কলাবাড়ি প্রতিরোধযুদ্ধ (কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ)
কলাবাড়ি প্রতিরোধযুদ্ধ (কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ) সংঘটিত হয় ১৪ই মে শুক্রবার। এতে ২ জন প্রতিরোধযোদ্ধা শহীদ হন।
কোটালীপাড়া উপজেলার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত হিন্দু প্রধান একটি গ্রাম কলাবাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই এ গ্রামে ডামি রাইফেল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। স্থানীয় দোসরদের মাধ্যমে পাকহানাদার বাহিনীর গোপালগঞ্জ থানা সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুর পাড়ের অস্থায়ী মিলিটারি ক্যাম্পে এ খবর পৌঁছে যায়। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকবাহিনী এ ক্যাম্প থেকে ৩০শে এপ্রিল থেকে গ্রামে-গঞ্জে অপারেশন চালাতে শুরু করে। ১৪ই মে তারা লঞ্চযোগে কোটালীপাড়া থানার উত্তর এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে হামলা চালায়। এদিন রাধাগঞ্জ, খেজুরবাড়ি, গাছবাড়ি, বুরুয়া, কলাবাড়ি প্রভৃতি গ্রামের ২ শতাধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ শতাধিক লোককে গুলি করে হত্যা করে।
পাকবাহিনী লঞ্চযোগে কলাবাড়ি গ্রামে ঢুকে প্রথমে ঘাঘর নদীর পশ্চিম পাড়ের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরগুলোতে আগুন দিতে-দিতে উত্তর দিকে বামননগর পর্যন্ত যায় এবং পরে নদীর পূর্বপাড় দিয়ে কলাবাড়ি গ্রামের পূর্বপাড়ায় ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে-করতে দক্ষিণ দিকে যেতে থাকে। হানাদাররা যখন গ্রামের পশ্চিম পাড়ে হামলা শুরু করে, তখন এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বপাড়ে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধারা বামননগর থেকে রাধাগঞ্জ যাওয়ার রাস্তায় কলাবাড়ি গ্রামের ছোট সরকার বাড়ির পূর্বপাশে ট্রেন্স খুঁড়ে পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকেন। পাকবাহিনী যখন বামননগর থেকে রাধাগঞ্জমুখী মাটির রাস্তা ধরে রায়বাড়ি পার হয়ে ছোট সরকার বাড়ির কাছে আসে, তখনই ট্রেন্সে অবস্থানরত যোদ্ধা রতিকান্ত সরকার ও সুভাষ সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তীর, ধনুক ও দেশীয় অস্ত্রসহকারে হানাদার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পাকবাহিনী তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে সুভাষ সরকার ও রতিকান্ত সরকার ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। এরপর পাকবাহিনী খেজুরবাড়ি চিত্তরঞ্জন গাইনের বাড়ি ও রাস্তার আশপাশের সব বাড়িঘর জ্বালিয়ে লঞ্চযোগে গোপালগঞ্জ ফিরে যায়। [রবীন্দ্রনাথ অধিকারী]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড