You dont have javascript enabled! Please enable it! বীর প্রতীক কাজী মুরশেদুল আলম - সংগ্রামের নোটবুক

বীর প্রতীক কাজী মুরশেদুল আলম

কাজী মুরশেদুল আলম, বীর প্রতীক (শহীদ ১৯৭১) শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার নিলাখাদ গ্রামের পূর্বপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী আব্দুল জব্বার এবং মাতার নাম মরিয়ম বেগম। ছোটবেলায় কাজী মুরশেদুল আলম এবং আরো এক ভাইকে রেখে তাঁর মা-বাবা দুজনই মৃত্যুবরণ করেন। নিঃসন্তান চাচা চান মিয়া তাঁকে ও তাঁর ভাইকে লালন-পালন করেন। এজন্য স্কুল-কলেজের শিক্ষাগত সনদে বাবা হিসেবে চাচা চান মিয়ার নাম আছে। ১৯৭১ সালে কাজী মুরশেদুল আলম উচ্চ মাধ্যমিক ক্লাসের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলেন।
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এবং ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর স্বাধীনতা ঘোষণার পর তিনি এলাকার ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে একত্র হয়ে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যান। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি দেশে ফিরে ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন এবং ৯ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হন। এ-সময় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি যুদ্ধ এবং অপারেশনে তিনি সাহসী ভূমিকা রাখেন।
নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানি বাহিনী দেশের অধিকাংশ এলাকা থেকে পশ্চাদপসরণ করে। কিন্তু সীমান্ত এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার চণ্ডীদার তখনো তাদের দখলে। ২২শে নভেম্বর চণ্ডীদার দখলের জন্য কাজী মুরশেদুল আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ করে। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা রণকৌশল পরিবর্তন করেন। তাঁরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নতুন করে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতি আক্রমণ চালান। নতুন এ কৌশলপূর্ণ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ হানাদার বাহিনীকে সামনে থেকে আক্রমণ করে বিভ্রান্ত করে। আরেকটি উপদল পাশ থেকে গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধূম্রকুণ্ডলী সৃষ্টি করে পেছনে সরে যায়। এ সুযোগে কাজী মুরশেদুল আলমের নেতৃত্বে আত্মঘাতী দলটি ধূম্রকুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে হানাদারদের ওপর আক্রমণ চালায়। তাঁদের অস্ত্রের আঘাতে লুটিয়ে পড়ে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা দেখে অবশিষ্ট হানাদারদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। তারা কিছুটা পশ্চাদপসরণ করে নতুন করে অবস্থান নেয়। কাজী মুরশেদুল আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের নতুন সব স্থানে পাল্টা আক্রমণ করেন। বিপর্যস্ত হানাদার সৈন্যরা মরিয়া হয়ে তাঁদের ঐ আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। অমিত সাহসী কাজী মুরশেদুল আলম পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিবৃষ্টি উপেক্ষা করে আরো কিছুটা সামনে এগিয়ে যান। এক পর্যায়ে হঠাৎ শত্রুদের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করার আগেই তিনি শহীদ হন। এ-যুদ্ধে কাজী মুরশেদুল আলমসহ আরো ৩-৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। জীবিত পাকিস্তানি সৈন্যরা আহতদের নিয়ে পালিয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা কাজী মুরশেদুল আলমকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোল্লাপাথরে সমাহিত করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে জীবন উৎসর্গ করায় বাংলাদেশ সরকার কাজী মুরশেদুল আলম-কে ‘বীর প্রতীক’ (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। [মনিরুজ্জামান শাহীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড