You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.16 | কালিকাপুর গণহত্যা (মাধবপুর, হবিগঞ্জ) - সংগ্রামের নোটবুক

কালিকাপুর গণহত্যা (মাধবপুর, হবিগঞ্জ)

কালিকাপুর গণহত্যা (মাধবপুর, হবিগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৬ই জুলাই। এতে ৬ জন গ্রামবাসী শহীদ হন।
রতনপুর গ্রামের দুবরাজ বেগমকে ধর্ষণের প্রতিবাদে পরদিন ১৬ই জুলাই বাঁশের লাঠি নিয়ে পাকবাহিনীকে মোকাবেলার পর পাকসেনারা তাদের শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রস্থ ক্যাম্পে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার রিপোর্ট করলে তাদের কমান্ডিং অফিসার তার অধীনস্থ সেনাদেরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে যুদ্ধ সাজে অগ্রসর হয়। ক্যাম্প থেকে একদল সেনা সরাসরি কালিকাপুরের পথে এবং অন্য দল গ্যাস ফিল্ডের পশ্চিম দিকে সুন্দরপুরের পথে কামান, মেশিনগান প্রভৃতি ভারী অস্ত্র নিয়ে অগ্রসর হয়।
ততক্ষণে সকালের ঘটনায় নিহত ইসলাম উদ্দিনের লাশ এবং আহত আব্দুল আলীকে তাদের বাড়িতে আনা হয়। অনেক মানুষ জড়ো হয়। সকলেই বলাবলি করছিল যে, পাকসেনারা হয়তো আবার আক্রমণ করবে। তাড়াতাড়ি লাশ দাফনের উদ্যোগ নেয়ার জন্যও কেউ-কেউ তাগিদ দেন। এরই মধ্যে গুলির শব্দ শোনা যায়। রিয়জনগর গ্রামের মানুষ মূল কালিকাপুরের পাশ দিয়ে পশ্চিম দিকে আসছিল। অবিরাম গুলির শব্দে আতঙ্কিত অসংখ্য পলায়নপর মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে। এরূপ পরিস্থিতিতে পাকসেনারা প্রথম হত্যাকাণ্ড ঘটায় বাঘাসুরা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কালিকাপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান তালুকদারের বাড়িতে। তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না। সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিল। যাননি কেবল চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই আশক আলী ও তৎপুত্র আন্নর আলী। চেয়ারম্যানকে না পেয়ে পাকসেনারা এ দুজনকে নৃসংশভাবে হত্যা করে। এরপর নোয়াগাঁও ও গঙ্গানগরের যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই গুলি করেছে। সেদিনের গণহত্যায় যারা প্রাণ হারান, তারা হলেন- মো. ইসলাম উদ্দিন (পিতা নছম উদ্দিন, রূপনগর), মো. আশক আলী (পিতা সিকান্দর আলী, কালিকাপুর), মো. আন্নর আলী (পিতা মো. আশক আলী, কালিকাপুর), মো. আব্দুল জব্বার (পিতা সিকান্দর মিয়া, নোয়াগাঁও), মো. কালন মিয়া (পিতা মাহুদ হুসেন, গঙ্গানগর), মো. মিজই মিয়া (নোয়াগাঁও, তিনি দীর্ঘ ছয়মাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন)। এদিন আহত হন মো. আব্দুল আলী (পিতা মো. আতাব উল্লা, রূপনগর) ও মো. কাছন মিয়া (পিতা ইনুছ মিয়া, গঙ্গানগর)। [মুহম্মদ সায়েদুর রহমান তালুকদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড