You dont have javascript enabled! Please enable it!

কালিহাতী ব্রিজ যুদ্ধ (কালিহাতী, টাঙ্গাইল)

কালিহাতী ব্রিজ যুদ্ধ (কালিহাতী, টাঙ্গাইল) সংঘটিত হয় ১৯শে এপ্রিল। এতে একজন অফিসারসহ ১০-১৫ জন পাকসেনা নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। পক্ষান্তরে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৭-৮ জন আহত হন।
টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে কালিহাতী উপজেলাধীন টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে কালিহাতী ব্রিজের অবস্থান। অসহযোগ আন্দোলন-এর সময় টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহে পাকবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল। এই রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টার্স ছিল জয়দেবপুর রাজবাড়িতে। বাঙালি এ রেজিমেন্ট মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এর ফলে ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পাকবাহিনীর অনুগত কোনো সেনাদল না থাকায় এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুনভাবে তাদের সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ঢাকা ব্রিগেডের অধীনস্থ এ অঞ্চলে পাকবাহিনীর ৩১ বালুচ রেজিমেন্টকে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। ৩১ বালুচ রেজিমেন্ট প্রথমে টাঙ্গাইল এবং পরবর্তীতে ময়মনসিংহে অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
৩রা এপ্রিল পাকবাহিনীর একটি বিশাল গ্রুপ ঢাকা থেকে জয়দেবপুর হয়ে টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়ার পথে মির্জাপুরের গোড়ান-সাটিয়াচড়া নামক স্থানে ইপিআর, ছাত্র ও জনতার প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। সেখানে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর প্রতিরোধযোদ্ধারা পিছু হটলে পাকবাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করে। পাকবাহিনী টাঙ্গাইল থেকে যাতে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হতে না পারে, সেজন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে কালহাতী ব্রিজে তাদের বাধা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
কালিহাতী থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ- নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এমপিএ-র নেতৃত্বে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে গোড়ান-সাটিয়াচড়া যুদ্ধে ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছিয়ে পড়া ইপিআর সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করে পুনরায় পাকবাহিনীকে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইপিআর-এর নেতৃত্বে ছিলেন সুবেদার জিয়াউল হক। মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য ছিল কালিহাতী ব্রিজ ধ্বংস করে পাকবাহিনীর অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। প্রাথমিক অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা হাতুরী-শাবল দিয়ে ব্রিজটি ভাঙ্গার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ভারত থেকে ব্রিজ ধ্বংসের এক্সপ্লোসিভ আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু এক্সপ্লোসিভ পৌঁছার পূর্বেই পাকবাহিনীর টাঙ্গাইল থেকে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হওয়ার সংবাদ পেয়ে তাদের প্রতিহত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের দুপাশে অবস্থান নেন। ১৯শে এপ্রিল দুপুরের দিকে পাকবাহিনী তাদের কনভয়সহ ব্রিজটি অতিক্রম করার চেষ্টা করলে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে কয়েকটি রকেট লাঞ্চার ও এলএমজি-র সাহায্যে তাদের ওপর আক্রমণ চালান। পাকবাহিনীও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। প্রায় দুঘণ্টাব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকবাহিনীর একজন অফিসারসহ ১০-১৫ জন সেনাসদস্য নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। তাদের ৪-৫টি গাড়ি বিধ্বস্ত হয়। পক্ষান্তরে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৭-৮ জন আহত হন। [শফিউদ্দিন তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!