কাঁঠালতলা বধ্যভূমি (বিয়ানীবাজার, সিলেট)
কাঁঠালতলা বধ্যভূমি (বিয়ানীবাজার, সিলেট) সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার পশ্চিম দিকের টিলায় অবস্থিত। বর্তমানে বিয়ানীবাজার উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে এর অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধকালে বিয়ানীবাজার থানা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী থানার দক্ষিণে ডাকবাংলোয় ক্যাম্প স্থাপন করে। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন ইফতেখার হোসেন গন্ডলের রায়ে যাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হতো তাদেরকে কাঁঠালতলা কিংবা রাধুটিলায় পাঠিয়ে দেয়া হতো।
৭ই জুন ক্যাম্প স্থাপন করার পর থেকে ৬ই ডিসেম্বর বিয়ানীবাজার মুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বহু লোককে ধরে কাঁঠালতলায় এনে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো। এখানে যাকে হত্যা করা হতো সাধারণত তাকে দিয়েই কবর খুঁড়ে নেয়া হতো। তারপর চোখ বেঁধে গুলি করে হত্যা করে লাশ কবরে মাটিচাপা দেওয়া হতো।
কাঁঠালতলা বধ্যভূমিতে যাদের হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে যাদের নাম পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন- জনপ্রিয় বাউলশিল্পী কমরউদ্দিন (মাথিউরা; ১৯শে সেপ্টেম্বর মুসলিম লীগ সমর্থক রাজাকার জামিল রেদওয়ান ওরফে বোরকা হাজীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন ইফতেখার হোসেন গন্ডলের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়), মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ (পিতা সমজিদ আলী, দুধবক্সী-দিঘীরপাড়, মাথিউরা)-এর অনুজ দুই ভাই আবদুল হাসিব (২৩) ও আবদুল লতিফ (১৪) (৫ই নভেম্বর শুক্রবার বোরকা হাজীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তাদেরকে কাঁঠালতলা বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়); মুক্তিবাহিনীর বার্তাবাহক আওয়ামী লীগের কর্মী জামালউদ্দিন (২৫) (বৈরাগীবাজার-খশির; ১৩ই জুলাই পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী শান্তি কমিটির নেতা ফুরকান মাস্টারের ইন্ধনে তাকে ধরে কাঁঠালতলা বধ্যভূমিতে এনে হত্যা করা হয়), সিলেট কদমতলী বাসস্ট্যান্ডের ম্যানেজার মতিউর রহমান ওরফে মাসুক মিয়া (৩৩) (পিতা মস্তকিম আলী, নয়াখানী, চারখাই; ১৮ই আগস্ট বচন হাজির ইন্ধনে তাঁকে হত্যা করা হয়), ড্রাইভার আবদুল হামিদ চৌধুরী (৪২) (পিতা আবদুস শহীদ চৌধুরী, কাদিমলিক, আলীনগর), ড্রাইভার লতিব আলী (২৬) (পিতা রেহমান আলী, টিকরপাড়া, আলীনগর) ও আমই (জলঢুপ-কালিবর)।
স্বাধীনতার পর কাঁঠালতলায় স্তূপীকৃত অবস্থায় শতাধিক লোকের কঙ্কাল পাওয়া যায়। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী কাঁঠালতলা বধ্যভূমি পরিদর্শন করেন এবং উত্তোলিত কঙ্কালের প্রতি সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানান। উপজেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠার পর কাঁঠালতলা বধ্যভূমিতে ফ্লাড সেল্টার ও ডরমেটরি নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে এ বধ্যভূমির সামনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। [আজিজুল পারভেজ]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড