You dont have javascript enabled! Please enable it!

কালামপুর গণহত্যা (ধামরাই, ঢাকা)

কালামপুর গণহত্যা (ধামরাই, ঢাকা) সংঘটিত হয় ৯ই এপ্রিল শুক্রবার। এতে ১৪ জন মানুষ নিহত হন। তারা ছিলেন কায়েতপাড়াসহ অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দা ও হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকহানাদার বাহিনী এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
গণহত্যাটি ঘটে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার কালামপুর বাজারের পশ্চিম পাশে। কালামপুর বাজারটি ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। কালামপুর বাজার সংলগ্ন গণহত্যার স্থানটির উত্তরে ভালুম গ্রাম, পশ্চিমে বাথুলী, পূর্বে গোয়ালদী এবং দক্ষিণে কালামপুর গ্রাম।
৯ই এপ্রিল বেলা ১২টার দিকে পাকিস্তানি হানাদাররা কায়েতপাড়া থেকে ২০ জন গ্রামবাসীকে আটক করে পিঠমোড়া করে বেঁধে ধামরাই থানায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে ট্রাকে করে কালামপুরের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় গুরুদাস পাল নামের একজনকে লাথি মেরে ট্রাক থেকে ফেলে দেয়। বাকি ১৯ জনকে কালামপুর বাজারের পাশে সূচীপাড়া ও সানড়া ইউনিয়নের সীমানায় বংশী নদীর একটি শাখার খালপাড়ে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে উপর্যুপরি ‘ গুলি ও ব্রাশফায়ার করে। এতে ১৪ জন নিহত হন এবং আহত অবস্থায় মৃতবৎ পড়ে থেকে ৫ জন বেঁচে যান। নারায়ণচন্দ্র পাল বাবু গণহত্যার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্রাশফায়ারে আহত হয়ে লাশের নিচে পড়ে থেকে ঘটনাক্রমে তিনি বেঁচে যান। ব্রাশফায়ার করার আগে তাদের সবাইকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। পাকিস্তানি সৈন্যদের বুটের আঘাতে তার অনেকগুলো দাঁত পড়ে যায়। গণহত্যা শেষে পাকসেনারা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দা মো. আব্দুল গফুর, গ্রাম্য চিকিৎসক আফাজউদ্দিন, কালামপুর বাজার কমিটির সভাপতি মো. শাখাওয়াত আলী, বাজারের ঝাড়ুদার নন্দ লাল বাজপুরসহ কয়েকজন এসে খালের পাড়ে গর্ত করে নিহতদের কোনোরকমে মাটিচাপা দেন। ধামরাই গণহত্যায় নিহতরা ছিলেন কায়েতপাড়া গ্রামসহ অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দা। এ গণহত্যায় নিহতরা হলেন— এডভোকেট দীনেশ রায় মৌলিক (পিতা শ্রীষ রায় মল্লিক, কায়েতপাড়া), অরুণ রায় হাবুল (পিতা এডভোকেট দীনেশ রায় মৌলিক, কায়েতপাড়া), বিশ্বনাথ পাল (পিতা যজ্ঞেশ্বর পাল, কায়েতপাড়া), মাধব পাল (পিতা দীননাথ পাল, কায়েতপাড়া), গয়ানাথ রাজবংশী (পিতা শ্রীনাথ রাজবংশী, কায়েতপাড়া), দেবেন্দ্র সাহা (পিতা যজ্ঞেশ্বর সাহা, বিরুলিয়া), বুদ্ধ সূত্রধর (চৌতালীপাড়া), ননীগোপাল সূত্রধর পাগলা (পিতা জীবন সূত্রধর, কায়েতপাড়া), রাধানাথ বণিক (পিতা বিনোদ বিহারী বণিক, চৌতালীপাড়া), চিনু বণিক (পিতা কৈলাশ বণিক, বড়বাজার), গণেশ পাল (পিতা গোবিন্দ পাল, পর্বতবাড়ী), গান্ধী পাল (পিতা মোহন লাল পাল, কায়েতপাড়া), জীবন সূত্রধর (পিতা উমেশ সূত্রধর, কায়েতপাড়া) ও লাল মোহন কর্মকার লালু (পিতা সর্ব মোহন কর্মকার)।
গণহত্যায় আহতরা হলেন- বাবু রাজবংশী (পিতা সনাতন রাজবংশী, কায়েতপাড়া), নেপাল পাল (পিতা মহাদেব পাল, উত্তরপাতা), ভোলানাথ বণিক (পিতা চিনা বণিক, বড়বাজার), জোয়ান রায় মৌলিক (পিতা উমেশ রায়, কায়েতপাড়া) ও নারায়ণচন্দ্র পাল বাবু (পিতা বিজয় ভূষণ পাল, কায়েতপাড়া)।
গণহত্যার পাশাপাশি পাকহানাদাররা ঐতিহাসিক ধামরাই রথ ও লোকনাথ মন্দির জ্বালিয়ে দেয় এবং মন্দির থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। [বাশার খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!