কাটাখালী ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধ (গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা)
কাটাখালী ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধ (গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা) সংঘটিত হয় ২৭শে মার্চ দুপুরে। কাটাখালীতে করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের পশ্চিম পাশে এ যুদ্ধ হয়। এতে কয়েকজন ছাত্র-কিশোর হতাহত হয়।
থানা ছাত্রলীগ-এর সভাপতি আব্দুল মতিন তালুকদার, রণজিৎ মোহন্ত, আব্দুল লতিফ, নির্মলেন্দু মোহন রায়, আমিরুল ইসলাম ভোলা, প্রদীপ কর, আব্দুল মান্নান, ছাদেকুল ইসলাম প্রমুখ ছাত্রনেতার নেতৃত্বে এ-যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রংপুর-বগুড়া সড়কে পাকিস্তানি সেনাদের অবাধ যাতায়াত বাধাগ্রস্ত করতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কাটাখালী ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ব্রিজটি কংক্রিটের নির্মিত হওয়ায় হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে এটি ভাঙ্গা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন ব্রিজের পশ্চিম পাশের সড়কে বিশাল গর্ত করা হয়। দুঘণ্টায় অনেক লোকের অংশগ্রহণে এ গর্ত তৈরি করা সম্ভব হয়। এ অবস্থায় হঠাৎ কয়েকটি জিপে এসে পাকসেনারা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুলির আওয়াজ পেয়ে ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়াতে থাকে। অনেকে নদীতে লাফিয়ে পড়ে। পাকসেনাদের গুলিতে গোবিন্দগঞ্জ কলেজের ছাত্র বাবুল মোহন্ত এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল মান্নান ঘটনাস্থলে শহীদ হন। বাবু দত্ত নামে আরেকজন ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় বাড়িতে এলেও চিকিৎসার অভাবে মারা যান। পাকিস্তানিদের বেয়নটের খোঁচায় অজ্ঞাত এক বালকও সেদিন শহীদ হয়।
কাটাখালী ব্রিজ প্রতিরোধযুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ এবং ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার ৩ শতাধিক ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। এটি ছিল এ অঞ্চলের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ। প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে টিকতে না পারলেও এটি ছিল মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সুবেদার শাহ আলমের নেতৃত্বে হানাদাররা ব্রিজের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। [জহুরুল কাইয়ুম]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড