You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাঠিরা গণহত্যা (আগৈলঝাড়া, বরিশাল)

কাঠিরা গণহত্যা (আগৈলঝাড়া, বরিশাল) সংঘটিত হয় ৩০শে মে। এতে শতাধিক সাধারণ মানুষ শহীদ হন। আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের অন্তর্গত ছোট একটি গ্রাম কাঠিরা। উপজেলা সদর থেকে ২ কিমি দূরে প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলে এ গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। এ গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি রয়েছে ব্যাপ্টিস্ট সম্প্রদায়ের একটি চার্চ এবং হিন্দুদের পূজামণ্ডপ। গ্রামটির চারদিকে শুধুই পানি, রাস্তা বলতে কিছুই ছিল না। বর্ষাকালে নৌকাই ছিল চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। গণহত্যার সময় চাষাবাদের মৌসুম শুরু হওয়ায় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার-রা সহজেই জমির মধ্য দিয়ে হেঁটে কাঠিরায় চলে আসে। ২৫শে মার্চ হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গণহত্যা শুরু করলে দূরবর্তী স্থান থেকে মাইকেল সুশীল অধিকারীসহ অনেকেই কাঠিরায় আশ্রয় নেয়। রাজাকার প্রফুল্ল অরিন্দা (জোবারপাড়) এবং গৌরনদীর কয়েকজন রাজাকারের সহায়তায় হানাদার বাহিনী ৩০টি রিকশা ভাড়া করে কাঠিরায় এসে গণহত্যা চালায়। হানাদার বাহিনীর আক্রমণের খবর পেয়ে ২৯শে মে রাতে মাইকেল সুশীল অধিকারীর বাড়িতে বসে সকলে সিদ্ধান্ত নেয় যে, যুবক-যুবতীরা ভোররাতে গ্রামে ছেড়ে চলে যাবে। বৃদ্ধ এবং শিশুরা গ্রামে থাকবে। পরদিন রবিবার হওয়ায় তারা চার্চে যাবেন প্রার্থনা করতে। মাইকেল সুশীল অধিকারী চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে প্রার্থনা সভা শুরু করেন। বেঁচে যাওয়ার বিশ্বাস নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত অনেকেই গির্জায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সকাল ৮টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ৪০ থেকে ৫০ জনের দলটি গির্জার ভেতরে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ করতে তাকে। তারা বেছে-বেছে কিছু লোককে লাইনে দাঁড় করায়। তাদের গির্জার সামনে গুলি করে হত্যা করে। তারা পাটক্ষেতে লুকানো অবস্থায় কয়েকজনকে এবং খোলা জমি দিয়ে পলায়নরত এক মহিলাকে গুলি করে হত্যা করে। এ-সময় তারা কিশোরী শিউলিসহ কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করে। কাঠিরা থেকে বের হয়ে হানাদাররা কালীবাড়ি হাটে আক্রমণ করে। যাওয়ার পথে তারা অনেকগুলো ঘরে লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ করে। কালীবাড়ি হাটের দোকানপাট লুট করে আগুন লাগিয়ে দেয়। হাটের মন্দিরে উপাসনারত ঠাকুর রাইচরণকে গুলি করে হত্যা করে। তারা একটি বাড়িতে একজন বৃদ্ধকে ঘরের ভেতরে রেখে আগুন দেয়। সকাল ৮টা থেকে বেলা প্রায় ৩টা পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে তারা ক্যাম্পে ফিরে যায়। কাঠিরা গণহত্যায় দূর-দূরান্ত থেকে আশ্রয় নেয়া শতাধিক মানুষ শহীদ হন, যাদের মধ্যে ২৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কাঠিরার শ্যামকান্ত রায়, হরিপদ মণ্ডল, লালমোহন হালদার, দ্বিজবর বাড়ৈ, মোহন হালদার, পূর্ণচন্দ্র কর্মকার, দিব্যাবতী বৈরাগী, সুরেন হালদার, দুঃখীরাম হালদার, শ্রীনাথ হালদার, জগীন্দ্র মধু, রনজিত মধু, নারায়ণ মধু, মনোরঞ্জন মধু, রামচন্দ্র বাড়ৈ, জলধর কীর্তনীয়া, ঘোড়ারপাড় গ্রামের লালমোহন কীর্তনীয়া, নারায়ণ কীর্তনীয়া, যোগেশ কীর্তনীয়া, অনিল কীর্তনীয়া, লক্ষ্মীরানী সূতার, হারাধন মিস্ত্রী, বাকাল গ্রামের যোগেশ চন্দ্র হালদার, ধীরেন্দ্র নাথ হালদার, রনজিত কুমার হালদার, অক্ষয় কুমার বিশ্বাস (হাওলা), বাশীরাম হালদার (ঐচারমঠ), জ্যোতিষ রায় (রাহুতপাড়া) ও সাধক রাইচরণ বৈরাগী (আঙ্কর)। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!