You dont have javascript enabled! Please enable it!

কানলা গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)

কানলা গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ) সংঘটিত হয় ২৫শে আগস্ট সকালে। এতে অনেক মানুষ শহীদ হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন নারী।
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে রায়টুটী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম কানলা। এখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও এর মূল নায়ক ছিল কুখ্যাত রাজাকার- মানিক মিল্কী। মানিক মিল্কী রায়টুটী গ্রামের বাসিন্দা ছিল। কিশোরগঞ্জে পাকিস্তানি সৈন্যদের সেদিন স্বাগত জানিয়েছিল জামিয়া ইমদাদিয়ার প্রতিষ্ঠাতা এবং নেজামে ইসলামী-র নেতা মাওলানা আতাহার আলী।
পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন, মুসলিম লীগ নেতা আ. আওয়াল খান, মতি কন্ট্রাক্টর প্রমুখ গণধীকৃত ব্যক্তির ছত্রছায়ায় এ এলাকায় শান্তি কমিটি, আলবদর ও রাজাকার বাহিনী গড়ে উঠেছিল। কিশোরগঞ্জের ভাটি অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় শুকনো মৌসুমে হানাদার বাহিনী অনেক জায়গায় অভিযান চালাতে পারেনি। বর্ষা আসার পর তারা হাওর এলাকায় অভিযান চালানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মানিক মিল্কী ইটনা থানায় পাকিস্তানি সেনাদলের পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিশোরগঞ্জ থেকে ইটনা আসার সহজ পথ পরিত্যাগ করে সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাড়াইলের পথে সেনাবাহিনীকে নিয়ে নিজের ইউনিয়নে আসে এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কানলা গ্রামে হামলা চালায়। তার উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু পরিবারগুলোকে ধ্বংস করে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ কুক্ষিগত করা। পাকিস্তানি সৈন্যদের সে বুঝিয়েছিল যে, এরা ভারতের এজেন্ট এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে আশ্রয় দেয়। তার প্ররোচনায় পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রথমে সুনীল ডাক্তার নামে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ধরতে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। সুনীল ডাক্তার কোনক্রমে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। বর্বর হানাদাররা তাঁকে ধরতে না পেরে তাঁর ৫ বছরের শিশু পুত্র তপনকে হত্যা করে। তারা মিরাশ আলী নামের একজন গ্রামবাসীকে ডাক্তারের বাড়িতে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর পাকিস্তানি বাহিনী কানলা গ্রামের হিন্দু বাসিন্দাদের ধরপাকড় করতে শুরু করে। তারা বেশ কয়েকজন নারী- পুরুষকে বন্দি করে। পুরুষদের সেখানেই তারা গুলি করে হত্যা করে। মানিক মিল্কী তার অনুগামী লোকদের দ্বারা সমগ্র গ্রামে প্রথমে লুট এবং পরে অগ্নিসংযোগ করে। তারপর মহিলাদের হাত বেঁধে অন্য একটি নৌকায় তোলে। পাকিস্তানি সৈন্যরা রায়টুটী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনদিকে এসে মহিলাদের নৌকাটি নদীতে ডুবিয়ে দেয়। হাতবাঁধা অবস্থায় তাদের সলিল সমাধি ঘটে।
সেদিন এই হত্যাকাণ্ডে কানলা গ্রামের যারা নিহত হন, তারা হলেন- কমলা রানী বর্মণ (স্বামী দীনেশ চন্দ্র বর্মণ), অমর্ত্য বালা বর্মণ (স্বামী হাজারী বর্মণ), হৃদয় পাল, দীনেশ পাল (পিতা বাশীরাম পাল), মিরাশ আলী (পিতা গোমেজ আলী), সুরবালা বর্মণ (স্বামী বজ্রবাসী বর্মণ), সুভদ্রা বর্মণ (স্বামী মহাদেব বর্মণ), সুশীল বর্মণ (পিতা যোগেশ বর্মণ), সুরেন্দ্র চন্দ্র পাল (পিতা গিরীশ চন্দ্র পাল), ফুলদা রানী পাল (স্বামী ধীরেন্দ্র চন্দ্র পাল), তপন চন্দ্ৰ পাল (পিতা সুনীল চন্দ্ৰ পাল) ও যোগেন্দ্র চন্দ্র পাল (পিতা গগন চন্দ্ৰ পাল)। [মো. রওশন আলী রুশো]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!