You dont have javascript enabled! Please enable it!

কলাবাড়ি গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

কলাবাড়ি গণহত্যা (শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংঘটিত হয় ৬ই অক্টোবর, ১০ই অক্টোবর ও ২৭শে নভেম্বর। এতে মোট ২৪ জন গ্রামবাসী শহীদ হন। কলাবাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। এখানকার ওয়াজেদ আলী মুন্সীর বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি ক্যাম্প স্থাপন করেন। ৬ই অক্টোবর সকালে পাকবাহিনী এটি দখল করে নেয়। এ-সময় তাদের হাতে পাবনার ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অপর ৭ জন ধরা পড়েন। শহীদদের সেখানেই কবর দেয়া হয়। রাজাকার কমান্ডার এন্তাজ আলী ও মঞ্জুর আলী পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন শরীফ আহমদের নির্দেশমতো ধরাপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। ১০ই অক্টোবর তাঁদের হত্যা করে ক্যাম্প থেকে অল্পদূরবর্তী আমবাগানে একটি গর্তে মাটিচাপা দেয়। এরপর পাকবাহিনী কলাবাড়িতে একটি বেইজ ক্যাম্প এবং ধোবড়ায় একটি এডভান্সড ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। কলাবাড়িতে তারা ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল।
এ ঘটনার পর থেকে কলাবাড়িতে পাকিস্তানি দালালদের যাতায়াত বৃদ্ধি পায়। তাদের একজন ছিল হাবিবুল্লাহ ওরফে হবু চুড়িওয়ালা (ভারত বিভাগের সময় বিহার থেকে আগত)। সে কয়েকজন রাজকার-কে সঙ্গে নিয়ে ২০শে নভেম্বর থেকে ২৭শে নভেম্বরের মধ্যে ভবানীপুর, কয়লাদিয়াড় প্রভৃতি গ্রাম থেকে বজলার রহমান, লাল মোহাম্মদ, খুদু, মোজাম্মেল প্রমুখ ৮ জনকে ধরে আনে। এরপর তার ইশারায় এন্তাজ আলী ও মঞ্জুর আলী তাদের ওপর নির্যাতন চালায়।
মোবারকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ-এর নেতা ছিলেন সেতাউর রহমান। তার পুত্র আব্দুল কুদ্দুস মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে পাকবাহিনীর দোসর বিহারি হাবিবুল্লাহ মোবারকপুর রাজাকার ক্যাম্পের রাজাকারদের নিয়ে সেতাউর রহমানের পরিবারের ওপর অত্যাচার চালাতে থাকে। এ খবর পেয়ে আব্দুল কুদ্দুস ২৫শে নভেম্বর রাতে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে গোপনে বাড়িতে আসেন। কিন্তু হাবিবুল্লাহর মাধ্যমে রাজাকাররা তা জানতে পেরে বাড়ি ঘেরাও করে পিতা-পুত্রকে ধরে নিয়ে যায়। কলাবাড়ি ক্যাম্পের টর্চার সেলে রেখে তাঁদের ওপর দুদিন অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। আব্দুল কুদ্দুসকে উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে মাথার নিচে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এতে তাঁর দেহ ঝলসে যায়। ২৭শে নভেম্বর সন্ধ্যার পর উপর্যুক্ত ৮ জনসহ সেতাউর রহমান ও আব্দুল কুদ্দুসকে একটি গড়ে (খাদে) নিয়ে হত্যা করে একই গর্তে মাটিচাপা দেয়। এ ঘটনার আগে-পরে এখানে আরো ১০- ১২ জনকে হত্যা করা হয়। [তামিজ উদ্দীন]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!