You dont have javascript enabled! Please enable it!

কালিভাংতি যুদ্ধ (চাঁদপুর সদর)

কালিভাংতি যুদ্ধ (চাঁদপুর সদর) নভেম্বর মাসের শেষদিকে সংঘটিত হয়। এ-যুদ্ধে ৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং ৯ জন গ্রামবাসী শাহাদত বরণ করেন। চাঁদপুর থানা এফএফ কমান্ডার শাহ মো. মহিউদ্দিন দুলু হোসেনপুর এরিয়া ইনচার্জ শাহ মো. শাহাদাত হোসেনের ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। উক্ত ক্যাম্পে সকাল বেলা খবর আসে বাবুরহাটের কাছে কালিভাংতি নামক স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ জনগণের ওপর অত্যাচার করছে; তাদের সহায়-সম্বল লুটে নিচ্ছে এবং কাউকে-কাউকে দিয়ে পুলের নিচে বাংকার খোঁড়াচ্ছে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা স্পটের কাছাকাছি একটি বাড়ির আড়াল থেকে হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের তৎপরতা দেখতে পান। কিন্তু অনেক নিরীহ লোক প্রাণ হারাবে এ বিবেচনায় তাঁরা ফায়ার ওপেন করা থেকে বিরত থাকেন। এ-সময় প্লান করে এফএফ বাহিনীর সদস্যরা ৪-৫টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বাড়িঘরের আড়ালে অনেকটা ভেতরে ঢুকে পজিশন নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন এবং একজন লোকের মাধ্যমে সফরমালী ক্যাম্পে খবর পাঠান। সেখান থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবুল তাঁর গ্রুপ নিয়ে দ্রুত এসে যোগ দেন। তখন গ্রামের লোকজন বুঝতে পারে যে, মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ দ্রুত অন্যদিকে পালাতে থাকে। এফএফ বাহিনীর মূল গ্রুপটি বড় রাস্তায় এম্বুশ করে অপেক্ষা করতে থাকে। গ্রামবাসীদের পালাতে দেখে পাকিস্তানি সৈন্যরাও মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রাণভয়ে দ্রুত বড় রাস্তার দিকে দৌড়াতে থাকে। এ-সময় মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার ওপেন করলে ২-৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য ধানক্ষেতের মধ্যে পড়ে যায়। অন্য পাকিস্তানি সৈন্যরা পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ-সময় পাকিস্তানি সৈন্যেদের আরেকটি দল রিএনফোর্স করতে এগিয়ে আসে। ঘণ্টা খানের মধ্যে নতুন সেনাদল যোগ দেয়ায় পাকিস্তানিরা ভারী মেশিনগান ও মর্টারের সাহায্যে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। এক পর্যায়ে ২০-২৫ গজের মধ্যে উভয় গ্রুপের মুখোমুখি লড়াই হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৪-৫টি গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় এক গ্রুপের সঙ্গে আরেক গ্রুপের যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। তারপরও যখনই পাকিস্তানি সেনারা মাথা তুলেছে, তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো না কোনো গ্রুপ থেকে গুলি এসে তাদের মাথায় লেগেছে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মতলবের বীর মুক্তিযোদ্ধা জসীমের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এসে যোগ দিলে পাকিস্তানিদের মনোবল ভেঙ্গে যায় এবং দ্রুত আহত ও নিহত সৈন্যদের ট্রাকে উঠিয়ে চাঁদপুরের দিকে পালিয়ে যায়। কালিভাংতির যুদ্ধে অন্যান্যদের সঙ্গে প্লাটুন কমান্ডার আবুল কাসেম বেপারী, আব্দুল মান্নান (বিষ্ণুপুর), সিরাজুল ইসলাম বরকন্দাজ (ফিশারি গেইট), সুলতান আহমেদ মিজি প্রমুখ অংশ নেন। এ-যুদ্ধে ৫ জন হানাদার সৈন্য নিহত হয় এবং ৯ জন গ্রামবাসী শাহাদত বরণ করে। [মনিরুজ্জামান শাহীন ও মোহেববুল্লাহ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!