়।
পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার রুকনাই নদীর তীরবর্তী এলাকায় কালিয়ানী গ্রাম অবস্থিত৷ ৯ই নভেম্বর বিকেলে এ গ্রামে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ফরিদপুর এবং সাঁথিয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা এ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
ঘটনার দিন বিকেলে পাকসেনাদের একটি দল বাঘাবাড়ী ঘাট থেকে প্রচুর গোলা-বারুদসহ পায়ে হেঁটে সাঁথিয়া থানার দিকে যাত্রা করে। পাকসেনারা নাকডেমরা গ্রামে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গে-সঙ্গে এ খবর পেয়ে যান। সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ অতর্কিতে পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকসেনারা দিক পরিবর্তন করে ফরিদপুর উপজেলার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। রুকনাই নদী পার হওয়ার জন্য তারা নৌকায় উঠলে সাঁথিয়া এবং ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালান। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। এক সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গোলা-বারুদ ফুরিয়ে গেলে তাঁরা পিছু হটে কালিয়ানী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন যায়গায় আশ্রয় নেন। স্থানীয় রাজাকার-দের সহায়তায় পাকসেনারা লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিতে- খুঁচিয়ে হত্যা করে। তারা মুক্তিযোদ্ধাসহ কিছু সাধারণ মানুষকে রুকনাই নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়। বিজয়োল্লাসে পাকসেনারা রাজাকারদের নিয়ে নৌকায় উঠে নদী পার হতে থাকে। এ-সময় লুকিয়ে থাকা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গুলি করে নৌকাটি ডুবিয়ে দেন। এতে কয়েকজন পাকসেনা নদীতে ডুবে মারা যায়। ফলে পাকসেনারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে পার্শ্ববর্তী গোলকাটা, দিঘুলিয়া ও রতনপুর গ্রামে প্রবেশ করে বাড়ি-ঘর অগ্নিসংযোগ করে। তারা দালালদের সহায়তায় এসসব গ্রামে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে নির্মমভাবে হত্যা করে। কালিয়ানী যুদ্ধে কয়েকজন পাকসেনা হতাহত হয় এবং সাঁথিয়া উপজেলার নজরুল ইসলাম চাঁদু (কাশিয়াবাড়ী), আনোয়ার হোসেন মিন্টু (পাটগাড়ী), নাকডেমরা গ্রামের আব্দুস সবুর, টগর আলী খান লোদী, আব্দুল আওয়াল (বারোয়ানী), জয়গুরু (পানিসাইল) ও মজিবর রহমান (বানিয়াবহল)-সহ আরো কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। [মো. আশরাফ আলী]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড