You dont have javascript enabled! Please enable it! কাঠের পুল সাহাপাড়া বধ্যভূমি (চান্দিনা, কুমিল্লা) - সংগ্রামের নোটবুক

কাঠের পুল সাহাপাড়া বধ্যভূমি (চান্দিনা, কুমিল্লা)

কাঠের পুল সাহাপাড়া বধ্যভূমি (চান্দিনা, কুমিল্লা) কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলায় অবস্থিত। চান্দিনা থানা থেকে তিনশ গজ উত্তর-পূর্ব দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ দিয়ে একটি খাল প্রবাহিত। এ খালের পশ্চিম পাড়ে কাঠের পুল সাহাপাড়ার অবস্থান। খালের ওপর একটি ব্রিজ ছিল, যা মুক্তিযোদ্ধারা এপ্রিল মাসে ভেঙ্গে দেন। তারপর থেকে পাকবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাজাকারদের দিয়ে এখানে পাহারা বসানো হয়।
৭ই জুলাই রাজাকাররা চান্দিয়ারা গ্রামের ডা. মো. সায়েদ আলী মাস্টার, ছায়কোট তুলাতুলি গ্রামের সোনা মিয়া ও ছায়কোট গ্রামের মো. আলী মিয়াসহ ৭ জনকে শান্তি কমিটির সঙ্গে যোগদানের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে আনে। এরপর তাদের কাঠেরপুল ব্রিজের নিচে নিয়ে জবাই করে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ড চান্দিনা সদর ও আশপাশ এলাকার সর্বস্তরের জনগণের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। এরপর থেকে চান্দিনা এলাকার জনগণ কাঠেরপুল সাহাপাড়া বধ্যভূমি সম্পর্কে জানতে পারে। এর পূর্বে মে মাসে হানাদার বাহিনী কাঠের পুল সাহাপাড়ায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত এরূপ হত্যাকাণ্ড চলে।
হানাদার বাহিনী এ-সময় বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ জনগণকে ধরে এনে কাঠেরপুল সাহাপাড়া বধ্যভূমিতে দাঁড় করিয়ে রাতের অন্ধকারে হত্যা করত। মে মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় প্রতিরাতেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। হত্যাকাণ্ডের যারা শিকার তাদের আর্তনাদ এলাকাবাসী শুনতে পেত। খালের তীব্র স্রোতের কারণে সকালে অনেকের লাশ অন্যদিকে ভেসে যেত। তাই মোট কতজন লোককে এখানে হত্যা করা হয়, তার সঠিক তথ্য কখনো পাওয়া যাবে না। মুক্তিযোদ্ধা, কাঠের পুল ও সাহাপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় যে, এখানে কয়েকশ নিরীহ নর-নারী, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে ১০ জনের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তারা হলেন- মো. লাল মিয়া (পিতা মো. মুজ্জাফর আলী, গোবিন্দপুর), মো. আব্দুর রাজ্জাক (পিতা আফতাব উদ্দিন, চাঁনসার, বুড়িচং), মো. সোনা মিয়া (পিতা হাজী মো. জাহা বক্স, ছায়কোট তুলাতুলি), ডা. মো. ছায়েদ আলী মাস্টার (পিতা মো. আমজাদ আলী, চান্দিয়ারা), মো. আলী মিয়া মুন্সী (পিতা লাল মিয়া মুন্সী, ছায়কোট), সুরেন্দ্র নাথ পাল (পিতা অধর চন্দ্র পাল, বড়কামতা, দেবিদ্বার), মো. সুলতান আহমেদ (পিতা মো. সাদা গাজী, ছেঙ্গাগাছিয়া), মো. ইমাম বক্স ওরফে চারু মিয়া (পিতা নসরুউদ্দিন, নাওতলা), মো. ছানা উল্লাহ ওরফে মাইল্লা (পিতা বাবরী মিয়া, পানিপাড়া) ও মো. তিতু মিয়া ভূঁইয়া (পিতা সেকান্দর আলী ভূঁইয়া, কামার খোলা)।
যুদ্ধের শেষদিকে বাড়িঘরের খোঁজ নেয়ার জন্য ১৪-১৫ বছরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক কিশোর ভারত থেকে রাতে নিজ গ্রামে ফিরে আসে। সকালে সে তার জমি দেখতে মাঠে যায়। এমন সময় তাকে বাকসারের রাজাকার- আব্দুল খালেক আটক করে। আব্দুল খালেক তার বোনজামাই নেজামে ইসলামীর নেতা রাজাকার মাওলানা আব্দুল হকের নিকট ছেলেটিকে হস্তান্তর করে। মাওলানা তাকে থানায় পাঠিয়ে দেয়। ঐ রাতেই রাজাকাররা কাঠের পুল সাহাপাড়া বধ্যভূমিতে তাকে গুলি করে খালে ফেলে দেয়। [মো. তামিদুর রহমান দিদার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড