কামালপুর গণহত্যা (মৌলভীবাজার সদর)
কামালপুর গণহত্যা (মৌলভীবাজার সদর) সংঘটিত হয় ২৭শে এপ্রিল। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে সংঘটিত এ গণহত্যায় একই পরিবারের ৭ জনসহ ২৫ থেকে ৩০ জন গ্রামবাসী নিহত হয়।
ঘটনার দিন কামালপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া সিলেট- মৌলভীবাজার সড়কে পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা বেশি সময় টিকতে পারেননি। তাঁরা পিছু হটলে পাকসেনারা প্রচণ্ড ক্ষোভে কামালপুর বাজার সংলগ্ন গ্রামগুলোতে অগ্নিসংযোগ ও নির্বিচারে গুলি ছুড়তে থাকে। এসব গ্রামে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়েছিলেন। পাকসেনারা কামালপুর গ্রামের জয়ফর উল্লা (পিতা আরই উল্লা)-কে সামনে পেয়ে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তারা প্রসন্ন কুমার ধরের বাড়িতে ঢোকে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের প্রতিরোধ করতে পারবেন এ ভরসায় তিনি পরিবারের সকলকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পাকসেনাদের দেখে তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঠাকুর ঘরে লুকিয়ে থাকেন। বাড়িতে কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে পাকসেনারা যখন ফিরে যাচ্ছিল, ঠিক সে-সময় একটি বাচ্চা মেয়ে কেঁদে ওঠে। কান্নার শব্দ শুনে দালাল মদরিস চৌধুরী পাকসেনাদের ডেকে আনে। পাকসেনারা ঠাকুর ঘর থেকে সবাইকে বের করে বাড়ির উঠানে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ-সময় নিহত হন সহোদর প্রসন্ন কুমার ধর ও মহেন্দ্র কুমার ধর, প্রসন্ন কুমার ধরের ছেলে হরিপদ ধর, প্রীতিরাণী ধর (স্বামী হরিপদ ধর), প্রণতিরাণী ধর (পিতা হরিপদ ধর), প্রতিমারাণী ধর (পিতা হরিপদ ধর) ও প্রগতিরাণী ধর (পিতা হরিপদ ধর)। এক পরিবারের ৭ জনকে হত্যা করে পাকসেনারা মৃতদেহগুলো বাড়িতে ফেলে রাখে। দুদিন পর দালাল চেয়ারম্যান আকলু মিয়ার নেতৃত্বে কালা মোল্লা, আরশদ আলী, ছিকন মিয়া, সাজিদ উল্লাহ, কাছিম মিয়া, ফুলরি মিয়া ও মদরিস চৌধুরী এসে বাড়ির উঠানে বড় গর্ত খুঁড়ে মৃতদেহগুলো মাটিচাপা দেয়। [আবদুল হামিদ মাহবুব]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড