You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাউয়াহাগা ঘাট যুদ্ধ (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম)

কাউয়াহাগা ঘাট যুদ্ধ (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম) সংঘটিত হয় এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে। এ-যুদ্ধে ১১ জন পাকসেনা নিহত হয়। অনদিকে পাকসেনাদের গুলিতে কয়েকজন সাধারণ মানুষ হতাহত হয়।
কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়ক থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে কাউয়াহাগা ঘাটের অবস্থান। এটি ফুলবাড়ী যেতে ধরলা নদী পারাপারের বড় ঘাট। ফুলবাড়ী থানার সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত হওয়ায় ১৯৭১ সালে এ ঘাট শরণার্থী পরাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রাখে।
এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে পাকবাহিনীর একটি দল দুপুরবেলা ৪টি গাড়ি নিয়ে কাউয়াহাগা এলাকায় রেকি করতে আসে। ঘাট ব্যবহার করে প্রচুর শরণার্থী তখন ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাচ্ছিল। পাকিস্তানি সৈন্য আসায় সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসীরা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। পাকিস্তানিদের অনুপ্রবেশ রোধ ও শরণার্থীরা যাতে পাকিস্তানিদের দ্বারা নিগ্রহের শিকার না হয় সেজন্য ঘাটের উত্তর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধারা একটি শক্ত ডিফেন্স করে অবস্থান নেন।
পরদিন সন্ধ্যায় পাকবাহিনী মর্টার ও মেশিনগানসহ নানা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাউয়াহাগা ঘাট এলাকায় আক্রমণ করে। ধরলা নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা তখন বাংকারে ছিলেন। খুব দ্রুত তাঁরা মর্টার বসিয়ে প্রস্তুত হন। স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপত্তার জন্য বাংকারের পেছনে প্রায় আধামাইল জুড়ে গভীর ও প্রশস্ত ট্রেঞ্চ করে রেখেছিলেন। ধরলা নদীর দক্ষিণ পাড়ে পাকবাহিনী ও উত্তর পারে মুক্তিবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নেয়। নিজেদের অবস্থান থেকে পাকবাহিনী মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করে। অপরদিকে থেমে-থেমে জবাব দেয় মুক্তিবাহিনী। রাতভর দুপক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। এ- যুদ্ধে ১১ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এখানে পাকবাহিনীর গুলিতে কয়েকজন সাধারণ মানুষ হতাহত হয়। ঘটনাস্থলে সন্ন্যাসী গ্রামের বাদশা মিয়া শহীদ হন। নূরল ইসলাম ব্যাপারী ও মণ্ডল নামে দুজন আহত হয়ে পরে মৃত্যুবরণ করেন। পাকবাহিনীকে হটিয়ে দেয়াসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য কাউয়াহাগা ঘাট যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
এরপর মে মাসে লালমনিরহাটের বড়বাড়ির দিক থেকে এসে পাকসেনাদের একটি দল কাউয়াহাগা ঘাট এলাকাস্থ সন্ন্যাসী গ্রামটি পুড়িয়ে দেয়। এ-সময় মকবুল নামে এক পাকিস্তানি সৈন্য নেফারদরগাহ এলাকায় ধরা পড়লে তাকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে নিয়ে যান। এ পাকসেনা নারীবেশে গ্রামে ঢুকেছিল তরুণীদের ক্যাম্পে নেয়ার জন্য। [আব্দুল খালেক ফারুক]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!