You dont have javascript enabled! Please enable it! কালাপুল বধ্যভূমি (বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী) - সংগ্রামের নোটবুক

কালাপুল বধ্যভূমি (বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী)

কালাপুল বধ্যভূমি (বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী) নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলাধীন চৌমুহনী পৌরসভার বেগমগঞ্জ চৌরাস্তার সামান্য উত্তরে নোয়াখালী-লাকসাম রোডে বর্তমান আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের প্রবেশপথের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। এ বধ্যভূমিতে রয়েছে পরিচয়হীন বহু শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের রক্তাক্ত স্মৃতিচিহ্ন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কালাপুল ছিল কাঠের তৈরি একটি সেতু। ২৩শে এপ্রিল থেকে ৭ই ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্তদিবস পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর -রাজাকার—আলবদর বাহিনী স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষকে ধরে এনে প্রথমে চৌরাস্তা টেকনিক্যাল হাইস্কুলে অবস্থিত পাকবাহিনীর টর্চার সেলে অত্যাচার-নিপীড়ন করত। নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত। পরবর্তীতে তাদের কালাপুলের ওপর দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করত এবং হত্যার পর খরস্রোতা নোয়াখালী খালে ফেলে দিত। স্বাধীনতাযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে হানাদার বাহিনী কালাপুলে কতজন নারী-পুরুষকে গুলি করে হত্যা এবং হত্যার পর কালাপুল সংলগ্ন মাঠে মাটিচাপা দেয়, তার সঠিক হিসাব জানা সম্ভব নয়।
হানাদার বাহিনী ২৩শে এপ্রিল কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হলে পথে-পথে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে তারা সড়ক ও রেলপথে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রসহ শতাধিক কনভয় নিয়ে চৌরাস্তা টেকনিক্যাল হাইস্কুলে পৌঁছে এবং এখানে ঘাঁটি স্থাপন করে। এখানে আসার পথে তারা কালাপুল সংলগ্ন পশ্চিম পাশের গ্রাম মিরওয়ারিশপুর জ্বালিয়ে দেয়। গ্রামের অধিবাসী চৌমুহনী কলেজের কারণিক গুলজার হোসেনকে কালাপুলের ওপর দাঁড় করিয়ে হত্যা করে পুলের নীচে খালে ফেলে দেয়। গুলজার এ-সময় স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করছিলেন। একই দিনে নোয়াখালীর সদর উপজেলাধীন ৪নং কাদির হানিফ ইউনিয়নের অধিবাসী দুলা মিয়া বাড়ির দুই সহোদর তাজুল ইসলাম ও মোস্তফা মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে কালাপুল বধ্যভূমিতে মাটিচাপা দিয়ে রাখে। বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্পে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ছিল মেজর বোখারী। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কালাপুল বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ বা কোনো স্মারক চিহ্ন নির্মিত হয়নি। শহীদ পরিবারের স্বজনরা মাঝে-মধ্যে এসে কালাপুলের ওপর দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের জল ফেলে তাদের স্মরণ করে চলে যায়। [মো. ফখরুল ইসলাম]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড