You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.07 | কল্যাণপুর গণহত্যা (রাজবাড়ী সদর) - সংগ্রামের নোটবুক

কল্যাণপুর গণহত্যা (রাজবাড়ী সদর)

কল্যাণপুর গণহত্যা (রাজবাড়ী সদর) সংঘটিত হয় ৭ই জুন। এতে অর্ধশতাধিক বাঙালি শহীদ ও অসংখ্য মানুষ আহত হন।
৭ই জুন দুপুর ১২টায় আলাদিপুরের বিহারিরা রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের ক্যাডার বাহিনীসহ কল্যাণপুর গ্রামে হামলা করতে আসে। তারা মমিনউল্লাহ ও আবুল হোসেন গাজী নামে দুই যুবককে ধরে রাঢ়ীপাড়ার দিকে নিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাটি সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়৷
এ ঘটনার পর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারদের সহযোগিতায় কয়েকটি ট্রাকযোগে শতাধিক সশস্ত্র বিহারি কল্যাণপুর গ্রামে আক্রমণ করার জন্য কল্যাণপুর স্কুলের সামনে জড়ো হয়। এরপর তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বাঙালিদের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে অর্ধশতাধিক বাঙালি শহীদ ও অসংখ্য মানুষ আহত হন। তারা এ গ্রামে ব্যাপক নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যা চালায়। তাদের ভয়ে প্রাণরক্ষার্থে এদিক-ওদিক ছুটে যাওয়া মানুষজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কেউ-কেউ আহত হয়। কাউকে লোহার রড, ধারালো রামদা, কিরিচ প্রভৃতি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আহসান উল্লাহ নামে একজন বৃদ্ধ প্রাণের ভয়ে হামাগুড়ি দিয়ে একটি স্থানে লুকিয়েছিলেন। তাকে সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়। মো. রেহানউদ্দিন পাটোয়ারী নামে একজনকে কল্যাণপুর ব্রিজের কাছ থেকে ধরে নিয়ে কোপানোর পরেও সে মারা না গেলে নরপিশাচরা তাকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে রাখে।
এ নির্মম গণহত্যায় শহীদদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন- মো. আবদুল হাকিম (পিতা মো. ওমর আলী), মোহাম্মদ আলী (পিতা মো. ফজর আলী), মো. আবদুল গণি মৃধা (পিতা রূপাই মৃধা), মো. ওনী মৃধা (পিতা রূপাই মৃধা), মো. মানিক মিয়া (পিতা মো. সিরাজ মিয়া), মো. ইউনুছ খাঁ (পিতা মো. ফজলুল হক খাঁ), মো. আবদুস সাত্তার খাঁ (পিতা মো. শামসুল হক খাঁ), মাওলানা মো. আবুল বাশার (পিতা মো. আবদুল আজিজ পাঠান), মো. রেহানউদ্দিন পাটওয়ারী (পিতা মো. কামিজউদ্দিন পাটওয়ারী), মো. চাঁন মিয়া (পিতা মো. রেহানউদ্দিন পাটওয়ারী), মো. আবদুল হামিদ ভূঁইয়া (পিতা মো. হগারী ভূঁইয়া), মো. মুসলিম খাঁ (পিতা মো. রমযান আলী খাঁ), মো. আবদুল মান্নান মুন্সী (পিতা মো. শরাফত আলী মুন্সী), মো. আবুল কাশেম মুন্সী (পিতা মো. আবদুল মান্নান মুন্সী), মো. আহসান শেখ (পিতা মো. ছবেদ শেখ), মো. এসহাক (পিতা মো. সজিনউদ্দিন), মো. শুকুর আলী শেখ (পিতা মো. লোকমান শেখ), মো. নামদার শেখ (পিতা মো. গেতু শেখ), মো. গইজউদ্দিন শেখ (পিতা মো. আরমান শেখ), মো. জাহান বক্স (পিতা মো. ঈমান আলী বক্স), মো. হাবিবুর রহমান মুন্সী (পিতা মো. মোতালেব মুন্সী), মো. আবুল কাশেম রাঢ়ী (পিতা মো. আবদুল মজিদ রাঢ়ী) ও মো. আবদুর রহিম। [জগন্নাথ বড়ুয়া]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড