কাকণার যুদ্ধ (দৌলতপুর, মানিকগঞ্জ)
কাকণার যুদ্ধ (দৌলতপুর, মানিকগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৭ই ডিসেম্বর। এ-যুদ্ধে পাকসেনা ও রাজাকাররা পালিয়ে যায়। দৌলতপুর থানার পূর্বাঞ্চল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ছিল অভয়ারণ্য। নিরালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল দৌলতপুর থানার মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্প। ছাত্রনেতা আফাজ উদ্দিন (গ্রাম রঘুঘোষ), হাকিম মাস্টার (কাকণা), নুরুল ইসলাম (শ্যামপুর) প্রমুখের নেতৃত্বে ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা এ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেন। তাঁরা দক্ষিণ টাঙ্গাইলের খোন্দকার আব্দুল বাতেন এবং তাঁর বাহিনীর সহযোগিতায় বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেন।
১৭ই ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে ঘিওর-দৌলতপুরের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেনের নেতৃত্বে ঘিওর সেনা ক্যাম্প থেকে ৫০ জনের অধিক পাকসেনা এবং দৌলতপুর থেকে ৩০ জনের অধিক রাজাকার সম্মিলিতভাবে কাকণা খালের পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নেয়। বাতেন বাহিনী-র মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ শেষে কাকণা, হাতকোড়া, গালা, নিরালী ও কলিয়া গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে রাত্রি যাপন ও বিশ্রাম নিতেন। পাকসেনা ও রাজাকাররা যৌথভাবে কাকণা গ্রামের সন্দেহভাজন বাড়ি লক্ষ করে গুলি চালায়। আক্রমণ টের পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা স্ব-স্ব অবস্থানে পজিশন নেন। এরপর তারা পর্যায়ক্রমে সশস্ত্র অবস্থায় একত্রিত হতে থাকেন। পাকসেনারা বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করতে-করতে কাকণার খাল পার হয়ে গ্রাম অভিমুখে চলে আসার প্রস্তুতি নিলে বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা তাদের তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেন এবং তাদের লক্ষ করে পাল্টা গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এক ঘণ্টা উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির এক পর্যায়ে পাকসেনারা কাকণার খালের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাঁতার কেটে কাকণা খাল পার হলেও তারা ৮০টি রাইফেল পানিতে ফেলে তেরশ্রী বাজারে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। রাজাকাররা টুটিয়াম গ্রামের ভেতর দিয়ে দৌলতপুর ক্যাম্পে চলে যায়। পাকসেনাদের পরিত্যক্ত রাইফেলগুলো বাতেন বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। [মো. আমিনুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড