You dont have javascript enabled! Please enable it!

কলাবাড়ি যুদ্ধ (মাদারীপুর সদর)

কলাবাড়ি যুদ্ধ (মাদারীপুর সদর) সংঘটিত হয় দুবার – ২৮শে নভেম্বর ও ৬ই ডিসেম্বর। প্রথম যুদ্ধে পাকবাহিনীর ১টি জিপ, অনেক অস্ত্র ও গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। দ্বিতীয় যুদ্ধে পরাজিত পাকবাহিনী পালিয়ে যায়, তবে একজন মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়েন।
বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী কলাবাড়ি গ্রামের কাছে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ২৮শে নভেম্বর রাতে যুদ্ধ হয়। এদিন মাদারীপুর সদর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের একটি কনভয়ের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান। কমলাপুর-কলাগাছিয়া গ্রামে যাওয়ার একটি মাটির রাস্তা এসে কলাবাড়ির কাছে মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এ স্থানটি রণকৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হওয়ায় পাকিস্তানি সেনারা সারারাত এখানে অবস্থান করত। দিনের বেলায়ও এখানে তাদের পেট্রোল ডিউটি রাখত। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অবাধ চলাচলের জন্য এ স্থানটি সর্বক্ষণ শত্রুমুক্ত রাখতে চাইতেন। এ কারণে অক্টোবর-নভেম্বরে এখানে বেশ কয়েকটি আক্রমণ পাল্টা-আক্রমণের ঘটনা ঘটে। ২৮শে নভেম্বর রাতে ঘণ্টাখানেক তীব্র গুলি বিনিময়ের পর পাকিস্তানি সেনারা একটি জিপ, অনেক রাইফেল ও গুলি রেখে মাদারীপুরের দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়া পাকিস্তানি সেনাদের জিপ থেকে ১৭টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ও ৫ পেটি গুলি উদ্ধার করেন। তাঁরা অস্ত্রগুলো নিয়ে জিপটি জ্বালিয়ে দেন। এ- যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা এস্কেন্দার আলী মিয়া, হাবিবুর রহমান ঢালী, আবদুস ছাত্তার মাতুব্বর, আবদুল মোতালেব মাতুব্বর, আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার, আবদুস ছালাম ঢালী, আলাউদ্দিন মৃধা, আজিজুল হক ঢালী, আবদুর জব্বার ঢালী, জগলুল হক মাতুব্বর, দেলোয়ার হাওলাদার, হারেস হাওলাদার, বদর সিং, এছহাক সিং, সুলতান বিশ্বাস, শাহজাহান খান, কারী আবদুল হক, সিদ্দিকুর রহমান, আবদুল কাদের আকন, আবুল কালাম মাতুব্বর, লাল চান, আবদুল মাজেদ, জগলুল হক, নিজাম হাওলাদার, মোহাম্মদ আলী মীর, আলম তস্তার প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন।
৬ই ডিসেম্বর আলমগীর হোসাইনের নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কলাবাড়ির কাছে পাকিস্তানি সেনাদের একটি কনভয়ের সামনে পড়লে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। ফলে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। মাদারীপুরের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে একত্রিত করে মাদারীপুর শহর আক্রমণের পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে ১নং এরিয়া কমান্ডার আলমগীর হোসাইন ৪-৫ জন সহযোদ্ধা নিয়ে শিবচর যাচ্ছিলেন। ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের কলাবাড়ি ব্রিজ অতিক্রম করে তাঁদের শিবচরের পথে যেতে হতো। সকাল ৯টার দিকে এ ব্রিজের কাছাকাছি আসতেই পাকিস্তানি সেনাদের একটি কনভয় ফরিদপুরের দিক থেকে তাঁদের কাছে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের দেখামাত্র পাকিস্তানি সেনারা গুলি ছুড়তে শুরু করে। তাড়াতাড়ি খালপাড়ে পজিশন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকেন। দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ গুলি বিনিময় হয়। এক সময় পাকসেনারা এ স্থান থেকে চলে যায়। এ-যুদ্ধে জিল্লুর রহমান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। [বেনজীর আহম্মদ টিপু]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!