কলারোয়া থানা গণহত্যা (কলারোয়া, সাতক্ষীরা)
কলারোয়া থানা গণহত্যা (কলারোয়া, সাতক্ষীরা) সংঘটিত হয় ১৭ই মে। কলারোয়া থানার পেছনে কাঁঠালতলায় এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। এতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ৫ জন ছাত্র শহীদ হন।
১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা শুরু হয়, তখন সারা বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, ছাত্রসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ ভারতে যেতে শুরু করে। তাদের মধ্যে অনেকের লক্ষ্য ছিল ভারত থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। এ উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জ থেকে কয়েকজন ছাত্র যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের পথে রওনা হন। তাদের মধ্যে ৮ জন সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার হামিদপুর গ্রাম দিয়ে যাওয়ার সময় কুখ্যাত -রাজাকার- ডা. মোকছেদ আলীর হাতে ধরা পড়েন। তাদের ৩ জন পালিয়ে ভারতে যেতে সক্ষম হন, বাকি ৫ জন পালাতে পারেননি। রাজাকাররা তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করে কলারোয়া থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ১৭ই মে কলারোয়া থানার পেছনে কাঁঠালতলায় তাদের একত্রে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। ৩ জন সঙ্গে-সঙ্গে মারা যান। বাকি ২ জন গুলি করার পরও বেঁচে ছিলেন। তারা ‘পানি পানি’ বলে চিৎকার করেন। কিন্তু হায়েনার দল তাদের একটু পানি পর্যন্ত দেয়নি। পার্শ্ববর্তী বাড়ির একজন মহিলা তাদের পানি দিতে গেলে মহিলার সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে তাদের একত্রে থানার উত্তর পাশে মাটিচাপা দেয়া হয়। আহত ২ জনকে জীবিত অবস্থায়ই অন্য ৩ জনের সঙ্গে মাটিচাপা দেয়া হয়। শহীদ ছাত্ররা হলেন— মুন্সী সাহেব আলী, মুন্সী মহসীন আলী, সুভাষ চন্দ্র, শিশির চন্দ্র ও মনোরঞ্জন। স্বাধীনতার পর তাদের আত্মীয়-স্বজনরা এসে তাদের কবর সনাক্ত করেন। ১৯৮৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর গণকরবটি পাকা করে একটি স্মৃতিসৌধের রূপ দেয়া হয়। [মাসুদুর রহমান]
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড