কালিকাপ্রসাদ রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (ভৈরব, কিশোরগঞ্জ)
কালিকাপ্রসাদ রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন (ভৈরব, কিশোরগঞ্জ) পরিচালিত হয় অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে। এতে বেশ কয়েকজন রাজাকার- নিহত হয় এবং তাদের ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে।
ভৈরব উপজেলার উত্তরে কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের কালিকাপ্রসাদ গ্রামের অবস্থান। বিকল্প কোনো রেল লাইন না থাকায় ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে কালিকাপ্রসাদ রেলস্টেশন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সে-সময় পাকবাহিনী ও রাজাকার বাহিনী মিলিতভাবে ভৈরবের প্রত্যেকটি বড় ব্রিজ ও রেলওয়ে ব্রিজের গোড়ায় পাহারা বসায়। পাশাপাশি রেল লাইনের ওপর নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করে যাতে ভৈরবের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল, বিশেষ করে রায়পুরা থেকে কেউ ভৈরবে প্রবেশ করতে না পারে। কালিকাপ্রসাদ গ্রামে গাজীরটেক ব্রিজের গোড়ায় রাজাকারদের একটি ক্যাম্প ছিল। ক্যাম্পের রাজাকাররা কালিকাপ্রসাদ রেলস্টেশন ও গাজীরটেক ব্রিজের মধ্যে ডিউটি করত এবং কালিকাপ্রসাদ গ্রামের মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাত ও লুটপাট করত। একদিন পাকবাহিনীর একটি দল ক্যাম্পের রাজাকারদের নিয়ে কালিকাপ্রসাদ গ্রামে প্রবেশ করে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পলায়নরত লোকজনের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী নিহত হয়।
সেপ্টেম্বরের শেষদিকে মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার মো. ইদ্রিছ মাস্টার, অহিদুল্লাহ মোল্লা ও মো. আবদুল মতিন নারায়ণপুর থেকে ভৈরবে যাওয়ার পথে গাজীরটেক ক্যাম্পের কাছাকাছি এসে দেখেন প্রায় ২০-২৫ জন রাজাকার অস্ত্রশস্ত্রসহ ব্রিজের গোড়ায় টহল দিচ্ছে। তাঁরা রাজাকারদের চোখ এড়িয়ে ক্যাম্প অতিক্রম করে কালিকাপ্রসাদ গ্রামে প্রবেশ করেন এবং রাজাকারদের নিষ্ঠুরতা দেখে আঁতকে ওঠেন। ঐ সময় গ্রামের একদল লোক জড়ো হয়ে গাজীরটেকের রাজাকার ক্যাম্পটি আক্রমণ করে ধ্বংস করার জন্য তাঁদের অনুরোধ করে। অন্যদিকে ভৈরবের মির্জা সুলায়মান ভারতের হাফলং থেকে ট্রেনিং নিয়ে কুলিয়ারচরের ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পান। ২রা অক্টোবর কালিকাপ্রসাদ গ্রামের হাজী কালু মিয়ার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। হাজী কালু মিয়া তখন গাজীরটেকে রাজাকারদের অবস্থান এবং গ্রামে তাদের লুটপাট, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের চিত্র তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনার কথা বলেন। এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে হাবিলদার মো. ইদ্রিছের নেতৃত্বে শ্রমিকনেতা মোন্তাজ ও মির্জা সুলায়মানসহ এতদঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করেন। কালিকাপ্রসাদ গ্রামের সকল মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। অল্প সময়ের মধ্যেই রাজাকারদের ক্যাম্পটির পতন ঘটে। এ অপারেশনে ক্যাম্পের বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। আহত ও জীবিত রাজাকারদের গ্রামের লোকজন দা-কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তাদের অত্যাচারের প্রতিশোধ নেয়। এভাবে কালিকাপ্রসাদ গ্রাম রাজাকারমুক্ত হয়। [ইমরান হোসাইন]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড