You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.09 | কাঁঠালবাড়ি গণহত্যা (কুড়িগ্রাম সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

কাঁঠালবাড়ি গণহত্যা (কুড়িগ্রাম সদর)

কাঁঠালবাড়ি গণহত্যা (কুড়িগ্রাম সদর) সংঘটিত হয় ৯ই জুন। এতে ৩৫ জন সাধারণ মানুষ শহীদ হন।
কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি থানা আওয়ামী লীগ-এর সভাপতি সৈয়দ এক্সেন আলীর বাড়িও ছিল এখানে।
কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র আব্দুস সালাম-সহ সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরের যোদ্ধা আব্দুল মজিদ কমান্ডার, নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, নূরল আমিন সরকার, নুরল হক প্রমুখ তাঁদের লোকজন নিয়ে মাঝে-মধ্যেই রাজাকার ও পাকিস্তানিদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন। কাঁঠালবাড়ির সীমান্ত ঘেঁষে ছিনাইয়ের ব্রাহ্মণপাড়ায় মুজিব বাহিনীর কমান্ডার জেলা ছাত্রলীগ-এর সভাপতি শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর বাড়ি। অপরদিকে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আজাদ বক্ত আলী ও তার পুত্র সৈয়দ বক্ত আলী দুজনই ছিল পাকিস্তানপন্থী ও পাকসেনাদের দোসর। পাশেই ধরলা নদীর ওপার থেকে ফুলবাড়ী মুক্তাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে এসে আক্রমণ চালাতেন। এসব কারণে কাঁঠালবাড়ির প্রতি পাকবাহনীর ভীষণ ক্ষোভ ছিল। তাদের সে ক্ষোভ চরিতার্থ করার জন্য শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন আহমেদের পুত্র তাজুল ইসলাম চৌধুরীর ইন্ধন ও নেতৃত্বে সৈয়দ আজাদ বক্ত আলী ও সৈয়দ বক্ত আলীর সহযোগিতায় পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধা দমনের অংশ হিসেবে ৯ই জুন কাঁঠালবাড়িতে এক নির্মম গণহত্যা চালায়। তারা কাঁঠালবাড়ি বাজার, শিবরাম, সর্দারপাড়া, সন্ন্যাসী, ফকিরপাড়া, প্রামানিকটারী, খামার গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক শতাধিক দোকান ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। কাঁঠালবাড়ির গণহত্যায় প্রামানিকটারীর ফজল ব্যাপারী, আবুল কাশেম, ছেরাবুদ্দিন, নূর বখত, সর্দার পাড়ার মন্তা, টেংরি বেওয়া এবং মাদ্রাসার ছাত্র শাহাদৎ হোসেন, শিবরামের মন্তাজ আলী, আব্দুল জলিল, জহুর আলী, খামারের অলিয়ার, মনদ্দি, আজিম, ফকিরপাড়ার নূহ খন্দকার, তালুককালোয়ার বসন্ত কুমার, প্রতাপের হাসিমুদ্দিন, হরিকেশের রজব আলী, ঘোপাটারীর জহুর উদ্দিন, রায়পুরের ঘেচু মামুদ, পাঠানপাড়ার জয়নাল আবেদীন মণ্ডল (কুড়িগ্রাম কলেজের বিকম-এর ছাত্র) ও তার ভাই মেছের মণ্ডল-সহ ৩৫ জন শহীদ হন। শহীদদের দু- একজনের লাশ পারিবারিক গোরস্তানে সমাহিত করা হলেও অনেক শহীদের মৃতদেহ সন্ন্যাসীর খালসহ কাঁঠালবাড়ির বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেগুলো পচে-গলে বাংলার মাটির সঙ্গে মিশে যায়। [এস এম আব্রাহাম লিংকন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড