কাটাখালী বধ্যভূমি ও গণকবর (গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা)
কাটাখালী বধ্যভূমি ও গণকবর (গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা) গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের নিকটবর্তী করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত কাটাখালী ব্রিজের পাশে অবস্থিত। প্রায় ৫ শতাধিক মানুষকে এ গণকবরে মাটিচাপা দেয়া হয়। ১০ই এপ্রিল কাটাখালী ব্রিজ সংলগ্ন ছোট পার্কে পাকিস্তানি সেনারা ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকে ডিসেম্বরে পরাজয়ের পূর্ব পর্যন্ত এখানে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়। নিহতদের অনেককে এখানে গণকবর দেয়া হয়।
কাটাখালী ব্রিজটি বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে হওয়ায় চলমান বাস থেকে নামিয়ে এনে নারী-পুরুষদের নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। সে কারণে শহীদদের নাম ও পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন এলাকার মানুষ হওয়ায় তাদের পরিচয় অজ্ঞাত রয়ে গেছে। এখানে কবর দেয়া স্থানীয় শহীদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে, তারা হলেন- বিনয় চন্দ্র বর্মণ (বোয়ালিয়া), শুকটু চন্দ্র বর্মণ (সাতারপাড়) ও সৈয়দ শামছুল হুদা (পিতা আব্দুস সোবহান, দয়ারপাড়া, পলাশবাড়ী)।
দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের একমাত্র সড়ক পথে কাটাখালী ব্রিজটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্রিজের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পথচারীদের অবকাশের জন্য একটি ছোট পার্ক ছিল। পার্কের একটি কক্ষে নারীদের ধরে এনে পাকিস্তানি সেনারা নির্যাতন চালাত। এখানে পুরুষদেরও নির্যাতন করে হত্যা করা হতো। পার্শ্ববর্তী এলাকার কিছু মানুষকে এখানে হত্যা করা হয়। এখানে হত্যার শিকার মানুষদের অধিকাংশ ছিল বিভিন্ন অঞ্চলের বাসযাত্রী নারী- পুরুষ। হত্যার পর অনেককে করতোয়া নদীতে ফেলে দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর ব্রিজের পাশে এখানে শতাধিক মানুষের মাথার খুলি পাওয়া যায়। পার্ক থেকে ২৫০ মিটার দক্ষিণে এ গণকবরটি অবস্থিত। কাটাখালী ব্রিজ সংলগ্ন বধ্যভূমি ও গণকবরে একটি স্মৃতিসৌধ এবং রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে একটি নামফলক রয়েছে। [জহুরুল কাইয়ুম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড