You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে কালীগঞ্জ উপজেলা (গাজীপুর) - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধে কালীগঞ্জ উপজেলা (গাজীপুর)

কালীগঞ্জ উপজেলা (গাজীপুর) ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর উত্তরে কাপাসিয়া, দক্ষিণে রূপগঞ্জ ও পলাশ, পূর্বে পলাশ এবং পশ্চিমে রূপগঞ্জ, গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলা। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ- সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ১লা মার্চ স্থগিত করলে সারা দেশের ন্যায় কালীগঞ্জের মানুষও বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। তারা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করে। ৫ই মার্চ টঙ্গী শিল্প-নগরীর কল-কারখানা বন্ধ করে শ্রমিক-জনতা মিছিল করার জন্য একত্রিত হলে অবাঙালি ইপিআর সদস্যদের গুলিতে চারজন শ্রমিক নিহত হয়। ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য কালীগঞ্জ থেকে কয়েক হাজার মানুষ বাস-ট্রাকে করে ঢাকা আসে। ১৯শে মার্চ জয়দেবপুর প্রতিরোধ যুদ্ধ-এ কালীগঞ্জের অনেকে অংশগ্রহণ করেন। ৫ই মার্চ টঙ্গী এবং ১৯শে মার্চ জয়দেবপুরের সশস্ত্র সংঘর্ষের পর সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে সারাদেশে বিদ্রোহের দাবানল দ্রুত শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বত্র একটি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চ গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ-নিরস্ত্র জনগণের ওপর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালায়। তাদের অকস্মাৎ আক্রমণে মানুষ প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লেও শীঘ্রই ঘুরে দাঁড়ায়। এলাকার ছাত্র-যুবকরা সংগঠিত হয়ে দলে-দলে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে। কালীগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক ছিলেন ময়েজ উদ্দিন এমপিএ। এছাড়া নেভাল সিরাজ (নরসিংদী), এডভোকেট হারিছ আহমেদ (রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ নেতা), এম এ আজিজ, তমিজউদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, আলী হোসেন তালুকদার, ফেরদাউস (ঢাকা), বদরুজ্জামান খসরু, আবদুল বাতেন মোল্যা, মজিদ, খন্দকার মঞ্জুর, সিরাজুল ইসলাম, সিরাজ উদ্দিন, হাসমত উল্লাহ, আখতারুজ্জামান মোল্লা, কে বি এম মফিজুর রহমান খান (রূপগঞ্জ, বর্তমানে কালীগঞ্জ), সৈয়দ বেলাল হোসেন, আকরাম হোসেন, মাহাবুবর রহমান খান বাবুল, মো. নজরুল ইসলাম মিলন, কিরণ রোজারিও, রেজাউল করিম হুমায়ুন ওরফে হুমায়ুন মাস্টার, ছাত্রনেতা আখতারুজ্জামান (স্বাধীনতা পরবর্তী ডাকসু-র ভিপি, সাবেক এমপি ও বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা) প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করা ও তা পরিচালনায় উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখেন। উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ ও রূপগঞ্জ পাশাপাশি হওয়ায় বিশেষ করে কালীগঞ্জের সন্নিকটস্থ রূপগঞ্জ থানার অনেকে উভয় স্থানে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে ভূমিকা পালন করেন।
কালীগঞ্জ শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ঢাকার অতি নিকটে অবস্থিত। এর ওপর দিয়ে প্রবাহিত রেলপথ ঢাকাকে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার সঙ্গে যুক্ত করেছে। রেল ও নৌ-পথের কারণে কালীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পরই কালীগঞ্জের রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ছাত্র- যুবক মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সদর থেকে প্রায় ১৫ কিমি উত্তরে অবস্থিত নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের নরুন এবং পুনসহিতে আলী হোসেন তালুকদারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এসব ক্যাম্পে আমিরুল ইসলাম এবং আবদুল বাতেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। পরবর্তীতে এখানকার অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভারতের আগরতলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালে আনোয়ার হোসেন ছিলেন কালীগঞ্জ থানার প্রশাসনিক প্রধান। কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টিসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়ন নিরাপদ এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। পুবাইল থেকে নলছাটা হয়ে একবার পাকবাহিনী পায়ে হেঁটে নাগরীর পাঞ্জোরা পর্যন্ত এসেছিল। খ্রিস্টান মিশনের ফাদার এখানে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই জানালে তারা ফিরে যায়। নাগরী হাইস্কুল ও গীর্জা বাজারে শরণার্থী ক্যাম্প খোলা হয়। কালীগঞ্জ, ঘোড়াশাল, বাইরা, পূবাইল, জয়দেবপুর, কয়েরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নাগরী ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নেয়। মিশনের ফাদারের নেতৃত্বে প্রায় লক্ষাধিক শরণার্থীর আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ফাদার গ্যাটার (আমেরিকা) ক্যাম্পের চিফ এবং রেজিন কুরাইয়া সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধা আলম মাস্টার রিলিফ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ডা. আজগর হোসেন পাঠান (রূপগঞ্জ, বর্তমান কালীগঞ্জ; নায়ক ফারুকের পিতা)-এর বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ছিল। তাঁর কন্যা ঝুনু মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন। এছাড়া আরো যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসেন, তারা হলেন- রূপগঞ্জের শাহে আলম, মাওলানা শফিউদ্দিন, আব্দুস সাত্তার মুন্সি, এবাদুল্লাহ প্রমুখ।
গাজীপুর জেলা ৩নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কালীগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন এফএফ কোম্পানি কমান্ডার এম এ আজিজ মাঝি, বিএলএফ – গ্রুপ কমান্ডার আলী হোসেন তালুকদার, বিএলএফ টুআইসি মাহাবুবুর রহমান খান বাবুল, এফএফ গ্রুপ কমান্ডার বদরুজ্জামান খসরু, আব্দুল বাতেন মোল্যা, মো. সাইদুল হক ফরহাদ, মো. নজরুল ইসলাম মিলন, অরুণ আব্রাহাম ডি কস্তা, খন্দকার মঞ্জুর, মো. তোতা মিয়া, আব্দুল লতিফ, মাজহারুল দাদু, জয়নাল আবেদীন, এফএফ সেকশন কমান্ডার মীর মোহাম্মদ আলী, নাছির উদ্দিন ভূঁইয়া, সিরাজ উদ্দিন, সমির উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, আনোয়ারুল হক বাচ্চু, সিরাজুল হক এবং বিএলএফ-এর নারায়ণগঞ্জ এলাকার আঞ্চলিক কমান্ডার কে বি এম মফিজুর রহমান খান (জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগ-এর সাবেক সভাপতি ও ৭১-এ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য) ও সেকশন কমান্ডার রেজাউল করিম ভূঁইয়া। ছাত্রনেতা আখতারুজ্জামান (রূপগঞ্জ, বর্তমানে কালীগঞ্জ) ভারতের দেরাদুনে ট্রেনিং নিয়ে মুজিব বাহনী-র ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োজিত হন এবং সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ফিরে এসে মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডের অধীনে কালীগঞ্জ, নরসিংদী ও রূপগঞ্জ অঞ্চলে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২৫শে জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য নলছাটা রেলব্রিজ, বান্দাখোলা রেলব্রিজ ও নাগরীর তিরিয়ায় বিদ্যুৎ টাওয়ার প্রভৃতি স্থাপনা ধ্বংস করে।
২৫শে জুলাই পাকিস্তানি বাহিনী কালীগঞ্জ উপজেলায় অনুপ্রবেশ করে পুবাইল চৌধুরী বাড়ি, ঘোড়াশাল, আড়িখোলা রেলস্টেশন, ভাদার্তী গ্রামের ওয়াপদা এবং তুমুলিয়া রেলব্রিজের সন্নিকটে বালিগাঁও ডাঙ্গি রেলব্রিজ সংলগ্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে।
গাজীপুর দখলের পর পাকিস্তানি বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ প্রভৃতি পাকিস্তানপন্থী সাম্প্রদায়িক দলের নেতা-কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে সকল উপজেলায় শান্তি কমিটি রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠিত হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা শান্তি কমিটির সদস্যরা হলো- ড. রশিদুজ্জামান (পিতা বদিউজ্জামান মাস্টার, ভাদার্তী; স্বাধীনতার পর নাগরিকত্ব হারায়), মো. রফিজ উদ্দিন (ভাদার্তী), আব্দুল ওহাব খান (দড়িসোম), সিরাজ উদ্দিন ভাওয়ালী (পিতা রুকন উদ্দিন সরকার, জাঙ্গালীয়া), নোয়াব আলী ভূঞা (কাউলিতা; যুদ্ধাপরাধী), রহম আলী মেম্বার (পিতা নিয়ত আলী প্রধান, বড়গাঁও, মোক্তারপুর), চেয়ারম্যান নোয়াব আলী (পিতা সাধু প্রধান, কালীগঞ্জ), মফিজ উদ্দিন (পিতা মনুরুদ্দিন, কালীগঞ্জ), মোস্তফা মিয়া (পিতা আছমত আলী, কালীগঞ্জ), মহিউদ্দিন মিয়া (মুনশুরপুর), হাছি উদ্দিন দেওয়ান (ভাদার্তী), শফি উদ্দিন ওরফে নাজক মিয়া (একুতা, মোক্তারপুর), মো. জালাল উদ্দিন (চেয়ারম্যান, মোক্তারপুর), শিশু মিয়া (মোক্তারপুর), অধ্যাপক ইউসুফ আলী (বড়গাঁও, মোক্তারপুর), আব্দুল মজিদ পালোয়ান (বড়গাঁও, মোক্তারপুর), ডা. আব্দুল জব্বার (নরুন, জাঙ্গালীয়া), ইছলামুদ্দিন দফাদার (চুপাইর, জামালপুর), আলা উদ্দিন ভূঞা (চেয়ারম্যান, কলুন, বক্তারপুর), হাবিবুর রহমান ওরফে হবি মেম্বার (বক্তারপুর), আব্দুল আউয়াল সিকদার (১৯৬২ সালে প্রাদেশিক এবং ১৯৬৫ সালে জাতীয় পরষিদ সদস্য) (ভাটিরা, বক্তারপুর), কুদ্দুছ পণ্ডিত চেয়ারম্যান (জুগলী, বাহাদুরসাদী), জমির উদ্দিন মৌলভী (ঈশ্বরপুর, বাহাদুরসাদী), আব্দুল কুদ্দুছ চেয়ারম্যান (নগরভেলা, নাগরী), রমিজ উদ্দিন সিকদার (পানজোড়া, নাগরী), মো. হেমায়েত উদ্দিন খান (দড়িসোম), এডভোকেট আবু সাঈদ (ডেমরা, মোক্তারপুর) প্রমুখ।
রাজাকার কমান্ডার শাজাহান (পিতা আহাম্মদ আলী, বড়গাঁও)-কে সভাপতি এবং আলাউদ্দিন (কালীগঞ্জ)-কে সম্পাদক করে কালীগঞ্জে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এছাড়া উপজেলার কুখ্যাত অন্যান্য রাজাকাররা হলো- গিয়াস উদ্দিন (ব্রাক্ষণগাঁও, বক্তারপুর), আব্দুল বাতেন পালোয়ান (বড়গাঁও, মোক্তারপুর), সফি উদ্দিন সফি (বড়গাঁও, মোক্তারপুর), আমজাদ হোসেন ওরফে সাদ’ত আলী (বড়গাঁও, মোক্তারপুর), নুরুল ইসলাম (মেন্দিপুর, জামালপুর), সাফা (বোয়ালী, তুমলিয়া), আলাউদ্দিন দেওয়ান (ভাদার্তী), রশিদ মিয়া (বাদ্যকরপাড়া, ভাদার্তী), ফজল মিয়া (ভাদার্তী), শুভ (মুনসেফপুর), আ. মোতালেব (মুনসেফপুর), সেকান্দর আলী (মুনসেফপুর), মাওলানা আমাতুল্লাহ (ঈশ্বরপুর), নুরুল ইসলাম (খাগরারচর, জামালপুর), হাছেন নুরী (মানিকপুর, তুমলিয়া), অধ্যাপক কফিল উদ্দিন (ভাটিরা, বক্তারপুর), শেখ মোতাহার হোসেন (বেরুয়া, বক্তারপুর), আ. কাদের (মূলগাঁও), আ. আজিজ (দুর্বাটি), আবুল কাসেম (দুর্বাটি), আমানত উল্লাহ (ঈশ্বরপুর, বাহাদুরসাদী), শেখ মোতাহার হোসেন (বেরুয়া, বক্তারপুর), আলাউদ্দিন (বক্তারপুর), মকবুল হোসেন (ব্রাক্ষণগাঁও, বক্তারপুর), মো. সিরাজ উদ্দিন (ব্রাহ্মণগাঁও), কুসুম মিয়া (ফুলদী, বক্তারপুর), তমিজউদ্দিন (ব্রাক্ষণগাঁও, বক্তারপুর), ইউনুছ আলী দফাদার (সাওরাইদ, মোক্তারপুর), মিয়া চাঁন চৌকিদার (মোক্তারপুর), হাবু (ভাদার্তী), আব্দুল কাদের (মুনসেফপুর), মো. সোবাহান খান (কুলথুন), সামসুদ্দিন (দেওতলা), তোফজ্জল (খাগড়ারচর), ইউসুফ ওরফে আরমান (খাগড়ারচর, জামালপুর), জালাল উদ্দিন শেখ (খাগড়ারচর, জামালপুর), আব্দুল হেকিম বাগমার (ভাটিরা, বক্তারপুর), রফিক মাস্টার (বহর আলী, চৈতারপাড়া) প্রমুখ। শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পাকবাহিনীর নির্যাতন, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে সহায়তা করে।
কালীগঞ্জে পাকবাহিনীর অনুপ্রবেশের পর স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় তারা হত্যা, গণহত্যা, নারীনির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন শুরু করে। তারা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং লুণ্ঠন করে। এ-সময় তাদের হাতে নারীনির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। ১লা ডিসেম্বর তারা খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিলস গণহত্যা চালায়। এতে ১৪০ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন। ঈশ্বরপুর যুদ্ধের পর পাকবাহিনী জামালপুরের জেলে সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে, এম এস আজিজ, মোশারফ বিএসসি, খলাপাড়ার হাজী আব্দুল জব্বার, ডা. শুক্কুর আলী, ব্রজেন্দ্র ভক্ত, ক্ষিতীশ নন্দী, লাল মিয়া মেম্বার, আনোয়ারা বেগম প্রমুখের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তারা চক জামালপুরের ফিরোজ মিয়া এবং সমা ঘোষকে গুলি করে হত্যা করে। হানাদার বাহিনী ২৭শে নভেম্বর – সাতানীপাড়া খাকুরভিটা গণহত্যা- চালায়। এতে রাঙ্গামাটিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মুক্তিযোদ্ধা অনিল ডি কস্টাসহ ৮ জন শহীদ হন। হানাদাররা রাঙ্গামাটিয়ার মুক্তিযোদ্ধা চিত্ত ফ্রান্সিস রিবেরুর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১৫ই ডিসেম্বর তারা পুবাইল যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পিপুলিয়া গ্রামে গণহত্যা চালায়। পিপুলিয়া গণহত্যা-য় ১০ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। কালীগঞ্জ উপজেলায় পাকবাহিনীর ক্যাম্প ছিল তাদের নির্যাতনকেন্দ্র ও বন্দিশিবির।
উপজেলার খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিলস গণহত্যায় শহীদদের মিলের অভ্যন্তরে গণকবরে সমাহিত করা হয়। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্জয় ঘাঁটি হিসেবে গড়ে ওঠে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার বনাঞ্চল, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ ও কালিয়াকৈর থানার প্রত্যন্ত অঞ্চল। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নদীনালা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিভক্তির ফলে এসব অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ছিল সুদৃঢ়। এসব অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনার সুযোগ ছিল অনেক বেশি।
কালীগঞ্জ উপজেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি যুদ্ধ, আক্রমণ এবং অপারেশন পরিচালনা করেন। সেগুলোর মধ্যে জামালপুর বাশাইর বাজার যুদ্ধ, পুবাইল যুদ্ধ, ঈশ্বরপুর যুদ্ধ- আড়িখোলা রেল স্টেশন যুদ্ধ -, সোমবাজার খাল যুদ্ধ-, বালিগাঁও ডাঙ্গী রেল ব্রিজ যুদ্ধ, ঘোড়াশাল যুদ্ধ ও কালীগঞ্জ থানা আক্রমণ উল্লেখযোগ্য। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি উলুখোলায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উলুখোলা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিক, আবদুল হাকিম, মো. বশিরউদ্দিন, মো. মোশাররফ হোসেন, নূর আলম, মো. তরিকুল ইসলাম প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
এম এ আজিজের নেতৃত্বে তিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা (এফএফ) ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কালীগঞ্জে ফিরে এসে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করেন। আগস্ট মাসে গ্রুপ কমান্ডার তোতা (দুর্বাটি)-র নেতৃত্বে মাহাবুবুর রহমান বাবুল, কাদের প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধারা কালীগঞ্জ থানা আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। তাঁরা থানার মধ্যের বটগাছে বোমা মেরে আগুন লাগিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। কয়েকদিন পর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন তালুকদার, ফেরদৌস ও মঞ্জুর খন্দকারের নেতৃত্বে কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা কালীগঞ্জ থানা আক্রমণ করে দখল করে নেন। পাকবাহিনী পালিয়ে ভাদার্তী ওয়াপদা ক্যাম্পে চলে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকবাহিনী পুবাইলের দিকে পালিয়ে যায়।
১৮ই নভেম্বর সোমবাজার খালের মুখে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। প্রচণ্ড গুলি বিনিময়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের ওয়াপদা পাওয়ার হাউস ক্যাম্প এবং আড়িখোলা রেলওয়ে ক্যাম্প দখল করেন। কালীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিমি উত্তর-পূর্ব দিকে খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিলস অবস্থিত। ১লা ডিসেম্বর মিলস সংলগ্ন জামালপুর বাশাইর বাজারে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন গ্রুপ কমান্ডার ফরহাদ এবং এম এ আজিজ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকবাহিনী পিছু হটে এবং বিকেলে ন্যাশনাল জুট মিলসে প্রবেশ করে গণহত্যা চালায়। জুট মিলস গণহত্যার পর ঈশ্বরপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এতে পাকবাহিনীর কয়েকজন সদস্য নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাফর (ঈশ্বরপুর) শহীদ হন।
পাকিস্তানি বাহিনীর চলাচল বন্ধ করতে ২৪শে নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা এন্ড্রু ডি কস্তা, সুনীল, শান্ত রোজারিও, আই ডি কস্তা প্রমুখ কালীগঞ্জের রাঙামাটিয়ার আশকোনা রেলব্রিজ এবং ২৬শে নভেম্বর দড়িপাড়া রেলব্রিজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস করেন। ১২ই ডিসেম্বর নেভাল সিরাজ ও এম এ আজিজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঘোড়াশাল পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকবাহিনী ঘোড়াশাল ক্যাম্পে অনেকটা আবদ্ধ হয়ে পড়ে। -মিত্রবাহিনী- বিমান থেকে পাকসেনা ক্যাম্পে বোম্বিং শুরু করলে তারা লঞ্চযোগে শীতলক্ষ্যা নদীপথে ডেমরার দিকে পালিয়ে যায়।
কালীগঞ্জ ও টঙ্গীর মধ্যবর্তী স্থানে পুবাইল অবস্থিত। পুবাইল চৌধুরী বাড়িতে আর্মি ক্যাম্প ছিল। পূর্বদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকবাহিনী পিছু হটে পুবাইলে জড়ো হয়। ১৪ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর পুবাইল ক্যাম্প আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়, যা ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের আলী হোসেন গ্রুপ ও বদরুজ্জামান খসরু গ্রুপ এ-যুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত হয় এবং মিত্রবাহিনীর দুজন শিখ সৈন্য শহীদ হন। এছাড়া হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আলী হোসেন তালুকদার, আব্দুল বাতেন এবং সেকশন কমান্ডার তমিজউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের আড়িখোলা রেল স্টেশন যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা আড়িখোলা স্টেশন দখল করতে না পারলেও কিছুদিনের মধ্যে পূর্বদিক থেকে যৌথবাহিনী কালীগঞ্জ আক্রমণ করলে পাকবাহিনী স্টেশন ছেড়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসমত আলী বান্দাখোলা আসকার বাড়ি ব্রিজ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেন। বান্দাখোলার কাদিরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বান্দাখোলা ব্রিজের নিচে বোমা স্থাপন করে পাকসেনা বহনকারী ট্রেন ধ্বংস করেন। মুক্তিযোদ্ধা কাদের, তোতা, বাবুল প্রমুখ এ অভিযানে অংশ নেন। বান্দাখোলা ব্রিজ ধ্বংস হওয়ায় পাকসেনাদের যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বান্দাখোলা ও তুমুলিয়া গ্রামের মধ্যে অবস্থিত তুমুলিয়া রেল ব্রিজে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। তুমুলিয়া রেল ব্রিজে পাকসেনাদের ক্যাম্প ছিল। তারা ব্রিজের দুপাশে ব্যাংকার করে ব্রিজ পাহারা দিত। রেল ব্রিজের উত্তরে সাধুর হাটে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে গিয়ে পাকসেনারা অত্যাচার- নির্যাতন করার সময় হযরত আলী ও মোতালিব নামে দুজন যুবক ছুরিকাঘাতে দুজন পাকসেনাকে হত্যা করেন। পাকসেনারা ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে এবং অত্র এলাকা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
বালিগাঁও ডাঙ্গী রেল ব্রিজের উভয় পার্শ্বে পাকসেনাদের ক্যাম্প ছিল। সিরাজুল ইসলাম (বিএলএফ)-এর নেতৃত্বে ডাঙ্গী রেল ব্রিজে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ-যুদ্ধে আব্দুল হাই, ইকবাল হোসেন পনির, মেছবাহ উদ্দিন, আলী হোসেন প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে একজন রাজাকার আহত হয়।
পূবাইল থেকে প্রায় ২ কিমি পূর্বে নলছাটা ব্রিজ অবস্থিত। এ ব্রিজ রক্ষার জন্য এখানে পাকসেনাদের ক্যাম্প ছিল। আবুল কাশেম খান মহন টঙ্গী থেকে আগত পাকসেনা বহনকারী একটি ট্রেন বিস্ফোরক দিয়ে নলছাটা ব্রিজে ধ্বংস করে দেন। মুক্তিযোদ্ধারা নগরবালা কুদ্দুস চেয়ারম্যানের বাড়ি আক্রমণ করেন। রূপগঞ্জ থানার ওসি এ বিষয়টি তদন্ত করে নৌকাযোগে বালু নদী দিয়ে ফেরার পথে হাটখোলা বিহাড্ডা গ্রামে পৌঁছলে আবুল কাশেম খান ও জয়নাল গ্রুপ অপারেশন চালিয়ে ওসির নৌকা ডুবিয়ে দেয়। নৌকাডুবিতে ওসি, পুলিশ কনস্টেবল, রাজাকারসহ ১২ জন নিহত হয়। এ-সময় দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে বিপর্যস্ত পাকিস্তানি বাহিনী ট্রেনযোগে ঢাকার দিকে পালাতে থাকে। পার্শ্ববর্তী পুবাইল রেলস্টেশনে ১৩ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনা বোঝাই একটি ট্রেনে আক্রমণ করলে বেশকিছু পাকসেনা নিহত হয়। চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকবাহিনী পার্শ্ববর্তী ঘোড়াশাল পাকসেনা ক্যাম্পে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ এবং মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় হানাদাররা আতঙ্কিত হয়ে নদীপথে ডেমরার দিকে পালিয়ে যায়। ১২ই ডিসেম্বর কালীগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়। কালীগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- হোসেন মোল্লা (পিতা হাবিজ উদ্দিন মোল্লা, জামালপুর), মো. নাজিম উদ্দিন (পিতা বেলায়েত আলী শেখ, ছৈলাদী, জামালপুর), মো. হারিছুল হক (পিতা ইদ্রিস আলী, ডেমরা, মোক্তারপুর), মো. ছাদেক মিয়া (পিতা মো. মিজানুর রহমান, ডেমরা, মোক্তারপুর), সামসুউদ্দিন আহম্মেদ (পিতা মো. জলি নেওয়াজ, দিঘুয়া, মোক্তারপুর), আব্দুল গাফফার (পিতা মো. ইসমাইল শেখ, একুতা, মোক্তারপুর), সোলাইমান ভূঞা (পিতা হাজী মুছা আলী ভূঞা, একুতা, মোক্তারপুর), বাবুল গড ফ্রে পেরেলা (পিতা গ্রাবিয়েল, উলুখোলা, নাগরী), আস্থানী পিউরিফিকেশন (পিতা তারু পিউরিফিকেশন, করান, নাগরী), অগাস্টিন পেরেরা (পিতা সিমন পেরেরা, মঠবাড়ি, নাগরী), অনিল ডি কস্টা (পিতা মনাই কস্টা, রাঙামাটিয়া), মো. মোজাফর ভূঞা (পিতা আহাদ বক্স, ঈশ্বরপুর, বাহাদুরসাদী), শেখ মো. আজিজ (পিতা কালিমুদ্দিন শেখ, ঘোনাপাড়া), আবদুল মোতালিব (পিতা জনসর আলী, মুনসেফপুর), আবু হানিফ আকন্দ (পিতা আবদুল হালিম আকন্দ, দেওতলা, জাঙ্গালীয়া), এ কে এম ফজলুর রহমান ভূঁইয়া মোক্তার (পিতা মৌলবী আবদুল ছালাম ভূঁইয়া, টিওরী, তুমলিয়া), স্যাপার আব্দুল মজিদ (পিতা মনির উদ্দিন, বড়গাঁও, মোক্তারপুর), সিপাহি আরমান আলী (পিতা মফিজ উদ্দিন, সাওরাইদ, মোক্তারপুর), আবদুল কাদের (পিতা সৈয়দ বক্স, বাঙ্গালগাঁও, জাঙ্গালীয়া), সিপাহি আবদুল মোতালেব (পিতা আবুল ফজল, জামালপুর), সিপাহি মো. সিরাজুল হক (পিতা আবদুল ছামাদ, চরছৈলাদী, জামালপুর) এবং ইপিআর হাবিলদার আতিকুর রহমান (পিতা সাদত আলী খান, ফুলদী, বক্তারপুর)।
কালীগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ/মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিলস গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ময়েজ উদ্দিন এমপিএ (স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৭ সালে শহীদ) স্মরণে শহীদ ময়েজ উদ্দিন অডিটোরিয়াম, শহীদ ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও শহীদ ময়েজ উদ্দিন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তাঁকে ২০০১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোফাখখর হোসেন মোল্লা স্মরণে ঘোড়াশাল ব্রিজ থেকে দোলন বাহার পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। শহীদ রবি ফ্রান্সিস কস্তা স্মরণে দড়িপাড়া থেকে রাঙামাটিয়া পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ স্মরণে আওড়াখালি বাজার থেকে দেওতলা পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। [মু. নাজমুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড