You dont have javascript enabled! Please enable it!

কলম গণহত্যা (সিংড়া, নাটোর)

কলম গণহত্যা (সিংড়া, নাটোর) সংঘটিত হয় ৮ই মে। এতে ৮ জন সাধারণ মানুষ হত্যার শিকার হন। তাদের কলমে গণকবর দেয়া হয়। একই দিন পাকিস্তানি হানাদাররা কলম বাজার, কদমতলী ও কাঁসারিপাড়ায় গণহত্যা চালিয়ে আরো ২০ জনকে হত্যা করে।
৮ই মে নাটোর থেকে আব্দুল করিম রাজাকারের পরামর্শে হাফেজ আব্দুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীকে নিয়ে সকাল ১১টায় কলমে আসে এবং গণহত্যা চালায়। কলম ইউনিয়নের অন্তর্গত কলম গ্রামটি একটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু মানুষ প্রাণ বাঁচাতে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। আশ্রিতদের কাছে অনেক ধন-সম্পদ আছে এবং মুক্তিযোদ্ধারাও হয়ত এ গ্রামে লুকিয়ে আছে – এ সন্দেহে হানাদাররা এখানে আসে। কদমতলী, কলম গ্রাম ও কাঁসারিপাড়ায় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী আরো ২০ জনকে হত্যা করে।
পাকিস্তানি বাহিনী প্রথমেই কলম বাজারে আক্রমণ করে গুলি করতে থাকে। সেখানে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন হরেরাম সাহা, বন্ধুবিহারী সাহা, রঞ্জিত কুমার সাহা, নিমাইচন্দ্র পাল, বলরাম পাল, গোবিন্দ প্রামাণিক, আশুতোষ শীল, অমল কুমার প্রমুখ। ১২টার দিকে কাঁসারিপাড়া গ্রামে কাজ করছিলেন মতিলাল ও ধর্মচরণ কাঁসারি। তাদেরকেও গুলি করে হত্যা করে ফেলে রেখে যায় ঘাতকরা। বেলা ১টার দিকে কদমতলীতে আসে হানাদাররা। আবুল হামিদ নামে একজনকে তারা মসজিদ থেকে টেনে বের করে আনে। এরপর লুটপাট শুরু করলে হামিদের ভাই আব্দুল কালাম আজাদ বাধা দেয়। ফলে তাকেও ধরে এনে বাইরে দাঁড় করায়। প্রতিবেশী আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল আজিজ ও মেয়ের জামাই আব্দুল করিম (যিনি সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছিলেন)-কেও ধরে এনে লাইনে দাঁড় করায়। আব্দুল আজিজ ভাত নিয়ে যাচ্ছিল ক্ষেতে কর্মরত কামলাদের (কৃষক) জন্য। পথে তাকে ধরে ফেলে। আব্দুল করিম ঘরের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। আব্দুর রহমানের ছোট ছেলে আব্দুল হালিম রাস্তায় বসা ছিল। সেখান থেকে তাকে ধরে আনে। প্রতিবেশী বিশু শেখ আব্দুর রহমানের বাড়িতে ধানের গোলায় লুকিয়েছিল। তাকেও ধরে এনে দাঁড় করায়। হাছেন ব্যাপারীর শ্যালক তোরাব আলীকেও ধরে আনে। এছাড়া আবুল কাশেমসহ ৮ জনকে লাইনে দাঁড় করায়। এরপর গুলি, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে পুরো গ্রাম ছাড়খার করে দেয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যতীত আর যারা এ গণহত্যায় প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করে, তারা হলো— নজরপুরের আব্দুল করিম, শাওইলের সেরাজুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, আমজাদ হোসেন, নাটোর মাদ্রাসার হাফেজ শের মাহমুদ, হাফেজ আব্দুর রহমান প্রমুখ।
কলম গণহত্যায় যারা নিহত হন, তারা হলেন- আবদুল হামিদ ও তার সহোদর আবুল কালাম আজাদ (পিতা মুন্সী ইসলাম উদ্দিন, কুমারপাড়া; উভয়ে কৃষিকাজ করতেন), আব্দুল আজিজ (পিতা আব্দুর রহমান, কদমতলী; দর্জির কাজের পাশাপাশি ব্যবসা করতেন), আব্দুল করিম (চৌহালী, সিরাজগঞ্জ; কৃষিকাজ করতেন), আব্দুল হালিম (পিতা আব্দুর রহমান, কদমতলী; ১০ম শ্রেণির ছাত্র), বিশু শেখ (কদমতলী, কৃষিকাজ করতেন), তোরাব আলী ও আবুল কাশেম। এদের সিংড়ার কলম গণকবরে সমাহিত করা হয়। ১৯৯৬ সালে সরকার কর্তৃক গণকবরটি প্রাচীর দিয়ে সংরক্ষিত করা হয় এবং পরবর্তীতে এখানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। [সুমা কর্মকার]

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ ২য় খণ্ড

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!