কামালপুর পাকক্যাম্প নির্যাতনকেন্দ্র (বকশীগঞ্জ, জামালপুর)
কামালপুর পাকক্যাম্প নির্যাতনকেন্দ্র (বকশীগঞ্জ, জামালপুর) মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। এ ঘাঁটিতে তারা নির্যাতনকেন্দ্র গড়ে তোলে। এ নির্যাতনকেন্দ্রে অসংখ্য মানুষ শারীরিক নির্যাতনের পর মৃত্যুবরণ করে। অসংখ্য নারী এখানে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতিতদের অনেকে মৃত্যুমুখে পতিত হন।
কামালপুর ঘাঁটিতে পাকসেনারা কংক্রিটের একাধিক বাংকার স্থাপন করে। সুড়ঙ্গপথে এক বাংকার থেকে অন্য বাংকারে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ঘাঁটির চারপাশে পাতা ছিল এন্টিট্যাংক মাইন, ব্যুবিট্যাব, এন্টি-পার্সোনাল মাইন, কাঁটাতারের বেড়া ও স্পাইক। ঘাঁটির চারপাশে তারা দেড় থেকে দুশ গজ পর্যন্ত বড়বড় গাছ কেটে রেখেছিল, যাতে রাইফেল ও মেশিনগানের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিহত করতে পারে। বাংকারগুলোর চারপাশে ভারী ও মিডিয়াম কামান বসানো হয়েছিল। জামালপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ধরে এনে এ ঘাঁটির নির্যাতনকেন্দ্রে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের পর হত্যা করে লাশ কামালপুর বাজারের পশ্চিম পাশে মাটিতে পুঁতে রাখা হতো। বর্বর পাকসেনারা এখানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। একটি কক্ষে ছিল নারীনির্যাতন কেন্দ্র। এ কক্ষে নারীদের বন্দি করে রাখা হতো। শান্তি কমিটি, আলবদর- ও রাজাকার-রা নারীদের ধরে আনত। বাংকারের গুপ্ত কক্ষে আটকে রেখে তাদের ওপর দিনরাত পাশবিক নির্যাতন চালানো হতো। এখানে অসংখ্য নারী সম্ভ্রম হারান। নির্যাতিতদের আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠত। অকথ্য নির্যাতনের পর অসংখ্য নারী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন। নিহতদের ক্যাম্পের পাশে পুঁতে রাখা হতো। ৪ঠা ডিসেম্বর কামালপুর মুক্তদিবসে বাংকারের একটি কক্ষে অনেক নারীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। [রজব বকশী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড