You dont have javascript enabled! Please enable it!

কানাইপুর সিকদার বাড়ি গণহত্যা (ফরিদপুর সদর)

কানাইপুর সিকদার বাড়ি গণহত্যা (ফরিদপুর সদর) সংঘটিত হয় ৮ই মে। এদিন বিহারি ও রাজাকার-দের হাতে ১৮ জন নিরীহ মানুষ নির্মম হত্যার শিকার হন।
ফরিদপুর জেলার সদর থানার একটি গ্রাম কানাইপুর। ফরিদপুর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। এটি একটি সমৃদ্ধ গ্রাম ছিল। এ গ্রামের সিকদার বাড়িতে সম্পদশালী ও শিক্ষিত লোকদের বসবাস ছিল। বাড়ির একাধিক লোক পেশায় শিক্ষক ছিলেন। এ বাড়ির শিক্ষকদের সাবেক এক ছাত্র রামদা উঁচিয়ে রাইফেল কাঁধে বিহারিদের নিয়ে ৮ই মে বাড়িটিতে আক্রমণ করে। আক্রমণকারীরা সংখ্যায় ছিল অনেক। তারা প্রথমে এ বাড়ি ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য বাড়ির নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোর সবাইকে ধরে একত্রিত করে এবং একে-একে সবাইকে হত্যা করার প্রস্তুতি নেয়। এক শিক্ষক সাবেক ঐ ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফল হয়নি। তারা সবাইকে হত্যা করতে প্রস্তুত, কাউকে রেহাই দেবে না। সবাইকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। সামনে রাইফেল তাক করা। ছোট ছেলে- মেয়েগুলো লাইনে আসছিল না। তা দেখে ঘাতক দল তৎপর হয়। বাড়ির মা, কাকা, ঠাকুরমাদের নির্দেশ দেয় ছোটদের উঁচু করে ধরার জন্য। সবাইকে উঁচু করে ধরা হয়। তারপর আবার রাইফেল তাক করা হয়। রাইফেলে চোখ রেখে ঘাতক গুলি করতে যখন উদ্যত হয়, ঠিক তখন তাদের একজন রাইফেল ঘুরিয়ে দেয়। ফলে গুলি করা আর হয়নি এরপর তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, নারী ও বাচ্চাদের হত্যা করা হবে না। তাদের আলাদা করা হয়। পাশেই ছিল রান্নাঘর। রান্নাঘরের বারান্দায় বাচ্চাদের বসিয়ে রাখা হয়। এরপর উঠানের তুলসীতলায় একে-একে পুরুষদের জবাই করা চলতে থাকে। কোনো কান্না নেই, আহাজারি নেই, বেঁচে থাকার আকুতি নেই। সবাই যেন জবাই হতে প্রতিজ্ঞ। এভাবে এক-এক করে জবাই হন দীনেশ চন্দ্র সিকদার, জীবেশ চন্দ্র সিকদার, আনন্দ কুমার পোদ্দার, দুলাল চন্দ্র সিকদার, বিভূতিভূষণ সিকদার, অজিত কুমার সিকদার প্রমুখ। বাড়ির অন্যদের সামান্য কাঁদতে বা আহাজারি করতে দেয়া হয়নি। লাইনে তাক করা রাইফেলে বেয়নেট লাগিয়ে মহিলা ও শিশুদের চোখ বরাবর ধরে রাখা হয়। যতক্ষণ জবাই পর্ব চলে ততক্ষণ বেয়নেট অন্যদের চোখের ওপর, এ অবস্থা চলতে থাকে। জবাই পর্ব শেষে নারী ও বাচ্চাদের একটি ঘরে আটক করা হয়। খাবারসহ সবকিছু বন্ধ। দেড় দিন এভাবে কাটে। এরপর একজন দফাদার তাদের মুক্ত করে দেয়। বন্দিদশা থেকে বের হওয়ার সময় নারী ও শিশুরা তুলসীতলা দিয়েই সিকদার বাড়ি ছেড়ে যায়। তখন লাশগুলো আর সেখানে ছিল না। শুধু চাপচাপ রক্তের দাগ আর পিঁপড়ার সারি দেখা যায়। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি চলছিল ব্যাপক লুটপাট। বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি করে সোনা, কাঁসা, পিতল, বাসন, আসবাবপত্র, যার ঘরে যা কিছু ছিল তা বস্তায় ভরে বিহারি ও রাজাকাররা নিয়ে যায়। এদিন কেবল কানাইপুর নয় – খাসকান্দি, লক্ষ্মীপুর ও হোগলাকান্দির হিন্দুদের ঘরবাড়িতেও ব্যাপক লুটপাট করা হয়। এসব গ্রামের অনেক বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। [আবু সাঈদ খান]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!