You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাটেংগা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ (তেরখাদা, খুলনা)

কাটেংগা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ (তেরখাদা, খুলনা) ৩ বার হয় ৫ই আগস্ট, ২৮শে আগস্ট ও ২রা ডিসেম্বর। তৃতীয়বার আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা এ ক্যাম্প দখল করেন। ৩০শে মে রাজাকার- কমান্ডার আব্দুর রশীদ মোল্লা, আদিল উদ্দিন মোল্লা, ইয়াকুব আলী প্রমুখের নেতৃত্বে তেরখাদা কাটেংগা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপিত হয়। ৩রা আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা তেরখাদা কাটেংগা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ক্যাম্প আক্রমণ করার জন্য তাঁরা ৩টি দলে বিভক্ত হন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা জলিল মিয়ার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ কাটেংগা স্কুল মাঠের পশ্চিম পাশে অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং গাজীর হাটের মুক্তিযোদ্ধা রানার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ কাটেংগা বাজারে অবস্থান নেয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা বিমান বাহিনীর বাঙালি কমান্ডো সেনা নুরু মিয়ার নেতৃত্বে ৩য় গ্রুপটি কমান্ডো হিসেবে রাজাকারদের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। আক্রমণ পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব ক্যাপ্টেন ফোহাম উদ্দিন নেন। এ-যুদ্ধে কালিয়া থেকে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং গোপালগঞ্জের পুলিশ সদস্য হাবিলদার সিরাজুল ইসলাম, কনস্টেবল জোনাব আলী এবং আনসার সদস্য আক্কাস আলী যোগদান করেন। নূরুল হক মোল্লার নেতৃত্বে গাজীরহাটের ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা এ-যুদ্ধে যোগ দেন। এলাকাবাসীও দেশীয় অস্ত্রসহ এ-যুদ্ধে অংশ নেয়।
৫ই আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় ক্যাম্প আক্রমণ করা হয়। দুগ্রুপের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধা নুরু মিয়া স্কুলের নিচতলায় গিয়ে রাজাকারদের ওপর গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন।
সারাদিন ধরে যুদ্ধ চলার পর গুলি ফুরিয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা এলাকা ত্যাগ করে নিরাপদ স্থানে চলে যান। যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং মোহম্মাদ ও খোকা নামে দুজন আহত হন। মুক্তিদ্ধোদের গুলিতে থানায় অবস্থানরত রাজাকার আইয়ুব আলীসহ ২৬ জন রাজাকার নিহত হয়।
প্রথমবার আক্রমণে পিছু হটলেও মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয়বার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের জন্য একত্রিত হতে থাকেন। এ- সময় ভারত থেকে প্রফুল্ল কুমার ঢালি ২টি এসএলআর ও ৪টি রাইফেলসহ ৮-১০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পাতলা ক্যাম্পে যোগ দেন। ২৮শে আগস্ট ক্যাপ্টেন ফোহাম উদ্দিনের নেতৃত্বে দ্বিতীয়বার কাটেংগা রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করা হয়। এ- সময় মুক্তিযোদ্ধারা দেয়াল টপকে ক্যাম্পের ভেতরে গিয়ে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিস্ফোরণ ঘটান। ৪-৫ ঘণ্টার এ-যুদ্ধে রাজাকারদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। খুলনা থেকে রাজাকারদের সাহায্যার্থে পাকসেনাদের আসার খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন।
২রা ডিসেম্বর নর্থ খুলনা মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা কাটেংগা রাজাকার ক্যাম্পে সর্বশেষ আক্রমণ চালান। এ-যুদ্ধে প্রায় ২ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন ফোহাম উদ্দিন, নুরুল হক মোল্লা, সোহরাব হোসেন ও আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে ৪টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজাকার ক্যাম্প ঘিরে ফেলেন। প্রায় ৬ ঘণ্টা যুদ্ধের পর রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে এবং শতাধিক রাজাকার আটক হয়। তেরখাদা খাদ্য গুদাম ও ডাকবাংলোয় তাদের বন্দি করে রাখা হয়। দেশ স্বাধীনের পর তাদের খুলনা জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। [মো. আলতাফ হোসেন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!